আমরা বুঝতে পারছি যে, আল্লাহর যিকর একটি ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিস্তারিতভাবে এই ইবাদতের সকল পদ্ধতি ও বাক্য শিখিয়েছেন। তিনি যেখানে যে বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন সেখানে তা বললেই প্রকৃত আল্লাহর যিকরের ইবাদত আদায় হবে। হজের মাঠের আল্লাহর যিকর, ঈদের দিনগুলির আল্লাহর যিকর, ঘরে প্রবেশের আল্লাহর যিকর, খাবার গ্রহণের আল্লাহর যিকর, সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকর, ... ইত্যাদি সবই আল্লাহর যিকর। কিন্তু প্রত্যেক প্রকার যিকরের জন্য পৃথক পৃথক মাসনূন বাক্য রয়েছে। মনগড়াভাবে বানানো যিকর করলে, বা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষার বাইরে মনগড়াভাবে মহান আল্লাহর নাম জপ করলে, অথবা এক স্থান বা সময়ের যিকর অন্য স্থানে ব্যবহার করলে সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। আমরা সদা সর্বদা তাঁর সুন্নাতের হুবহু অনুসরণের চেষ্টা করব।
এখানে উল্লেখ্য যে, অগণিত হাদীসে ও সাহাবীগণের জীবনের অগণিত ঘটনায় আমরা অসংখ্য যিকর আযকার দেখতে পাই। এ সকল যিকরের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য এগুলি সবই ‘বাক্য’ যা একাধিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত পরিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে। অগণিত হাদীসের একটিতেও এবং সাহাবী-তাবেয়ীগণের জীবনে আচরিত অগণিত ঘটনার মধ্যে আমরা দেখতে পাই না যে, শুধুমাত্র একটি শব্দ বা শুধুমাত্র আল্লাহর নাম জপ করে যিকর করতে বলা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে একাধিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহর নামের স্তুতিকেই যিকর বলা হয়েছে। মাসনূন যিকরের মূল বৈশিষ্ট্য শুধু আল্লাহর নাম জপ নয়, আল্লাহর নামের স্তুতি, প্রশংসা, মহিমা ও মর্যাদা বারংবার উচ্চারণ করা বা জপ করা।
মহান মহাপবিত্র আল্লাহ রাব্বুল আলমীনের মহান নামের প্রশংসা, মর্যাদা, মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, একত্ব ইত্যাদি প্রকাশক বাক্য বারবার জপ করার মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ করাকে কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর যিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত এ সকল জপমূলক বাক্যাদির মূল চারিটি বাক্যঃ ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু লিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। পঞ্চম বাক্য - ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। এছাড়া এগুলির সমন্বয় ও প্রাসঙ্গিক আরো অনেক বাক্য কুরআন ও হাদীসে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমরা পরবর্তী সময়ে মাসনূন জপমূলক যিকরের প্রকার ও শব্দাবলী আলোচনা করব। এ সকল বাক্যাদি বারবার নির্দিষ্ট সংখ্যায় বা অনির্দিষ্টভাবে অগণিতবার জপ করা বা আওড়ানোকে বিশেষভাবে কুরআন ও হাদীসে যিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অগণিত হাদীস আমরা পরবর্তী আলোচনায় দেখতে পাব। এখানে একটি হাদীস উল্লেখ করছি - যে হাদীসে ‘আল্লাহর যিকর’ অর্থ কী তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهِ مِنْ تَسْبِيحِهِ وَتَحْمِيدِهِ وَتَكْبِيرِهِ وَتَهْلِيلِهِ يَتَعَاطَفْنَ حَوْلَ الْعَرْشِ لَهُنَّ دَوِيٌّ كَدَوِيِّ النَّحْلِ يُذَكِّرُونَ بِصَاحِبِهِنَّ
“যারা আল্লাহর যিকর করেন অর্থাৎ তাঁর তাসবীহ ‘সুবহানাল্লাহ’, তাহমীদ ‘আল-হামদু লিল্লাহ’, তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’ ও তাহলীল ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জপ করেন তাঁদের এ সকল যিকর আরশের পাশে জড়িয়ে থাকে মৌমাছির গুঞ্জনের মতো যাকিরকে স্মরণ করতে থাকে।”[1]