উপদেশ ১২. তাওহীদ বনাম শিরক আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ عَدْوَى وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وفي رواية ولا نَوْءَ ولا صَفَرَ ولا غُولَ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দীন ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, পেঁচা পাখির ডাকের মন্দ প্রতিক্রিয়া, পেটে পীড়াদায়ক সাপ, নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ভুত বা দ্বৈত বলে কিছু নেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৭৮-৪৫৭৯ বঙ্গানুবাদ ৮ম খন্ড, হা/৪৩৭৬-৭৭ ‘শুভ ও অশুভ লক্ষণ’ অনুচ্ছেদ)।

عن عبد الله بن مسعود عن رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال الطَيْرَةُ شِرْكٌ قاله ثَلاَثًا

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অশুভ বা কুলক্ষণ ফল গ্রহণ করা শির্কী কাজ। কথাটি তিনি তিনবার বললেন (আবূদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫৮৪ বঙ্গানুবাদ ৮ম খন্ড হা/৪৩৮২)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ مِنْ حَاجَةٍ فَقَدْ أَشْرَكَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا كَفَّارَةُ ذَلِكَ قَالَ أَنْ يَقُولَ أَحَدُهُمْ اللهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ.

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, কুলক্ষণ বা অশুভ ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলত শির্ক করল। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এর কাফ্ফারা কী? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা এ দো‘আ পড়- আল্লাহুম্মা হতে গায়রুকা পর্যন্ত। হে আল্লাহ! তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোন মঙ্গল নেই। তোমার অশুভ ছাড়া কোন অশুভ নেই এবং তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই (আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৫, ৩/৫৪ পৃষ্ঠা)।

কুলক্ষণ বা অশুভ ফলগ্রহণ করা শিরক। যেমন, পাখি উড়িয়ে অথবা কোন কিছু দেখে ও শুনে অশুভ ফল গ্রহণ করা। আর তা হচ্ছে মানুষ দীনী বা দুনিয়াবী কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন সে এমন কিছু দেখতে পায় বা শুনতে পায় যা তার কাছে অপছন্দনীয়। তখন সে কাজটি পরিত্যাগ করে বা করতে সাহস করে না। কারণ তার মধ্যে ইসলাম বিরোধী আকিদা সৃষ্টি হয় এবং সে শির্কে পতিত হয়। সাথে সাথে এ রকম অশুভ ফল মানুষের বুদ্ধি বিবেক নষ্ট করে দেয়। অসংখ্য দৃশ্য, কথা ও কর্মে মানুষের অশুভ ধারণা হয়। যেমন- রাস্তায় বের হয়ে নারীদের সাথে দেখা হলে উদ্দেশ্য হাছিল হয় না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পুনরায় ফিরে গেলে উদ্দেশ্য অর্জন হয় না। পিছন হতে ডাকলে যাত্রা সুফল হয় না। রাতে ঘরের আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে বাইরে ফেলা যায় না। রাতে মানুষকে টাকা কর্জ দেয়া যায় না। রাতে ও সকালে বাকী বিক্রি করা যায় না। রাতে গাছের ফল পাড়া যায় না, রাতে লোহা নিয়ে বের না হলে বাচ্চাকে চোরা চুন্নি পাখিতে ধরে। জামা কলা খেলে জমজ সন্তান হয়। গরুকে লাথি মারা যায় না। জুতা পায়ে দিয়ে শস্য ক্ষেতে বা শস্যের উপর যাওয়া যায় না। ঘরের উপর কাক ডাকলে কুটুম্ব আসে। হাত হতে গ্লাস পড়লে কুটুম্ব আসে। ছেলের মাথায় ঝাড়ু লাগানো যায় না, ছেলের মাথায় মায়ের আচল লাগানো যায় না। স্বামীর নাম ধরে ডাকা যায় না ইত্যাদি।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنْ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ وفي روايةٍ : فَاَنَا مِنْهُ بَرِيٌ هُوَ الَّذِيْ عَمَلَهُ.

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি অংশীদারদের অংশীদারিত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আমি ঐ অংশীদারকেও অংশিদারিকে প্রত্যাখ্যান করি’।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমি ঐ ব্যক্তির কর্ম হতে মুক্ত (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩১৫ বঙ্গানুবাদ ৯ম খন্ড হা/৫০৮৪)।

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيٍّ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تَذَاكَرُ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ فَقَالَ اَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِيْ مِنَ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ فَقُلْنَا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ الشِرْكُ الخَفْيِ اَنْ يَقُوْمَ الرَّجُلُ فَيُصَلِّيَ فَيُرِيْدُ صَلاَتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظْرِ رَجُلٍ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করছিলাম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না? যে বিষয়টি আমার কাছে দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? ছাহাবীগণ বললেন, জ্বি হাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তা হচ্ছে গোপন শির্ক। (আর এর উদাহরণ হচ্ছে) একজন মানুষ ছালাতে দাঁড়িয়ে এই খেয়ালে ছালাত আদায় করে যে, কোন মানুষ তার ছালাত আদায় করা দেখছে’ (ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৫৩৩৩ বঙ্গানুবাদ ৯ম খন্ড হা/৫১০১)। আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেছেন।

মানুষের প্রশংসা এবং সম্মান অর্জনের জন্য কোন আমল করা। অথবা কেবলমাত্র পার্থিব কোন স্বার্থের জন্য কাজ করা যা মানুষের খুলুছিয়াত এবং তাওহীদকে কলুষিত করে। লোক দেখানো, সুনাম অর্জন, নেতৃত্ব দান, দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়গুলোর কোন একটি আল্লাহর ইবাদতের দ্বারা আশা করা শির্ক।