وجوب الإيمان برؤية المؤمنين ربهم يوم القيامة ومواضع الرؤية
এই বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, মুমিনগণ কিয়ামতের দিন এবং জান্নাতে প্রবেশের পর তাদের প্রভুকে দেখতে পাবে:
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
وَقَدْ دَخَلَ أَيْضًا فِيمَا ذَكَرْنَاهُ مِنَ الْإِيمَانِ بِهِ وَبِكُتُبِهِ وَبِمَلَائِكَتِهِ وَبِرُسُلِهِ الْإِيمَانُ بِأَنَّ الْمُؤْمِنِينَ يَرَوْنَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِيَانًا بِأَبْصَارِهِمْ كَمَا يَرَوْنَ الشَّمْسَ صَحْوًا لَيْسَ بِهَا سَحَابٌ وَكَمَا يَرَوْنَ الْقَمَرَ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَا يُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ يَرَوْنَهُ سُبْحَانَهُ وَهُمْ فِي عَرَصَاتِ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَرَوْنَهُ بَعْدَ دُخُولِ الْجَنَّةِ كَمَا يَشَاءُ اللَّهُ تَعَالَى
পূর্বে আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান এবং রাসূলদের প্রতি ঈমানের যে বর্ণনা প্রদান করেছি, তার মধ্যে এই বিশ্বাস করাও শামিল যে, মুমিনগণ কিয়ামতের দিন চোখ দিয়ে প্রকাশ্যভাবে তাদের প্রভুকে দেখতে পাবে। দিনের বেলায় পরিস্কার আকাশে সূর্যকে মেঘখন্ড আড়াল করে না রাখলে তারা যেমন সূর্যকে দেখতে পায় এবং পূর্ণিমার রাতে তারা যেমন চাঁদ দেখতে পায়, চাঁদ দেখতে যেমন তাদের কোন অসুবিধা হয়না, তেমনি তারা আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবে। আল্লাহ তাআলাকে তারা কিয়ামতের প্রশস্ত ময়দানে দেখতে পাবে। অতঃপর তারা তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করার পরও দেখতে পাবে। আল্লাহ তাআলা যেভাবে ইচ্ছা করবেন, সেভাবেই তিনি মুমিনদেরকে দেখা দিবেন।
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান এবং নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে পরকালে আল্লাহ তাআলাকে দেখা যাবে, -এই বিশ্বাসও শামিল হওয়ার কারণ হলো, তিনি তাঁর কিতাবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাতে এই বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাতে বিশ্বাস করবেনা, সে আল্লাহ তাআলার প্রতি, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলদের প্রতি কুফরী করল। কেননা যারা আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি এবং আল্লাহর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাদেরকে অন্যান্য যেসব বিষয়ের সংবাদ দেয়া হয়েছে, তারা তার সবগুলোতেই বিশ্বাস করে। عِيَانًا শব্দের আইন বর্ণে যের দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ তারা আসলেই আল্লাহকে খোলাখুলিভাবে দেখতে পাবে, তাতে কোন অস্পষ্টতা থাকবেনা। কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখার বিষয়টি রূপকার্থক নয়। যেমন বলে থাকে আল্লাহর সুউচ্চ সিফাতে অবিশ্বাসী মুআত্তেলা ফির্কার লোকেরা।
দিনের বেলায় আকাশ পরিস্কার থাকলে এবং কোন মেঘমালা সূর্যকে আড়াল না করে রাখলে তারা যেমন সূর্যকে দেখতে পায় এবং পূর্ণিমার রাতে তারা যেমন চাঁদ দেখতে পায়, চাঁদ দেখতে যেমন তাদের কোন অসুবিধা হয়না, তেমনি তারা আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবেঃ অর্থাৎ তারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহকে দেখতে পাবে, তাতে কোন অসুবিধা হবেনা। আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে পূর্বে ব্যাখ্যাসহ যেসব আয়াত ও হাদীছ অতিক্রান্ত হয়েছে, উহা এ কথাই প্রমাণ করে।
তারা আল্লাহ তাআলাকে কিয়ামতের প্রশস্ত ময়দানে দেখতে পাবে। অতঃপর তারা তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করার পরও দেখতে পাবেঃ এখানে ঐসব স্থানের কথা এসেছে, যাতে আল্লাহ তাআলার দিদার অর্জিত হবে। মোট দু’টি স্থানে মুমিনগণ আল্লাহকে দেখতে পাবে।
প্রথম স্থানঃ في عرصات القيامة অর্থাৎ কিয়ামতের ময়দানে। العرصات শব্দটি العرصة -এর বহুবচন। এমন প্রশস্ত স্থানকে العرصة বলা হয়, যাতে কোন বাড়িঘর থাকেনা। কিয়ামতের ময়দান বলতে হিসাবের জন্য দন্ডায়মানের স্থানকে বুঝায়। কিয়ামতের ময়দানে কি শুধু মুমিনগণই আল্লাহকে দেখতে পাবে? না অন্যরাও দেখতে পাবে?
এই মাসআলায় তিনটি মত রয়েছে। (১) মানুষ যখন হিসাবের জন্য কিয়ামতের ময়দানে দাঁড়াবে, তখন মুমিন, কাফের এবং মুনাফেক সকলেই আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবে। (২) মুমিন ও মুনাফেকরা আল্লাহকে দেখতে পাবে, কাফেররা নয়। (৩) শুধু মুমিনরাই দেখতে পাবে। আল্লাহই সর্বাধিক জানেন।
দ্বিতীয় স্থানঃ মুমিনগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর আল্লাহকে দেখতে পাবে। কুরআন ও সুন্নাহর দলীল দ্বারা ইহা প্রমাণিত। ব্যাখ্যাসহ কিছু দলীল পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। সেই সাথে যারা আল্লাহর দিদারকে অস্বীকার করে, তাদের প্রতিবাদও পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।
الجنة (জান্নাত) শব্দের আভিধানিক অর্থ বাগান। কুরআন ও হাদীছের পরিভাষায় জান্নাত বলা হয় সেই বাসস্থানকে, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বন্ধুদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। জান্নাতকে সকল প্রকার নেয়ামত দ্বারা পূর্ণ করে রাখা হয়েছে। শাইখুল ইসলাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই তিনি মুমিনদেরকে দেখা দিবেন। অর্থাৎ পূর্ণরূপে আয়ত্ত না করেই এবং নির্দিষ্ট কোন ধরণ ও কায়া ছাড়াই তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে।[1]