ইমামের বয়স শেষ হয়ে আসছিল। এমন সময় একদিন দামেস্কের গভর্ণর কারাগারে ইমামকে দেখতে আসলেন। গভর্ণর তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলেন। জবাবে ইমাম বললেনঃ আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়েছি, যারা আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে। সুলতানের বিরুদ্ধেও আমার কোন অভিযোগ নেই। কারণ তিনি স্বেচ্ছায় নয়; বরং উলামায়ে কেরামের ফতোয়ার কারণেই আমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। কিন্তু আমি ঐসব লোকদেরকে ক্ষমা করতে পারিনা, যারা আল্লাহ ও রাসূলের শত্রু। সত্য দ্বীনের প্রতি আক্রোশের কারণে যারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে এবং আমাকে কারারুদ্ধ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেছে।
৭২৮ হিজরীর ২২ যুলকাদ মাসে ৬৭ বছর বয়সে উপনীত হয়ে দামেস্কের কারাগারে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর সুযোগ্য ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম এ সময় তাঁর কাছেই ছিলেন। দুর্গের মুআয্যিন মসজিদের মিনারে উঠে ইমামের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন। মুহূর্তের মধ্যে শহরের সমস্ত মসজিদে অলিতে-গলিতে, রাজপথে এবং সর্বত্রই ইমামের মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হলো। শেষবারের মত ইমামকে দেখার জন্য দুর্গের পথে জনতার ঢল নামলো। দুর্গের দরজা খুলে দেয়া হলো। গোসলের পর তাঁর জানাযা শহরের বৃহত্তম মসজিদ জামে উমুবীতে আনা হয়। জামে উমুবী এবং রাজপথ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে ইতিপূর্বে ইসলামী বিশ্বে আর কোথাও এত বড় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়নি।
সালাফদের মানহাজের পক্ষে দীর্ঘ সংগ্রাম, যুক্তি-তর্ক, লেখালেখি, ফতোয়া দান, শিক্ষকতা, দাওয়াত এবং আল্লাহর রাস্তায় সর্বোত্তম জিহাদ করে এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এভাবেই চলে গেলেন একজন যুগশ্রেষ্ঠ সংস্কারক। দ্বীনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে পার্থিব জীবনের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ পান নি। এমনকি বিবাহ করার সুযোগও পান নি।
ইমাম ইবনে তাইমীয়া চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর চরিত্র, বৈশিষ্ট এবং দ্বীনের পথে তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা আমাদের আজকের আলেম সমাজকে সজাগ করবে, প্রেরণা যোগাবে, -এতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বীনের ব্যাপারে যাতে কোন বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, -এজন্য তিনি নিজের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশ বিসর্জন দেন। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন সয়ে যেতে প্রস্ত্তত হন, দ্বীনের উপর কোন প্রকার যুলুম বরদাশত করতে তিনি মুহূর্তকালের জন্যও প্রস্ত্তত হননি।
হে আল্লাহ! তোমার দ্বীনের এই অতন্ত্র প্রহরী, সেবক ও মর্দে মুজাহিদ আমাদের প্রাণের শাইখকে তোমার রহমতের প্রশস্ত দ্বারা ঢেকে নাও, তোমার সুবিশাল জান্নাতে তাঁর ঠাই করে দাও এবং নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালেহীনদের সংশ্রবে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান করে দাও। আমাদেরকেও তাদের সাথে কবুল করে নাও। আমীন