আল্লাহ তাআলার জন্য অতি সুন্দর নামসমূহ এবং সুউচ্চ গুণাবলীর উপর সুন্নাতের দলীল গ্রহণের পদ্ধতি

الاستدلال على إثبات أسماء الله وصفاته من السنة

আল্লাহ তাআলার জন্য অতি সুন্দর নামসমূহ এবং সুউচ্চ গুণাবলীর উপর সুন্নাতের দলীল গ্রহণের পদ্ধতি:

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,

ثُمَّ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَالسُّنَّةُ تُفَسِّرُ الْقُرْآنَ وَتُبَيِّنُهُ وَتَدُلُّ عَلَيْهِ وَتُعَبِّرُ عَنْهُ

অতঃপর এই সিফাতগুলোর মধ্যে উহাও অন্তর্ভূক্ত, যার বিবরণ রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সুন্নাতে। কেননা সুন্নাত কুরআনকে ব্যাখ্যা করে, কুরআনে যা সংক্ষিপ্তাকারে এসেছে সুন্নাত উহাকে বর্ণনা করে, কুরআন যেদিকে আহবান করে সুন্নাতও সেদিকেই আহবান করে এবং কুরআন যা বর্ণনা করে, সুন্নাতও তাই বর্ণনা করে।


ব্যাখ্যাঃ শাইখের এই উক্তিটিকে পূর্বের বাক্যের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। পূর্বের বাক্যটি হচ্ছে,الخ০০০০০০ وَقَدْ دَخَلَ فِي هَذِهِ الْجُمْلَةِ مَا وَصَفَ اللَّهُ بِهِ نَفْسَهُ فِي سُورَةِ الْإِخْلَاصِ অর্থাৎ নফী ও ইছবাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নিজেকে যেসমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার মধ্যে সূরা ইখলাসে বর্ণিত তাঁর সুউচ্চ গুণাবলী অন্যতম। তেমনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রভুকে যেসব গুণাবলীতে বিশেষিত করেছেন এবং যেসব সিফাত সহীহ সুন্নাতে বর্ণিত হয়েছে, হাঁ ও নাবোধক বক্তব্যের মাধ্যমে ঐসব গুণাবলীও আল্লাহ তাআলার জন্য সুসাব্যস্ত। কেননা সুন্নাত হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় মূলনীতি এবং আল্লাহর কিতাবের পর যেই মূলনীতির দিকে প্রত্যাবর্তন করা দরকার, তা হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সুন্নাত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾

‘‘তোমরা যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ করে থাক, তাহলে বিতর্কিত বিষয়টি আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম’’। (সূরা নিসাঃ ৫৯) আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব কুরআনের দিকে ফিরিয়ে দেয়া এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াফাতের পর তাঁর দিকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাঁর সুন্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেয়া।

সুন্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ রাস্তা, পথ।[1] আর ইসলামের পরিভাষায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেই কথা, কাজ এবং সমর্থন বর্ণিত হয়েছে তাকে সুন্নাত বলা হয়।

সুন্নাতের মর্যাদাঃ সুন্নাত কুরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্যকে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর প্রতি যা নাযিল করেছেন, তিনি তা মানুষের জন্য বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

﴿وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ﴾

‘‘আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে লোকদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করতে পারো এবং যাতে করে তারা চিন্তা-ভাবনা করে’’। (সূরা নাহালঃ ৪৪) এমনি সুন্নাত কুরআনের সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলোকে বিস্তারিত বর্ণনা করে। যেমন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং অধিকাংশ হুকুম-আহকাম কুরআনে সংক্ষিপ্ত আকারে এসেছে। আর সুন্নাতে নববী তা খোলাসা করেছে।

সেই সাথে আরো জানার বিষয় যে, কুরআন যেই দিকে আহবান করে, সুন্নাতও সেই দিকেই আহবান করে এবং কুরআন যা বর্ণনা করে, সুন্নাতও তাই বর্ণনা করে। তাই সুন্নাত সকল ক্ষেত্রেই কুরআনের সমর্থক।[2] সুতরাং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত দ্বারা যা সাব্যস্ত তার হুকুম একই। আল্লাহর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর ক্ষেত্রেও একই হুকুম। কুরআন দ্বারা যেমন আল্লাহর আসমা ও সিফাত সাব্যস্ত হয়েছে, তেমনি সুন্নাত দ্বারাও তা সাব্যস্ত হয়েছে।

[1] - চাই সেই রাস্তা সঠিক হোক কিংবা বাতিল হোক। চাই সেই রাস্তা حسي (বাহ্যিক) হোক যেমন মানুষের চলার রাস্তা ও পথ অথবা معنوى (নৈতিক) হোক। যেমন হেদায়াত, আলো ও সত্যের পথ কিংবা গোমরাহীর পথ হোক।

[2] - সুতরাং অনুসরণের দিক থেকে হাদীছের মান কুরআনের মতই। হাদীছ ব্যতীত কোন মুসলিমের পক্ষে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তাই মহান আল্লাহ্ কুরআনের অনেক স্থানেই রাসূলের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً﴾

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা শাসক (কর্তৃত্বশীল ও বিদ্বান) তাদেরও। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’’ (সূরা নিসাঃ ৫৯) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾

‘‘বলঃ যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’’ (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন,

﴿فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾

‘‘অতএব, যারা তাঁর নবীর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিত্না (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রমণ করবে।’’ (সূরা নূরঃ ৬৩) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন,

﴿وَمَاَآتاَكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا﴾

‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’। (সূরা হাশরঃ ৭) আল্লাহ্ আরো বলেনঃ

﴿وَلَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُوْلِ اللَّهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ﴾

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে, পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জীবনীতে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে’’। (সূরা আহযাবঃ ২১) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন,

﴿فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً﴾

‘‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! তারা ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবেনা এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে’’। (সূরা নিসাঃ ৬৫) আল্লাহ তাআলা সূরা আহযাবের ৩৬ নং আয়াতে বলেন,

﴿وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا﴾

‘‘যখন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফয়সালা দিয়ে দেন, তখন কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণের অধিকার নেই। যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়’’।

এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অসংখ্য হাদীছে উম্মতকে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

«فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

‘‘আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতের পরিণাম গোমরাহী’’। (আবু দাউদ, তিরমিজী, হাদীছটি সহীহ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ ‘‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘‘আমাকে কুরআন ও তার অনুরূপ বস্ত্ত দান করা হয়েছে। (আবু দাউদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ إني تركت فيكم ما إن اعتصمتم به فلن تضلوا أبداً: كتاب الله وسنة نبيه ‘‘আমি তোমাদের মাঝে এমন বিষয় রেখে যাচ্ছি যত দিন তোমরা তা দৃঢ়তার সাথে আকঁড়ে ধরবে ততদিন তোমরা গোমরাহ হবেনা। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আর অপরটি হচ্ছে তাঁর নবীর সুন্নাত। অত্র হাদীছের ভাষা থেকে বুঝা যাচ্ছে হাদীছকে বাদ দিয়ে কুরআন মানলে কিংবা কুরআন ছেড়ে দিয়ে শুধু হাদীছ মানা হলে সীরাতে মুস্তাকিম থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হতে হবে। সুতরাং হাদীছ যেহেতু দ্বীনের দু’টি মূলনীতির মধ্যে একটি মূলনীতি, তাই সাহাবীদের যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী যুগসমূহে আলেমগণ হাদীছ সংরক্ষণ ও সংকলনে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

হাদীছ ছাড়া ইসলামের প্রথম মূলনীতি কুরআন বুঝার কোন সুযোগ নেই। যুগে যুগে যারাই হাদীছ ছাড়া কুরআন বুঝতে চেষ্টা করেছে তারাই গোমরাহ হয়েছে। কুরআন থেকে হাদীছকে আলাদা করার কারণেই সকল বাতিল ফির্কার উৎপত্তি হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা কুরআনকে হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই ইসলামের শত্রুরা আজ পর্যন্ত কুরআনের মধ্যে কোন প্রকার বিকৃতি সাধন করতে পারেনি। আর সুন্নাতের হেফাজতের দায়িত্ব সরাসরি না নেয়ার কারণে এবং তা সংরক্ষণের দায়িত্ব এই উম্মতের উপর ছেড়ে দেয়ার কারণে ইসলাম বিদ্বেষীরা সুন্নাতের মধ্যে ভেজাল ঢুকিয়ে দিয়ে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে হাজার হাজার জাল হাদীছ রচনা করে তাদের মাঝে ছেড়ে দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ও দলাদলি সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে উম্মতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাদের এই ষড়যন্ত্রকে বুঝতে পেরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছগুলো বিলুপ্ত হওয়া এবং জাল ও যঈফের সাথে মিশে যাওয়া থেকে উদ্ধারের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাধনার ফলে মুসলিম জাতি আজ হাদীছের মৌলিক গ্রন্থগুলো লিপিবদ্ধ আকারে হাতে পেয়েছে।

সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে যেই হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা গ্রহণ করা এবং তার উপর আমল করা আবশ্যক। চাই তা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হোক বা খবরে ওয়াহিদ হোক তথা একক সূত্রে বর্ণিত হোক। চাই তা আকীদাহর ক্ষেত্রে হোক কিংবা আহকামে আমালীয়ার ক্ষেত্রে হোক।