ইমামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিল, তার সবগুলোই ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। সমকালীন স্বার্থান্বেষী মহল, এক শ্রেণীর সুফী সম্প্রদায়, কালামশাস্ত্রবিদ এবং বিদআতীরা শত্রুতার বশবতী হয়ে মনের জ্বালা মেটানোর জন্য এবং পার্থিব ফায়দা হাসিল করার জন্যই অভিযোগগুলো করেছিল। হকপন্থীদের বিরুদ্ধে বাতিলপন্থীদের মিথ্যা অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আজও চলছে সেই ধারাবাহিকতা। কিন্তু বিরোধী ও বিদআতীরা তাঁর উপর যেসব মিথ্যারোপ করেছে, তার মধ্যে আশ্চর্যজনক হলো বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার মিথ্যাচার। তিনি লিখেছেন, আমি ৭২৬ হিজরীর রামাযান মাসের নয় তারিখ বৃহস্পতিবার দিন দামেস্ক শহরে পৌঁছলাম। তখন দামেস্ক শহরে হাম্বলী আলেমদের মধ্যে তকীউদ্দীন ইবনে তাইমীয়া ছিলেন অন্যতম। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন, তবে তার মস্তিস্কে কিছু সমস্যা ছিল!! দামেস্কবাসীরা তাঁকে খুব সম্মান করতো। তিনি জামে উমুবীর মিম্বারে লোকদেরকে উপদেশ দিতেন। পরের দিন (জুমআর দিন) আমি মসজিদে গিয়ে দেখি, তিনি আলোচনা করছেন। সেদিন তাঁর আলোচনার মধ্যে এইও ছিল যে, তিনি বলে যাচ্ছিলেন,إن الله ينزل إلى سماء الدنيا كنزولي هذا ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন আমার এই নামার মতই’’। এই কথা বলে তিনি মিম্বারের সিঁড়িসমূহের একটি সিঁড়িতে নেমে আসলেন। তখন মালেকী মাজহাবের ফকীহ ইবনে যাহরা তার বিরোধীতা করলেন। এতে জনগণ উত্তেজিত হয়ে মালেকী ফকীহকে প্রচুর মারপিট করলো। মারপিটের কারণে ফকীহর মাথার পাগড়ী পড়ে গেল......। এই ছিল ইবনে বতুতার মিথ্যাচার।
ইবনে বতুতার এই কথা যে মিথ্যা, তার প্রমাণ হলো, সে উল্লেখ করেছে, ৭২৬ হিজরীর রামাযান মাসের নয় তারিখে দামেস্কে প্রবেশ করল। ঐতিহাসিকদের ঐক্যমতে শাইখুল ইসলাম তখন দামেস্কের কারাগারে বন্ধী ছিলেন। নির্ভরযোগ্য আলেমগণ উল্লেখ করেছেন, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া ৭২৬ হিজরীর শাবান মাসে কারাগারে প্রবেশ করেছেন। আর ৭২৮ হিজরী সালের যুলকাদ মাসে লাশ হয়ে সেখান থেকে বের হয়েছেন। (দেখুনঃ তাবাকাতুল হানাবেলা, বেদায়া ওয়ান নেহায়া ইত্যাদি)
প্রিয় পাঠক বৃন্দ! লক্ষ্য করুন এই মিথ্যুকের প্রতি। সে বলছে যে, রামাযান মাসের কোন এক জুমআর দিন ইমামকে জামে উমুবীর মিম্বারে আলোচনা করতে দেখল। এখন প্রশ্ন হলো জামে উমুবীর মিম্বার কি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল? বিশাল জামে উমুবী কি উপস্থিত সকল মানুষসহ কারাগারে প্রবেশ করেছিল? যাতে করে ইমাম সেখানে ভাষণ দিতে পারেন?
এখন কথা হলো, যারা বলে ইমাম ইবনে তাইমীয়া আল্লাহর সিফাতকে মানুষের সিফাতের সাথে তুলনা করেছেন এবং তিনি ছিলেন মুশাবেবহা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত তারা কি ইবনে বতুতার সেই মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করেছে?
আসল কথা হলো ইমাম কখনোই আল্লাহর কোন সিফাতকে মানুষের সিফাতের সাথে তুলনা করেন নি; বরং তিনি মুশাবেবহাসহ অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। তার লেখনীগুলোই এর উজ্জল প্রমাণ। তিনি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করেছেন এবং বলেছেন তাঁর সুউচ্চ সিফাতগুলো সৃষ্টির সিফাতের মত নয়। দুনিয়ার আকাশে তাঁর নেমে আসা মাখলুকের নামার মত নয়। তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার শানে যেভাবে নেমে আসা শোভনীয়, তিনি সেভাবেই নেমে আসেন। এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ। আকীদাহ আল ওয়াসেতীয়ার বহু স্থানে তিনি এই মূলনীতিটি সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’।