কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হয়। শয়তানের প্রতিক্রিয়া থাকে না। কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহ রুযীতে বরকত দেন। তেলাওয়াতকারীর পক্ষে কুরআন ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ الْكَهْفِ فِىْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ النُّوْرُ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ-
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পড়বে তার ঈমানী আলো এক জুম‘আ হতে অপর জুম‘আ পর্যন্ত চমকিতে থাকবে’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২১৭৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পড়লে অপর জুম‘আ পর্যন্ত যে কোন অন্যায় হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং যে কোন কল্যাণ অর্জন করার জন্য আলোর মত কাজ করবে।
عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : يُؤْتَى يَوْمَ القِيَامَةِ بِالقُرْآنِ وَأَهْلِهِ الَّذِيْنَ كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ بِهِ فِي الدُّنْيَا تَقْدُمُهُ سُوْرَةُ البَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ، تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا-
নাওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনকে এবং যারা দুনিয়াতে কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে আনা হবে। কুরআনের আগে আগে থাকবে সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান। আর এ সূরা দু’টি তাদের তেলাওয়াতকারীদের পক্ষ থেকে জবাবদিহি করবে’ (মুসলিম, মিশকাত, রিয়াযুছ ছালিহীন, ৩/৪৩পৃঃ)। ক্বিয়ামতের দিন তেলাওয়াকারীর পক্ষ হয়ে কুরআন আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে এবং সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيْقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلاَ يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنْ الْإِبِلِ-
ওকবা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা মসজিদে আহলে ছুফ্ফাদের মাঝে ছিলাম। এমন সময় রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, সে প্রত্যহ সকালে বুতহান অথবা আকীক নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা এমন সুযোগ প্রত্যেকেই গ্রহণ করতে চাই। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না, অথচ একাজ তার জন্য দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম? তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। মোটকথা যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১০; বাংলা মিশকাত হা/২০০৮)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, একটি বড় দামী উটনী দান করে যত নেকী পাওয়া যাবে, কুরআনের একটি আয়াত মসজিদে গিয়ে পড়লে বা পড়ালে তার চেয়ে অধিক নেকী পাওয়া যাবে। এভাবে যত আয়াত পড়বে বা পড়াবে তত উটনী অপেক্ষা বেশী নেকী পাওয়া যাবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ أَنْ يَجِدَ فِيْهِ ثَلاَثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ قُلْنَا نَعَمْ قَالَ فَثَلاَثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلاَتِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এটা ভালবাসবে যে, সে যখন বাড়ী ফিরে আসবে, তখন সে তিনটি হৃষ্টপুষ্ট বড় কুঁজ বিশিষ্ট গর্ভধারিণী উটনী পাবে? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। তিনি বললেন, মনে রেখো, তিনটি আয়াত যা তোমাদের কেউ তার ছালাতে পড়ে তা তার জন্য এধরনের তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১১; বাংলা মিশকাত হা/২০০৯)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছালাতের মধ্যে সর্বনিম্ন তিনটি আয়াত পড়লেও তাকে বড় দামী তিনটি উটনী দান করার সমান নেকী দেওয়া হবে।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِيْ يَقْرَؤُهُ يَتَتَعْتَعُ فِيْهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ-
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফিরিশতাদের সাথে থাকবেন। আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয় তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১২; বাংলা মিশকাত হা/২০১০)। এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা অর্থ সহকারে সুন্দর উচ্চারণে দক্ষতার সাথে কুরআন পড়তে পারে এবং নিয়মিত পড়ে তারা জান্নাতে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী হবে। আর যারা সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না, পড়লে আটকে যায় এবং পড়া খুব কষ্টকর হয় তাদের জন্য ডবল নেকী রয়েছে।
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِيْنَ-
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘এই কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ কোন কোন জাতিকে উন্নত করেন এবং অন্যদের অবনত করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৫; বাংলা মিশকাত হা/২০১৩)।
এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একমাত্র কুরআনের মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালে মর্যাদা লাভ করতে পারে। আর কুরআন তেলাওয়াত না করলে মানুষ উভয় জীবনে হবে লাঞ্ছিত।
عَنْ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْكَهْفِ وَإِلَى جَانِبِهِ حِصَانٌ مَرْبُوْطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُو وَتَدْنُو وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ تِلْكَ السَّكِيْنَةُ تَنَزَّلَتْ بِالْقُرْآنِ-
বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন, একব্যক্তি সূরা কাহফ পড়ছিল এবং তার কাছে তার ঘোড়া রশি দ্বারা বাঁধা ছিল। এসময় এক খন্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিল এবং তার অতি নিকটতর হতে লাগল। আর তার ঘোড়া লাফাতে লাগল। সে যখন সকালে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তা ছিল আল্লাহর রহমত ও শান্তি, যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে নেমে এসেছিল। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَفِيْ رِوَايَةٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْمَلاَئِكَةُ دَنَتْ لِصَوْتِكَ وَلَوْ قَرَأْتَ لَأَصْبَحَتْ يَنْظُرُ النَّاسُ إِلَيْهَا لَا تَتَوَارَى مِنْهُمْ-
রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তারা ছিল ফিরিশতা। তোমার কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে নিকটতর হয়েছিল। তুমি যদি পড়তে থাকতে তারা সকাল পর্যন্ত তথায় থেকে যেত এবং মানুষ তাদের দেখতে পেত, তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে লুকাতে পারত না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৬-২১১৭; বাংলা মিশকাত হা/২০১৪-২০১৫)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি নাযিল হয়। ফিরিশতারা কুরআন শুনার জন্য দল বেঁধে নেমে আসেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘর সমূহকে কবরস্থানে পরিণত কর না। নিঃসন্দেহে শয়তান সেই ঘর হতে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করা হয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২১১৯; বাংলা মিশকাত হা/২০১৭)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় না সে ঘর কবরস্থানের ন্যায়। যে ঘরে কুরআন তেলাওয়া করা হয় সে ঘর হতে শয়তান পালিয়ে যায়।