ব্যাখ্যা: কবরের উপর বাতি প্রজ্বলন: কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের উপর প্রদীপ অথবা হারিকেন অথবা তৈলস্ফটিক যা মোমবাতির মত এসবের কোনটিই রাখা বৈধ নয়। কেননা এ সবই শিরকের উপকরণ। মৃতকে দাফনের সময় আলোর প্রয়োজন হলে প্রদীপ অথবা লন্ঠন ব্যবহার করতে পারে। তবে কবরস্থানে বাতি অথবা আলো প্রজ্বলন করে রাখা নিষেধ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لعن الله زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج

কবর যিয়ারতকারী, কবরের উপর মাসজিদ নির্মাতা ও সেখানে আলো স্থাপনকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত করেছেন।[1]

আর সুনান গ্রন্থের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারীকে অভিশাপ দিয়েছেন। এ হাদীছটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করা নিষেধ। এটা কেবল পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট।

অভিশাপ কথাটি থেকে বুঝা যায় যে, মহিলাদের কবর যিয়ারত করা কাবীরাহ গুনাহ। কবরকে মাসজিদ হিসাবে গ্রহণকারীদের উপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ করেছেন। অর্থাৎ কবরের পাশে যারা ছ্বলাত আদায়ের ইচ্ছা করে করে অথবা মাসজিদ নির্মাণ করে অথবা যারা কবরকে আলোকিত করে যা শিরকের মাধ্যম, এ সবই গর্হিত কাজ। এসবের মাধ্যমে কবরপূজা ও আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকা হয়। তাই কবরে এরূপ কর্ম পরিত্যাগ করতে হবে, যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছাহাবীদের কবরে এরূ করা পরিত্যাগ করা হয়। আর কবরে বাতি প্রজ্বলন ও তার উপর ভিত্তি নির্মাণ করা যাবে না। (লাশ দাফনের) পর কবর পূর্ব অবস্থায় বহাল থাকবে। আর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে শুধুমাত্র এক বিঘত পরিমাণ কবর উঁচু করতে হয় এবং এর উপর চিহ্ন দিতে হয়, যাতে বুঝা যায় এটি কবর। এছাড়া কবরের উপর অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবী তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে বলেন,

لا تدع قبراً مشرفاً يعني مرتفعاً: إلا سويته

তুমি যেখানেই কুজো অর্থাৎ উঁচু কবর দেখবে তা ছাড়বে না, মাটিতে সমান করে দিবে।[2] কেননা, জাহিলরা তাদের উদ্দেশ্যে নিয়ে উঁচু কবরের প্রতি আসক্ত হয়।

কেননা জাহিলদের মাঝে খুব তাড়াতাড়ি শিরক বিস্তার লাভ করে। আর জিন ও মানুষের মধ্যে থেকে শয়তান কবর কেন্দ্রীক কর্মকান্ডকে মানুষের সামনে সৌন্দর্যময় করে তুলে এবং এর মাধ্যমে ফিতনা ছড়ায়। কবরের মাঝে যদি দৃষ্টি নন্দন কিছু না থাকে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যদের কবরের মাঝে পার্থক্য বুঝা না যায় তখনই এ কবর ফিতনা হতে অধিক দূরে বলে গণ্য হবে। আর যখন কবরকে উদ্দেশ্যে করে সম্মান করা হবে এবং তার উপর ভিত্তি স্থাপন, সাজ-সজ্জা ও বাতি প্রজ্বলন করা হবে, তখনই এটা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। জাহিলরা বলে, কবরের সম্মানের জন্য এসব বিষয় কাজে আসে। অতঃপর তারা এসবের মাধ্যমে কবর পূজা করে। কবরের ব্যাপারে নাবী এর পথ নির্দেশনা অনুসরণ করা ওয়াজীব। যাতে কোন বাড়াবাড়ি, ভিত্তি নির্মাণ, বাতি প্রজ্বলন, কবরে লিখন, চুনকাম করাসহ আরোও অন্যান্য কর্ম কান্ড কবরের উপর না হয়। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কবরগুলো এসব থেকে মুক্ত ছিল।

>
[1]. আবূ দাউদ ৩/৩৬২ হা/৩২৩৬, তিরমীযি ৩/১৩৬ হা/৩২০। আবূ ঈসা বলেন, ইবনে আব্বাসের হাদীছটি হাসান। আলবানী রহ: ছহীহ জামে গ্রন্থে হাদীছটি ছহীহ সূত্রে উল্লেখ করেছেন। হা/৫১০৯।

[2]. ছহীহ মুসলিম হা/৯৬৯।