শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া ভূমিকা ডঃ সালেহ ফাওযান [অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী] ১ টি

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد:

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম সঠিক ইসলামী আকীদাহ গ্রহণ অপরিহার্য। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মক্কী জীবনের সম্পূর্ণ সময় মুশরিকদের বাতিল আকীদাহ বর্জন করে নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং এ পথে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কারণ ইসলামে সঠিক আকীদাবিহীন আমলের কোন মূল্য নেই।

আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের উপরই দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে সৌভাগ্য অর্জন নির্ভর করে। সুতরাং আল্লাহ্ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনের প্রতিই মানুষের প্রয়োজন সর্বাধিক। বান্দা যতক্ষণ আল্লাহর প্রভুত্ব, উলুহীয়াত, তাঁর অতি সুন্দর নামসমূহ এবং তাঁর সুউচ্চ গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করবে, ততক্ষণ সে প্রকৃত শান্তি অর্জন করতে সক্ষম হবেনা। মানুষের মনে স্রষ্টার অস্তিত্ব, তাঁর পবিত্র সত্তা ও গুণাবলী, তাঁর সৃষ্টি ও কর্মসমূহ, সৃষ্টির সূচনা, উহার পরিসমাপ্তি, সৃষ্টিজগতের সকল সৃষ্টি, তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, তাকদীর এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও তাতে সংঘটিতব্য বিষয়াদি সম্পর্কে যেসব সন্দেহ ও প্রশ্ন জাগ্রত হয়, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইসলামী আকীদাহই কেবল সেসব প্রশ্ন ও সন্দেহের জবাব দিতে সক্ষম। পৃথিবীতে মুসলিমদের বিজয়, সাফল্য, প্রতিপত্তি এবং প্রতিষ্ঠা লাভের মূলে ছিল তাদের নির্ভেজাল ও পরিশুদ্ধ আকীদাহ বিশ্বাস। যতদিন মুসলিমদের আকীদাহ বিশ্বাস সঠিক ও সুদৃঢ় ছিল, ততদিন তারা সমগ্র পৃথিবীর শাসক ছিল।

এ জন্যই কুরআন মানুষের আকীদাহ পরিশুদ্ধ করার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মূল বিষয়ই ছিল আকীদাহর সংশোধন। তারা সর্বপ্রথম যে বিষয়ের প্রতি আহবান জানাতেন, তা হলো এককভাবে আল্লাহর এবাদত করা এবং অন্যসব বস্ত্তর এবাদত বর্জন করা। মক্কাতে একটানা তের বছর অবস্থান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকীদাহ সংশোধনের কাজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

কুরআন ও সুন্নাহ্য় আল্লাহর সত্তা, তাঁর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলী, ফেরেশতা, আখেরাত ইত্যাদি গায়েবী বিষয়কে অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ইসলামের গৌরবময় যুগে মুসলিমদের তা বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তারা বিষয়গুলো শুনে তা সহজভাবেই বুঝে নিয়েছেন এবং বিশ্বাস করেছেন। আর এ বিষয়গুলো বোধশক্তি ও যুক্তির মাধ্যমে বুঝার কোন সুযোগ নেই। অহীর উপর নির্ভর করা ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই। সেই সাথে কুরআন ও হাদীছে আলোচিত গায়েবী বিষয়গুলো মানুষের বিবেক-বুদ্ধির সাথে সাংঘর্ষিকও নয়।

কিন্তু পরবর্তীতে যখন গ্রীক দর্শনের কিতাবাদি আরবীতে অনুবাদ করা হলো, তখন থেকেই ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারের উপর গ্রীক দর্শনের প্রভাব পড়তে থাকে। আববাসী খেলাফতকালে সরকারীভাবে এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়। ফলে মুসলিমদের লাইব্রেরীগুলো গ্রীক দর্শনের কিতাবে ভরপুর হয়ে যায়। মুসলিম বিদ্বানগণ গ্রীক দর্শনের দিকে ঝুকে পড়ে। ইসলামী আকীদাহর উপরও গ্রীক দর্শনের প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী, তাঁর কার্যাবলী, সৃষ্টির সূচনা ও পরিসমাপ্তি, পরিণাম, কিয়ামত, হাশর-নাশর, মানুষের আমলের ফলাফল এবং এ ধরণের অন্যান্য গায়েবী বিষয়গুলো জানার জন্য কুরআন-সুন্নাহর পথ ছাড়া আর কোন পথ নেই। চিন্তা-ভাবনা, আন্দাজ-অনুমান করে এ বিষয়গুলো জানা অসম্ভব। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীর ধারে কাছে পৌঁছানো মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে মানুষের কোন অভিজ্ঞতাও নেই। এসব বিষয় চোখেও দেখা যায়না। কুরআন সুস্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾ ‘‘তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শুরা: ১১) কাজেই এ বিষয়ে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের উপর নির্ভর করাই সঠিক আকীদাহর উপর টিকে থাকার একমাত্র মাধ্যম।

কিন্তু গ্রীক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মুসলিম দার্শনিকরা কুরআন ও সুন্নাহর সহজ সরল উক্তিগুলো বাদ দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর গুণাবলী, আখেরাত এবং অন্যান্য গায়েবী বিষয়গুলোর দার্শনিক ও বুদ্ধিভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদান শুরু করে। তাদের জবাব দেয়ার জন্য আরেক শ্রেণীর মুসলিম আলেম দাঁড়িয়ে যায়। এরা হলো মুসলিম কালামশাস্ত্রবিদ। তারাও দার্শনিকদের জবাবে বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতে থাকেন। কিন্তু তাদের উপস্থাপিত যুক্তি-তর্ক দার্শনিকদের জবাব দিতে বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের যুক্তিগুলো ছিল তুলনামূলক দুর্বল। এগুলো সংশয় দূর করার বদলে নতুন নতুন সংশয় ও সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং এমনসব জটিলতা, দুর্বোধ্যতার সৃষ্টি করেছে, যার জবাব স্বয়ং কালামশাস্ত্রবিদগণ খুজেঁ না পেয়ে নিজেরাই সংশয়ে পড়েছে।

ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী শেষ বয়সে উপনীত হয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, তিনি কালামী পদ্ধতি ও দার্শনিক উপস্থাপন প্রক্রিয়ার উপর অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছেন। শেষ জীবনে তিনি এ সিদ্বান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এর ফলে রোগীর রোগ নিরাময় হওয়ার চেয়ে আরো বৃদ্ধি পায় এবং তৃষ্ণার্তের পিপাসা মোটেই নিবারণ হয়না। তিনি বলেন, কুরআন-সুন্নাহর পদ্ধতিই আমি নিকটতর পেয়েছি।

আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর সত্তা ও গুনাবলী সম্পর্কে কালাম শাস্ত্রবিদ ও মুসলিম দার্শনিকগণ বুদ্ধিভিত্তিক যেই যুক্তি-প্রমাণ পেশ করেছেন, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া তাতে মোটেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ তার মোকাবেলায় কুরআন-সুন্নাহর যুক্তি-প্রমাণ অনেক সুস্পষ্ট, স্বচ্ছ, দ্ব্যর্থহীন ও হৃদয়গ্রাহী। তাই ইমাম ইবনে তাইমীয়া আল্লাহর সত্তা ও গুনাবলী এবং ঈমানের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে মুসলিমদের উপর যা আবশ্যক, কুরআন-সুন্নাহর দলীলের আলোকে তিনি অত্যন্ত পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন। এসব বিষয়ে তিনি একাধিক মূল্যবান কিতাব রচনা করেছেন এবং দার্শনিক ও কালামীদের কঠোর সমালোচনা ও প্রতিবাদ করেন। এ বিষয়ে তার অন্যতম গ্রন্থ আল আকীদাতুল ওয়াসেতীয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কিতাবে আল্লাহর অতি সুন্দর নাম, তাঁর সুউচ্চ গুণাবলী, আখেরাতের বিভিন্ন বিষয়সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রায় সকল বিষয়ই অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় উল্লেখ করেছেন।

৬৯৮ হিজরীর কোনো এক দিনে আসরের নামাযের পর এক বৈঠকে শাইখ এই মূল্যবান কিতাবটি লিখে শেষ করেছেন। শাইখ নিজেই এই কিতাব লিখার কারণ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তাতারী শাসনাধীন ইসলামী সাম্রাজের মুসলিমদের মধ্যে যখন অজ্ঞতা ও যুলুম ছড়িয়ে পড়ল, দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা যখন প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলো, চতুর্দিকে কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ল এবং সঠিক ইসলামী আকীদাহ মুসলিমগণ প্রায় ভুলেই যাচ্ছিল, তখন ইরাকের দক্ষিণাঞ্চল বসরা ও কূফার মধ্যকার ‘ওয়াসেত’ শহরের জনৈক কাযী শাইখের কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলামী আকীদাহর বিষয়গুলো এক সাথে উল্লেখ করে একটি কিতাব লিখার অনুরোধ জানালেন। শাইখ জবাবে বললেন, আকীদাহর বিষয়ে লোকেরা তো অনেক কিতাবই রচনা করেছে। কিন্তু ওয়াসেতের কাযী চাপাচাপি করেই বললেন যে, আমি কেবল আপনার পক্ষ হতেই এ বিষয়ে একটি পুস্তক কামনা করছি। তখন তিনি আসরের নামাযের পর এক বৈঠকে এই কিতাবটি লিখে দিলেন। ওয়াসেতের কাযীর অনুরোধে এবং ওয়াসেতের অধিবাসীদের জন্য যেহেতু এই কিতাবটি লিখা হয়েছে, তাই এটিকে আকীদাতুল ওয়াসেতীয়া বলা হয়। সেই সাথে واسط অর্থ যেহেতু মধ্যবর্তী এবং এই কিতাবে যেহেতু মধ্যমপন্থী উম্মতের তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে, তাই কিতাবটির নাম ‘আকীদাতুল ওয়াসেতীয়া’ হতে মানা নেই।

আকীদাতুল ওয়াসেতীয়ার বিষয়গুলো নিয়ে শাইখের সাথে সমকালীন আলেমদের একাধিক ‘মুনাযারা’ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে মিশরের তদানীন্তন সুলতানের পক্ষ হতে নিযুক্ত দামেস্কের গভর্ণরের উপস্থিতিতে ৭০৫ হিজরী সালের বিতর্ক অনুষ্ঠানটি অন্যতম। শাইখুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আকীদাহ ওয়াসেতীয়ার বিষয়গুলোর উপর তিনটি মুনাযারায় অংশ গ্রহণ করেছেন। এতে তিনি দ্বীনের সমস্ত মূলনীতি ও সহীহ আকীদাহর মাসআলাগুলো সংক্ষিপ্ত ও সহজ ভাষায় উল্লেখ করেছেন। এক কথায় বলতে গেলে, কিতাবটির মধ্যে তিনি আকীদাহর ক্ষেত্রে তর্কশাস্ত্রবিদদের মতামত ও বিদআতমুক্ত সালাফে সালেহীনের আকীদাহর বিবরণ দিয়েছেন। বলা হয়েছে যে, আশায়েরা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ওয়াসেতীয়ায় সন্নিবেশিত আকীদাহগুলোর বিষয়ে যখন শাইখের চরম বিরোধিতা শুরু করলো, তখন শাইখুল ইসলাম তাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, তোমরা উহা থেকে এমন একটি মাসআলা নিয়ে আসো, যাতে আমি কুরআন ও সু্ন্নাহর খেলাফ করেছি। শাইখুল ইসলামের মৃত্যু পর্যন্ত তারা ওয়াসেতীয়ার একটি মাসআলাকেও কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী হিসাবে প্রমাণ করতে পারেনি।

বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ সমাজের মুসলিমগণ সঠিক আকীদা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তারা বহু সমস্যার সম্মুখীন। মুসলিমদের অধঃপতনের মূল কারণ হল দ্বীনের সঠিক আকীদা ও শিক্ষা বর্জন করে শির্ক ও বিদআতে জড়িয়ে পড়া।

বাংলাভাষী মুসলিম অঞ্চলগুলোতেও বয়ে যাচ্ছে শির্ক-বিদআতের সয়লাব। যারা আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার দাবী করে তারাও সঠিক আকীদাহ হতে অনেক দূরে। শুধু তাই নয়, যারা সুস্পষ্ট কবর পূজা ও নানা রকম শির্ক-বিদআতে লিপ্ত তাদেরকেও সুন্নী বলে আখ্যায়িত করা হয়!!! আর এ কারণেই বিভ্রান্ত হচ্ছে আমাদের সমাজের সরল প্রাণ অগণিত মুসলিম।

বাংলা ভাষা এখন বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে কোটি কোটি বাংলাভাষী মুসলিম। বাংলাভাষী মুসলিমদের তুলনায় ইসলামী বই-পুস্তকের সংখ্যা কম বলেই মনে হয়। এখন পর্যন্ত আকীদাহর মৌলিক গ্রন্থগুলোর ব্যাখ্যাসহ সঠিক ও নির্ভুল অনুবাদ না হওয়া বাংলাভাষী মুসলিমদের সহীহ আকীদাহ সম্পর্কে অজ্ঞতার অন্যতম কারণ।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ বর্ণনায় ওয়াসেতীয়া যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব, তাই মুসলিম উম্মাহর নিকট এটি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। এর ছোট-বড় অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। সম্ভবত অনুবাদও হয়েছে অনেক ভাষায়। ওয়াসেতীয়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহের মধ্য থেকে শাইখ ড: সালেহ ফাওযানের ব্যাখ্যাটি বাংলায় অনুবাদের জন্য বেছে নেয়ার কারণ হলো এটি সংক্ষিপ্ত ও সহজ সরল। বাংলাভাষী মুসলিমগণ যেহেতু এখনো আকীদাহর বড় বড় কিতাবগুলো পড়তে অভ্যস্থ হয়ে উঠেনি, তাই এটিই তাদের জন্য আকীদাহর জগতে প্রবেশের মূল ফটক হতে পারে ভেবে এবং বিশেষ করে জমঈয়তে আহলে হাদীছ বাংলাদেশ সৌদি আরব শাখার তত্ত্বাবধানে ওয়াসেতীয়ার এই ব্যাখ্যাটিই অনুবাদের জন্য নির্বাচন করা হয়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে অনুবাদ সম্পন্ন হওয়ায় মহান স্রষ্টার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এখানে আরেকটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, তিন প্রকার তাওহীদের মধ্য থেকে শুধু তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত, তাকদীর, ঈমানের বিভিন্ন মাসআলা, আখেরাত সম্পর্কিত গায়েবী বিষয়সমূহ, খেলাফত ও সাহাবীদের ফযীলত এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই ওয়াসেতীয়ায় স্থান পেয়েছে। তাওহীদুল উলুহীয়ার বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়নি। সে হিসাবে এটি আকীদাহর পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ নয়; বরং তাতে আকীদার বিশেষ একটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আকীদাহর যেসব বিষয় বাদ পড়েছে, তা অবগত হওয়ার জন্য আমাদের অন্যতম কিতাব শরহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া এবং আল্লামা হাফেয বিন আহমাদ আলহাকামী রচিত ‘নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদাহ’ নামক বই দু’টি পড়ার অনুরোধ রইল। আর তাওহীদুল উলুহীয়ার বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার জন্য শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক রচিত ‘কিতাবুত্ তাওহীদ’এর অন্যতম ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কুররাতুল উয়ূন’ সংগ্রহ করা যেতে পারে। কিতাবুত্ তাওহীদের বহু ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে ‘কুর্রাতুল উয়ূন’কে বাংলায় অনুবাদের জন্য বাছাই করার অন্যতম কারণ হলো, শাইখের নাতি সুবিখ্যাত আলেম আব্দুর রাহমান বিন হাসান হলেন এটির প্রণেতা। তিনি প্রথমে কিতাবুত্ তাওহীদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল মাজীদ’ রচনা করেন। অতঃপর এটিকে আরো সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত করে আরেকটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন, যার নাম দেন, قرة عيون الموحدين বা তাওহীদপন্থীদের নয়নমণি।

আল্লাহর অশেষ কৃপায় বইগুলো পাঠকের হাতে তুলে দিতে পেরে তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি। এতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে, তা আমার ও শয়তানের পক্ষ হতে। সুবিজ্ঞ পাঠক সমাজের প্রতি বিশেষ নিবেদন, অনুবাদ জনিত কোন ভুল-ভ্রান্তি নযরে আসলে আমাদেরকে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

হে আল্লাহ! তুমি বইগুলোর লেখক, ভাষ্যকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও ছাপানোর কাজে সহযোগিতাকারী, তত্বাবধানকারী এবং পাঠক-পাঠিকাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করো। আমীন


শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
ashahed1975@gmail.com
মোবাইল +৮৮০১৭৩২৩২২১৫৯