কুরআন সম্পর্কে জাহিলদের কথা:

إِنْ هَذَا إِلَّا قَوْلُ الْبَشَرِ

এটা তো মানুষের কথা মাত্র (সূরা মুদ্দাসি্সর ৭৪:২৫)।

.........................................

ব্যাখ্যা: জাহিলী সমস্যা: জাহিলরা বলে, কুরআন মানুষের কথা। যেমন ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরাহ বলেছিল। অথচ কুরআন আল্লাহ তা‘আলার কালাম। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তা‘আলাই কুরআনে কথা বলেছেন অথবা জিবরীল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে তার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর তিনি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। তাই সত্যিকার অর্থেই কুরআন আল্লাহর কালাম। আর অনেক আয়াতে কুরআনকে তিনি ‘আল্লাহর কালাম’ নামে অভিহিত করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(حَتَّى يَسْمَعَ كَلامَ اللَّه) [التوبة: 6]

এমনকি সে আল্লাহর কালাম শুনে (সূরা আত-তাওবা ৯:৬)।

(يُرِيدُونَ أَنْ يُبَدِّلُوا كَلامَ اللَّهِ ... ) [الفتح: 15]

তারা আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে চায় (সূরা আল-ফাতাহ ৪৮:১৫)।

কুরআন আল্লাহর কালাম এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারীদের বিশ্বাস। আর মুশরিকরা জানে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম এবং তা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী নয়। কেননা, কুরআন যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হতো, তাহলে তারাও মুহাম্মাদের মত কুরআনের অনুরূপ কিছু রচনা করতে সক্ষম হতো। কিন্তু তা সম্ভব নয়, কেননা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মতই একজন মানুষ। তাই কুরআন তার কথা হলে মুশরিকরাও তার মত করে বর্ণনা করতে পারতো। আর আল্লাহ তা‘আলাও কুরআনের অনুরূপ কিছু রচনা করা অথবা দশটি অথবা একটি সূরা রচনা করে দেখাতে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তারা কুরআনের অনুরূপ কিছুই রচনা করতে সক্ষম হয়নি। অথচ কুফরী, অবাধ্যতা এবং আল্লাহ ও তার রসূলকে কষ্ট দেয়ার লিপ্সা তাদের রয়েছে।

কুরআনের অনুরূপ সূরা রচনা করতে সক্ষম হলে তারা বিলম্ব করতো না। কিন্তু তারা অক্ষমতাই প্রকাশ করেছিল। তাই প্রমাণিত, কুরআন আল্লাহর কালাম, অন্যের কালাম নয় এবং জিবরীল ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কালামও নয়। তারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে তার কালামের আমানাত স্বরূপ প্রচারক মাত্র। প্রথমে যিনি কথা বলেন, তার দিকেই কথার সম্বন্ধ করা হয়, ঐ কথা প্রচারকের দিকে সম্বন্ধ করা হয় না। কাফিররা দম্ভ করে বলতো, কুরআন যাদু গ্রন্থ। তারা এটাও বলতো, আহলে কিতাবের আলেমদের নিকট থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শিক্ষা করেছে। তারা বিভিন্ন রকমের কথা বার্তা বলতো। যা কুরআনের ব্যাপারে জাহিলদের মিথ্যা বলা ও দোষারপ করাই প্রমাণ করে।

যারা বিশ্বাস করে যে, কুরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কালাম আর তা মানুষের কথা। তা জাহিলদের কথার মতই। জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলা ও তাদের মত অন্য গোষ্ঠিদের মধ্যে কেউ বলে, কুরআন আল্লাহর কালাম নয়। তাদের কথা, কুরআনকে আল্লাহ তা‘আলা জিবরাঈলের মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছেন অথবা তিনি লাওহে মাহফুযে তা সংরক্ষণ করেছেন। এরূপ আরোও বাতিল-মিথ্যা কথা তারা বলে থাকে, যা জাহিলদের কথার মতই।