গুণাবলী অবিশ্বাস করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلَكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللَّهَ لا يَعْلَمُ كَثِيراً مِمَّا تَعْمَلُونَ) [فصلت: 22]
তোমরা মনে করেছিল যে, তোমরা যা কিছু করতে আল্লাহ তার অনেক কিছুই জানেন না (সূরা হা-মিম সাজদা ৪১:২২)।
ব্যাখ্যা: (الصفات) আস-সিফাত তথা গুণসমূহ: অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার এমন গুণাবলী যা তিনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর (الإلحاد) ইলহাদ তথা অবিশ্বাস এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন বিষয় সাব্যস্ত করা হতে বিচ্যুত হওয়া। এখানে উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর গুণাবলী থেকে সরে যাওয়া। এ জন্য মহান আল্লাহ তার গুণাবলী অস্বীকার করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই আল্লাহর গুণাবলী অবিশ্বাস করা নাস্তিকতা। কেননা তা হক্ব থেকে দুরে সরিয়ে দেয় এবং হক্ব বিমুখ করে। জাহিলরা আল্লাহর গুণাবলী অবিশ্বাস করে অর্থাৎ তারা অস্বীকার করে এবং আল্লাহর গুণাবলী প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে দলীল-প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
(وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُونَ أَنْ يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلا أَبْصَارُكُمْ وَلا جُلُودُكُمْ وَلَكِنْ ظَنَنْتُمْ أَنَّ اللَّهَ لا يَعْلَمُ كَثِيراً مِمَّا تَعْمَلُونَ) [فصلت:22]
তোমরা কিছুই গোপন করতে না এই বিশ্বাসে যে, তোমাদের কর্ণ, চক্ষুসমূহ ও চর্মসমূহ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। বরং তোমরা মনে করেছিল যে, তোমরা যা কিছু করতে আল্লাহ তার অনেক কিছুই জানেন না (সূরা হা-মিম সাজদা ৪১:২২)।
জাহিলরা মনে করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না। তাই আল্লাহ তা‘আলার (العلم) ইলম তথা জানার গুণকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী হতে (العلم) ইলম তথা ‘সর্বজ্ঞাত’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিফাত বা গুণ যা এ আয়াতটি দ্বারা প্রমাণিত। তাই আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই জানেন। বান্দার কর্মসমূহ ও অন্যান্য বিষয় তার নিকট গোপন থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ) [التغابن: 4]
আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। (সূরা আত-তাগাবুন ৬৪:৪)।
যা সংঘটিত হয় এবং হয় না তিনি তা সবই জানেন। যা সংঘটিত হয়নি তা কিভাবে হবে তিনি সেটাও জানেন। আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান সব কিছুকে অন্তর্ভুক্ত ও বেষ্টন করে রয়েছে। তাই যারা ধারণা করে যে, কতিপয় আমল সম্পর্কে তিনি জানেন না, তারা আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে নাস্তিক ও তার (العلم) ইলম-সর্বজ্ঞাত সিফাতকে প্রত্যাখ্যানকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَذَلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِي ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ أَرْدَاكُمْ) [فصلت: 23]
আর তোমাদের এ ধারণা যা তোমরা তোমাদের রব সম্পর্কে পোষণ করতে, তাই তোমাদের ধ্বংস করেছে (সূরা হা-মিম সাজদা ৪১:২৩)। অর্থাৎ তোমাদেরকে যা ক্ষতির মাঝে রেখেছে, সেটাই হলো ধ্বংস সাধন।
(فَأَصْبَحْتُمْ مِنَ الْخَاسِرِينَ) [فصلت: 23]
ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে (সূরা হা-মিম সাজদা ৪১:২৩)।
আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীর মধ্যে হতে কোন গুণকে প্রত্যাখ্যান করে তারা জাহিলদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির হুমকি। জাহমিয়্যাহ, মু’তাযিলা, আশআ‘রীয়া ও মাতুরিদীয়্যা সম্প্রদায় আল্লাহর গুণাবলীকে প্রত্যাখ্যান করে। জাহিলদের এ নিকৃষ্ট স্বভাবে তারা অভ্যস্ত। তারা কঠিন ভীতিপ্রদর্শনকে পরোয়া করে না। তারা আল্লাহর প্রতি জঘন্য খারাপ ধারণা পোষণ করে। আল্লাহর গুণাবলীর সঠিক অর্থকে (বাতিল) ভুল অর্থের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা ও শুদ্ধ অর্থ গ্রহণ হতে বিরত থাকা নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলার আরশে ‘সমুন্নত’ হওয়া অর্থটিকে ‘কর্তৃত্ব’ অর্থে ব্যাখ্যা করা ও আল্লাহর ‘হাত’ অর্থকে ‘ক্ষমতা’ অর্থে ব্যবহার করা ইত্যাদি। আর গুণাবলীর ভুল অর্থকে আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করা ও দলীল ভিত্তিক সঠিক অর্থকে অস্বীকার করা নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত।