ব্যাখ্যা: অর্থাৎ পবিত্র রিজিক ও পোশাকের সৌন্দর্যতা পরিত্যাগ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাওয়া। খ্রিষ্টান ও তাদের সাদৃশ্য অবলম্বী ইসলামের দিকে সম্বন্ধকারী সূফীরাই এটা করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের উদ্দেশ্যে তারা পবিত্র জিনিসকে বর্জন করে। তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না এবং পবিত্র রিজিকও গ্রহণ করে না। আর পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তারা সন্ন্যাসী জীবন যাপন করে। তারা ধারণা করে, এভাবেই আল্লাহর ইবাদত করতে হয়। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ) [الأعراف: 32]
বল, কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তার বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র রিযিক? (সূরা আরাফ ৭:৩২)। তিনি আরোও বলেন,
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ) [المائدة: 87]
হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না (সূরা আল মায়েদা ৫:৮৭)।অনুরূপভাবে কতিপয় হালাল চতুষ্পদ জন্তুকেও তারা হারাম মনে করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা হালাল চতুষ্পদ জন্তু খাওয়া বৈধ করেছেন। তিনি বলেন,
(أُحِلَّتْ لَكُمْ بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ) [المائدة: 1]
তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে (সূরা আল-মায়েদা ৫:১)।
জাহিলরা তাদের মূর্তির জন্য কতিপয় চতুষ্পদজন্তুকে হারাম করতো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُحَرِّمُوا طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না (সূরা আল-মায়েদা ৫:৮৭)।
সুতরাং পবিত্র জিনিসকে হারাম করা বৈরাগ্যবাদী খ্রিষ্টান ও জাহিলদের দীন। আর যে হালালকে হারাম করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করবে, সে হবে মুরতাদ। তাই যখন কেউ (হালালকে হারাম করণের বিষয়টি) দীনের প্রতি সম্বন্ধ করে মহান আল্লাহর ইবাদত বলে গণ্য করবে, তখন এটিই হবে আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য পবিত্র জিনিস বর্জন করা শরী‘আত সম্মত করেননি। বরং তা উপভোগ করতে বলেছেন। তিনি বলেন,
(يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً) [المؤمنون: 51]
হে রসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভাল বস্তু হতে খাও ও সৎকর্ম সম্পাদন কর। (সূরা আল-মু‘মিনূন ২৩:৫১)।
নাবী ছবাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে একটি দল এরূপ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল; ফলে তিনি তাদের উপর রাগান্বিত হন।
অপরদিকে আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্যকে পরিত্যাগ করে জাহিলদের ইবাদত করা বলতে, সৌন্দর্য বর্জন করে তথা বেশ-ভূষা ছাড়াই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাওয়া। যেমন নগ্ন হয়ে তারা কাবা তাওয়াফ করতো। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন,
(قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ) [الأعراف: 32]
বল, কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ (সূরা আল-আরাফ ৭:৩২)।
অর্থাৎ পোশাক, সৌন্দর্যতা ও পবিত্র রিজিক বর্জনের ব্যাপারে তোমরা যা কিছু কর এ ব্যাপারে কি তোমাদের কোন দলীল আছে? কেননা, কোন জিনিস হারাম করণের জন্য দলীলের প্রয়োজন হয়। আর পোশাক-পরিচ্ছেদ ও পানাহারের মৌলিকত্ব হচ্ছে (শরী‘আত অনুসারে) তা হালাল। কেননা, এসব জিনিস আল্লাহ তা‘আলা বান্দার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যেমন ছ্বহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সুনদর, তিনি সৌন্দর্যতা পছন্দ করেন। তাই সতর্কতা স্বরূপ পোশাক বর্জন করা দীন ইসলাম নয়।
(ইসলাম চায়) পোশাকের সৌন্দর্যতা গ্রহণ ও পবিত্র রিজিক উপভোগ করতঃ মানুষ যেন আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করে। হাদীছে বর্ণিত আছে,
إن الله يحب إذا أنعم عبد نعمة أن يرى أثر نعمته عليه
বান্দাকে কোন নি‘আমত দান করা হলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ নে‘আমতের নিদর্শন প্রকাশ পাওয়া পছন্দ করেন।[1]
তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো অপব্যয় ও নিজের খেয়াল-খুশি ছাড়াই তা হতে হবে।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিনিধি দলের মোকাবেলায় বেশি করে সৌন্দর্যতা গ্রহণ করতেন।
>