عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنِّي كُنْتُ أَتَيْتُكَ الْبَارِحَةَ فَلَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَكُونَ دَخَلْتُ عَلَيْكَ الْبَيْتَ الَّذِي كُنْتَ فِيهِ إِلاَّ أَنَّهُ كَانَ فِي بَابِ الْبَيْتِ تِمْثَالُ الرِّجَالِ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ قِرَامُ سِتْرٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ وَكَانَ فِي الْبَيْتِ كَلْبٌ فَمُرْ بِرَأْسِ التِّمْثَالِ الَّذِي بِالْبَابِ فَلْيُقْطَعْ فَلْيُصَيَّرْ كَهَيْئَةِ الشَّجَرَةِ وَمُرْ بِالسِّتْرِ فَلْيُقْطَعْ وَيُجْعَلْ مِنْهُ وِسَادَتَيْنِ مُنْتَبَذَتَيْنِ يُوطَآَنِ وَمُرْ بِالْكَلْبِ فَيُخْرَجْ فَفَعَلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসে বললেন, আমি গত রাতে আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি ঘরে প্রবেশ করিনি। কারণ গৃহদ্বারে অনেকগুলি ছবি ছিল এবং ঘরের দরজায় এক খানা পর্দা টাঙ্গানো ছিল যাতে অনেকগুলি প্রাণীর ছবি ছিল। আর ঘরের অভ্যন্তরে ছিল একটি কুকুর। বস্তুত যে ঘরে এ সমস্ত জিনিস থাকে, আমরা সে ঘরে প্রবেশ করি না। সুতরাং ঐ সমস্ত ছবিগুলির মাথা কেটে ফেলার আদেশ দিন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে। উহা কাটা হলে গাছের আকৃতি হয়ে যাবে এবং পর্দাটি সম্পর্কে আদেশ দিন তাকে কেটে দু’টি গদি তৈরি করা হবে, যা বিছানা এবং পায়ের নিচে থাকবে। আর কুকুরটি সম্পর্কে আদেশ দিন যেন তাকে ঘর থেকে বের করা হয়। সুতরাং রাসূল (ছাঃ) তাই করলেন’ (তিরমিযী হা২৮০৬, মিশকাত হা/৪৫০২)।
অত্র হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছবি টাঙ্গানো যাবে না। কারণ এতে রহমতের ফেরেশতা আসে না। উল্লেখ্য যে, সব ধরনের ছবি হারাম। শরীর বিশিষ্ট হোক বা শরীর ছাড়া হোক, ছায়া বিশিষ্ট হোক বা ছায়া ছাড়া হোক, সব প্রকার ছবি নিষিদ্ধ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। এতে তিনি সব ছবিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নির্দিষ্টভাবে কোন প্রকার উল্লেখ করেননি। সেজন্য তিনি পর্দা ছিড়ে ফেলেছেন এবং ছবি সরানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। এটা সুস্পষ্ট দলীল যে, ছবির আসল আকৃতি পরিবর্তন করে দিলে তা ব্যবহার করা বৈধ হয়ে যায়। কারণ ছবির চিহ্ন পরিবর্তনের ফলে অন্য আকৃতি তৈরি হয়। তবে যে ছবিতে প্রকৃত উপকারিতা আছে আমরা সে ছবি তৈরি করা জায়েয মনে করি। আর এ উপকারিতাসমূহ প্রতাখ্যান করা সহজ নয়, যার পদ্ধতি মূলত বৈধ। যেমন চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এবং ভূগোলবিদদের ও শিকার সংগ্রহকারীদের প্রয়োজন হয়। এমনকি কোন কোন সময় তা ওয়াজিব হয়ে যায়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَخْبَرَتْنِى مَيْمُونَةُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَصْبَحَ يَوْمًا وَاجِمًا فَقَالَتْ مَيْمُونَةُ يَا رَسُولَ اللهِ لَقَدِ اسْتَنْكَرْتُ هَيْئَتَكَ مُنْذُ الْيَوْمِ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ্রإِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ وَعَدَنِى أَنْ يَلْقَانِى اللَّيْلَةَ فَلَمْ يَلْقَنِى أَمَ وَاللهِ مَا أَخْلَفَنِىগ্ধ. قَالَ فَظَلَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَهُ ذَلِكَ عَلَى ذَلِكَ ثُمَّ وَقَعَ فِى نَفْسِهِ جِرْوُ كَلْبٍ تَحْتَ فُسْطَاطٍ لَنَا فَأَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِهِ مَاءً فَنَضَحَ مَكَانَهُ فَلَمَّا أَمْسَى لَقِيَهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ لَهُ ্রقَدْ كُنْتَ وَعَدْتَنِى أَنْ تَلْقَانِى الْبَارِحَةَগ্ধ. قَالَ أَجَلْ وَلَكِنَّا لاَ نَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلاَ صُورَةٌ. فَأَصْبَحَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ فَأَمَرَ بِقَتْلِ الْكِلاَبِ حَتَّى إِنَّهُ يَأْمُرُ بِقَتْلِ كَلْبِ الْحَائِطِ الصَّغِيرِ وَيَتْرُكُ كَلْبَ الْحَائِطِ الْكَبِيرِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) মায়মুনা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চিমিত্মত অবস্থায় ভোর করলেন এবং বললেন, জিব্রীল (আঃ) এই রাতে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। আল্লাহর কসম! তিনি তো কখনো আমার সাথে কথা দিয়ে খেলাফ করেন না। অতঃপর তাঁর মনে পড়ল ঐকুকুর ছানাটির কথা, যা তাঁর ++++++ নিদের্শ দিলেন। এরপর তাকে বের করে দেওয়া হল। অতঃপর কুকুরটি যে জায়গায় বসা ছিল তিনি সেই জায়গায় কিছু পানি নিজ হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন পরে যখন বিকাল হল জিব্রীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, গত রাতে আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করেছিলেন। তিনি বললেন হ্যাঁ, সাক্ষাতের ওয়াদা করেছিলাম কিন্তু আমরা এমন ঘরে প্রবেশ করি না, যেই ঘরে কুকুর বা ছবি থাকে। পরের দিন সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সমসত্ম কুকুর মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিলেন। এমনকি ছোট ছোট বাগানের হেফাযতে রক্ষিত কুকুরগুলিকে ছেড়ে দেন। অর্থাৎ এগুলিকে মারতে বলেননি (মুসলিম হা/২১০৫; মিশকাত হা/৪৪৯০)।
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ أَعْرَسْتُ فِيْ عَهْدِ أَبِيْ فَأَذَنَّ أَبِي النَّاسَ وَكَانَ أَبُوْ أَيُّوْبَ فيمن آذنا وقد ستروا بيتي بنجاد أخضر فاقبل أبو أيوب فَدَخَلَ فَرَأَنِيْ قَائِمًا وَأَطَّلَعَ فَرَأى الْبَيْتَ مُسْتَتِرًا بنِجِاَدِ أَخْضَرُ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ أَتَسْتَرُوْنَ الْجُدُرَ قَالَ أَبِيْ وَأَسْتَحْيِِ غَلَبَنَا النِّسَاءَ أَبَا أَيُّوْبَ فَقَالَ مَنْ كُنْتُ أَخْشَى عَلَيْهِ أَنْ تَغْلِبْنَهُ النِّسَاءَ فَلَمْ أَكُنْ أَخْشَى عَلَيْكَ أَنْ تَغْلِبْنَكَ ثُمَّ قَالَ لاَ أَطْعَمُ لَكُمْ طَعَامًا وَلاَ أَدْخُلُ لَكُمْ بَيْتًا ثُمَّ خَرَجَ رَحِمَهُ اللهُ.
সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আমার পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় বিবাহ করলাম। আমার পিতা লোকজনকে দাওয়াত দিলেন। দাওয়াত প্রাপ্তদের একজন আমার ঘরটি সবুজ রংয়ের বিভিন্ন কাপড়, বিছানা ও বালিশ দ্বারা সাজিয়েছিলেন। আবু আইয়ুব এসে ঘরে ঢুকলেন এবং তিনি আমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি অনুসন্ধান করে দেখলেন, সবুজ কাপড় দ্বারা বাড়ি-ঘর পর্দা করা হয়েছে। তিনি বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তোমরা কি দেওয়ালে পর্দা লাগাও? আমার পিতা লজ্জিত হয়ে বললেন, হে আবু আইয়ুব! মহিলারা এ কাজে আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। তখন আবু আইয়ুব বললেন, যাদের উপর মহিলারা প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে মনে করতাম, আপনাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম না। এরপর তিনি বললেন, আমি তোমাদের খাদ্য খাব না। তোমাদের ঘরেও প্রবেশ করব না। অতঃপর তিনি বের হয়ে গেলেন (ত্বাবারানী, আদাবুয যিফাফ ২০১ পৃঃ)।
عَنْ أَسْلَمَ مَوْلَى عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ حِيْنَ قَدِمَ الشَّامَ فَصَنَعَ لَهُ رَجُلٌ مِنَ النَّصَارَى فَقَالَ لِعُمَرَ إِنِّيْ أُحِبُّ أَنْ تَجِيْئَنِيْ وَتَكْرَمَنِيْ اَنْتَ وَأَصْحَابُكَ وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ عُظَمَاءِ الشَّامِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ إِنَّا لاَ نَدْخُلُ كَنَائِسَكُمْ مِنْ اَجْلِ الصُّوَرِ الَّتِيْ فِيْهَا.
ওমর (রাঃ) যখন সিরিয়াতে আসলেন, তাঁর জন্য এক খ্রিস্টান লোক খাদ্য তৈরি করল। সে ওমর (রাঃ) কে বলল আমি পসন্দ করি আপনি আমার বাড়িতে আসবেন এবং আপনি ও আপনার সাথীরা আমাকে সম্মানিত করবেন। এ লোক ছিল সিরিয়ার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের একজন ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমরা তোমাদের গীর্জায় ছবি থাকার কারণে প্রবেশ করি না (বায়হাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৪ পৃঃ)।
عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَجُلاً صَنَعَ لَهُ طَعَامًا فَدَعَاهُ فَقَالَ أَفِي الْبَيْتِ صُوْرَةٌ؟ قَالَ نَعَمْ فَأَبَى أَنْ يَّدْخُلَ حَتَّى كَسَرَ الصُّوْرَةَ ثُمَّ دَخَلَ.
আবু মাসউদ উকবাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক লোক তাঁর জন্য খাদ্য তৈরি করল। এরপর তাঁকে দাওয়াত দিল। অতঃপর তিনি বললেন, ঘরে কি ছবি আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকার করলেন, শেষ পর্যন্ত ছবি ভেঙ্গে ফেলা হ’ল। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন (বায়হাকী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)।
قَالَ الْإِمَامُ الأَوْزَاعِيُّ لاَ نَدْخُلُ وَلِيْمَةَ فِيْهَا طَبْلٌ وَلاَ مِعْزَافٌ.
ইমাম আওযাঈ (রহঃ) বলেন, ‘আমরা ঐ ওয়ালীমাতে যাই না, যাতে তবালা ও বাদ্যযন্ত্র থাকে (আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ)। উল্লেখিত বিবরণ দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, এমন দাওয়াতের অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না, যাতে অপছন্দনীয় কর্মকান্ড ও প্রমোদের ব্যবস্থা থাকে। তবে উপস্থিতির কারণে তা পরিত্যাগ করলে অথবা বন্ধ রাখলে কিংবা সে নিষেধ করলে যেতে পারে।