রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, لَعَنَ اللهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ وَالْوَاشِمَةَ وَالْمُسْتَوْشِمَةَ ‘যারা চুলে জোড়া লাগায় অথবা অন্যের দ্বারা লাগিয়ে নেয়, যে নারী দেহে কিছু অংকন করে অথবা অন্যের দ্বারা করিয়ে নেয় তাদের উভয়ের প্রতি অভিশাপ করেছেন’ (বুখারী,মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)।
উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে রাসূল কতিপয় কাজ করতে মহিলাদের বারণ করেছেন। আদর্শনারীর জন্য উক্ত কাজগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَعَنَ اللهُ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
‘আল্লাহ তা‘আলা সেই সব পুরুষের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা মহিলার বেশ ধারণ করে। আর ঐসব মহিলাদের প্রতিও অভিশাপ করেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯, বাংলা মিশকাত হা/৪২৩২)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষ মহিলার পোশাক পরিধান করতে পারে না। তেমনি কোন মহিলাও পুরুষের পোশাক পরিধান করতে পারে না। তদ্রূপ যে সমস্ত পোশাকে মাহিলাদের সাথে পুরুষের সাদৃশ্য করা হয় কিংবা পুরুষদের সাথে মহিলাদের সাদৃশ্য হয়, সেসব পরিহার করতে হবে। আদর্শ নারীর জন্য ঐসব কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত আবশ্যক। প্রকৃতপক্ষে একজন আদর্শ মুসলিম মহিলা কখনো পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে পারে না।
কোন এক বৈঠকে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জাহান্নামের প্রতি লক্ষ্য করলাম দেখলাম সেখানকার অধিকাংশই নারী। ছাহাবীগণ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না, তারা স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না এবং অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করে না। তুমি যদি সারা জীবন তাদের সাথে অনুগ্রহ কর, অতঃপর তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করে, তখন বলে ফেলে আমি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণই পাইনি’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/১৩৯৭)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَوْ كُنْتُ آمِراً أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا-
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যদি আমি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম তবে স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২৫৫; বাংলা মিশকাত হা/৩১১৬, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছে স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব কতটুকু তা স্পষ্ট হয়েছে।
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘স্বামী হচ্ছে মহিলাদের জন্য জাহান্নাম এবং জান্নাতের মাধ্যম’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২, ১৯৩৪)। অত্র হাদীছগুলি দ্বারা বুঝা যায় যে, আদর্শ মহিলার জন্য তার স্বামীকে রাযী-খুশি করা, আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তার খিদমতে সর্বদা নিয়োজিত থাকা অত্যন্ত যরূরী।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একজন মহিলাকে ভাল হতে হলে নিম্নোক্ত গুণাবলী অর্জন করতে হবে। ঈমানদার, পরহেযগার, নেককার, আল্লাহভীরু, লজ্জাস্থানের হিফাযতকারিণী, সতী-সাধবী, উত্তম চরিত্রের অধিকারিণী, অনুগত, পর্দাশীলা, দানশীলা, ছালাত আদায়কারিণী, ছিয়াম পালনকারিণী ইত্যাদি। এক কথায় যার মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ রয়েছে সেই হচ্ছে প্রকৃত ভাল নারী। কেননা আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا.
‘প্রকৃত পক্ষে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে এক সর্বোত্তম আদর্শ। এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে, আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি আশাবাদী এবং খুব বেশি বেশি আললাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ২১)।
স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা যরূরী। স্ত্রীর ন্যায় সঙ্গতভাবে স্বামীর খিদমত করবে। রান্না বান্না থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করবে। যদি স্ত্রী স্বামীর খিদমত না করে তাহ’লে স্বামী তার স্ত্রীকে খিদমতে বাধ্য করবে। আর এটাই হ’ল তার কর্তৃত্ব।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে । আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২২৮)। অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি অধিকার রাখে। যা পরস্পরকে আদায় করা কর্তব্য। তবে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللهَ كَانَ عَلِيّاً كَبِيرا.
‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ্ একের উপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সেমতে সৎস্ত্রীগণ হয় আনুগত্যশীল এবং আল্লাহ্ তা‘আলা যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন তা হেফাযত করেন। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা রয়েছে তাদের সদুপদেশ দাও। তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবার শ্রেষ্ঠ’ (নিসা ৩৪)।
অত্র আয়াত দু’টিতে স্বামী-স্ত্রীর পার্থক্য এবং তাদের পারস্পরিক অধিকার যথাযথভাবে উল্লেখ হয়েছে। তাদের কর্তব্য এবং সেগুলির স্তর নির্ণয় সম্পর্কে একটি শারঈ মূলনীতি হিসাবে গণ্য। নারীদের উপর যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা একান্ত যরূরী, তেমনিভাবে পুরুষদের উপরও নারীদের অধিকার রয়েছে, যা প্রদান করা যরূরী। তবে পুরুষের মর্যাদা নারীদের তুলনায় বেশি। দু’টি ন্যায়সঙ্গত ও তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই পুরুষদেরকে নারীদের উপর পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রথমতঃ পুরুষকে তার জ্ঞানৈশ্বর্য ও পরিপূর্ণ কর্মক্ষমতার কারণে নারী জাতির উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যা অর্জন করা নারী জাতির পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ নারীর যাবতীয় প্রয়োজন পুরুষেরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা মিটিয়ে থাকে। প্রথম কারণটি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ও মানুষের নিজস্ব ক্ষমতা বহির্ভূত। আর দ্বিতীয় কারণটি নিজের উপার্জিত ও ক্ষমতাভিত্তিক।
পারিবারিক জীবনে যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশংকা দেখা দেয়, তাহ’লে প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধনের জন্য নরমভাবে তাদের বুঝাবে। যদি তাতে বিরত না হয়, তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের শয্যা পৃথক করে দিবে। যাতে এই বিচ্ছিন্নতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। বিচ্ছিন্নতা শুধু শয্যাতেই হবে, বাড়ি ও থাকার ঘর পৃথক করতে হবে না। কারণ তাতে তার অনুতাপ বেশি হবে। এতে সংশোধন না হ’লে প্রহারের কথা আল্লাহ্ তা’আলা উল্লেখ করেছেন।