অন্য এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন,
عَلَيْكُمْ بِالْإَبْكَارِ فَإِنَّهُنَّ أَعْذَبُ أَفْوَاهًا وَأَنْتَقُ أَرْحَامًا وَأَرْضَى بِالْيَسِيْرِ
‘তোমরা কুমারীদের বিবাহ কর। কেননা তাদের মুখ বেশি মিষ্টি, তারা অধিক গর্ভধারিণী এবং অল্পে তুষ্ট’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬২৩, ১৯৫৭)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, (১) তালাকপ্রাপ্তা নারীর চেয়ে কুমারী নারীকে বিবাহ করা ভাল। স্বামীর নিকট কুমারী স্ত্রী হিসাবে থাকা যরূরী। এ বাণী দ্বারা আরো প্রতীয়মান হয় যে, ‘চুন থেকে পান খসলেই’ অর্থাৎ একটু অসুবিধা হ’লেই প্রথম স্বামীর ঘর-সংসার ছেড়ে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা শোভনীয় নয়। যদিও তা শরী‘আতে জায়েয। (২) অধিক সন্তান প্রসব করতে হবে। (৩) স্বামীর সামর্থ অনুসারে সামান্য কোন জিনিসে তুষ্ট থেকে স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। আর এগুলি ভাল নারীরা ছাড়া অন্যের পক্ষে অসম্ভব।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে নারীকে বিবাহ করা হয় : (১) তার সম্পদ (২) বংশ (৩) সৌন্দর্য ও (৪) ধার্মিকতা। তুমি শুধুমাত্র ধার্মিকতার প্রতি লক্ষ্য কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮২; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৪৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) শুধুমাত্র ধার্মিক পর্দানশীল মেয়েকে বিবাহ করতে বলেছেন। বাকী গুণগুলি থাকলে ভাল, না থাকলে কোন দোষ নেই।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا كُلَّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ পৃথিবী সম্পদ। আর পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হচ্ছে সৎ চরিত্রবান নারী’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৩)।
ভাল নারীর একটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَيْسَ لِلنِّسَاءِ وَسْطُ الطَّرِيْقِ
‘নারীরা রাস্তার মধ্য দিয়ে চলাচল করবে না’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৫৬)। অত্র হাদীছে ভাল নারীদের রাস্তায় চলার আদর্শ বর্ণিত হয়েছে। রাস্তায় চলার ব্যাপারে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা রাস্তার মধ্যস্থল দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে চলবে না। দৃষ্টি নত করে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলাই হচ্ছে ভাল নারীর বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلاَيُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّمَاظَهَرَمِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّلِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْابَآءِ بُعْوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَائِهِنَّ اَوْاَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْاِخَوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اَخَوَتِهِنَّ اَوْنِسَائِهِنَّ اَوْمَامَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِالتَّبِعِيْنَا غَيْرِاُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِالطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلَى عَوْرَتِ النَّسَاءِ وَلاَ يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَايُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّط وَتُوْبُوْآاِلَى اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-
‘আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, যা প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়নাকে তাদের বুকের উপর দিয়ে পেচিয়ে রাখে’ তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের আবরণ প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ৩১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর। প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন কর না’ (আহযাব ৩৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, اَلْحَيَاءُ مِنَ الِإيْمَانِ وَالْإِيْمَانُ فِي الْجَنَّةِ ‘লজ্জা হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম’ (মিশকাত হা/৫০৭৭)।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহিলাদেরকে নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে। প্রয়োজন বশত যদি তাদেরকে বাইরে যেতেই হয় তাহ’লে তাদেরকে পূর্ণ পর্দা করে যেতে হবে। মূলতঃ পর্দাই হচ্ছে মহিলাদের জন্য এক শ্রেষ্ঠ গুণ। কারণ যাদের পর্দা নেই তাদের লজ্জা-শরম নেই। আর যাদের লজ্জা নেই ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি ভালবাসা তাদের নিকট হ’তে দূরে সরে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনা মহিলার জন্য কুরআন-হাদীছ অনুসারে পর্দা করা যরূরী এবং লোক দেখানো পর্দা পরিহার করা আবশ্যক।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَنْظُرُ اللهُ إِلى اِمْرَأةٍ لاَ تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا وَهِيَ لاَ تَسْتَغْنيِ عَنْهُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সে মহিলার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর শুকরিয়া আদায় করে না, আর সে স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ণ মনে করে না’ (ত্বাবারাণী, কাবায়ির পৃঃ ২৯৩)।
অত্র হাদীছে মহিলাদের দু’টি দোষের কথা বলা হয়েছে। (১) স্বামীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করা (২) স্বামীকে নিজের জন্য যথেষ্ট মনে না করা। মুসলিম মহিলাদের জন্য উক্ত দোষ দু’টি থেকে বেঁচে থাকা অতীব যরূরী। কেননা যে কারণে মহিলারা বেশি বেশি জাহান্নামে যাবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮২)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ مَسْعُوْدٍ لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ تَعَالَى.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্ তা‘আলা ঐসব নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে দেহে উল্কি (সুচিবিদ্ধ করে চিত্র অংকন) করে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নেয়। যারা ভ্রূ উপড়িয়ে চিকন করে, যারা দাঁত সমূহকে শানিত ও সরু বানায়। কারণ তারা আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টির বিকৃতি ঘটায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩১)।