عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم قَالَ : إِذَا نُوْدِيَ بِالصَّلاَةِ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَاسْتُجِيْبَ الدُّعَاءُ-
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন ছালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয়’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৩১, ১৪১৪)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে ছালাতের জন্য আযান দেয়া হলে আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে যায় এবং এ সময় দো‘আ কবুল করা হয়। এজন্য আযান শেষে মনোযোগ সহকারে আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে দো‘আ করা উচিত।
عَنْ مَكْحُوْلٍ عَنِ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اُطْلُبُوْا إِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ إِلْتِقَاءِ الْجُيُوْشِ وَإِقَامَةِ الصَّلاَةِ وَنُزُوْلِ الْمَطَرِ-
মাকহূল (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা দো‘আ কবুলের সময় খুঁজে বের করে দো‘আ কর (১) যুদ্ধের সময় দো‘আ কবুল হয় (২) ছালাতের জন্য এক্বামত দেয়ার সময় দো‘আ কবুল হয় (৩) বৃষ্টি বর্ষণের সময় দো‘আ কবুল হয়’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৪১, ১৪৬৯)। এই সময়গুলিতে দো‘আ করা উচিত। বিশেষ করে আযান ও এক্বামতের সময় মুয়াযযিন ও শ্রোতার দো‘আ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوْا، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لاَسْتَبَقُوْا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি মানুষ জানত আযান দেয়া এবং ছালাত আদায়ের জন্য প্রথম সারিতে দাঁড়ানোর মধ্যে কি নেকী রয়েছে, তাহলে লটারী করা ব্যতীত তাদের কোন উপায় থাকত না। আর যদি তারা জানত প্রথম সময়ে ছালাত আদায় করাতে কি নেকী রয়েছে, তাহলে তারা অন্যের আগে পৌঁছার আপ্রাণ চেষ্ট করত। আর যদি তারা জানত এশা ও ফজর ছালাতের মধ্যে কি নেকী রয়েছে, তাহলে তারা এই ছালাত আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৫৭৯)।
অত্র হাদীছে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি খুব গুরুত্ব পেশ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মানুষ যদি জানত আযান দেয়াতে কি নেকী রয়েছে, তাহলে সবাই আযান দিতে চাইত। অতঃপর লটারী দেয়া ব্যতীত কোন উপায় থাকত না।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلاَةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطٌ حَتَّى لاَ يَسْمَعَ التَّأْذِيْنَ، فَإِذَا قُضِيَ النِّدَاءُ أَقْبَلَ، حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ بِالصَّلاَةِ أَدْبَرَ، حَتَّى إِذَا قُضِيَ التَّثْوِيْبُ أَقْبَلَ، حَتَّى يَخْطُرَ بَيْنَ الْمَرْءِ وَنَفْسِهِ، يَقُوْلُ اذْكُرْ كَذَا، اذْكُرْ كَذَا، لِمَا لَمْ يَكُنْ يَذْكُرُ؛ حَتَّى يَظَلَّ الرَّجُلُ لاَ يَدْرِيْ كَمْ صَلَّى-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন ছালাতের জন্য আযান দেয়া হয়, শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে যাতে সে আযান শুনতে না পায়। অতঃপর যখন আযান শেষ হয়ে যায়, সে ফিরে আসে। আবার যখন এক্বামত দেয়া হয় সে পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে এবং যখন এক্বামত শেষ হয়ে যায় পুনরায় ফিরে আসে ও মানুষের অন্তরে খটকা সৃষ্টি করতে থাকে। সে বলে অমুক বিষয় স্মরণ কর, অমুক বিষয় স্মরণ কর, যে সকল বিষয় তার স্মরণ ছিল না। অবশেষে মানুষ এমন হয়ে যায় যে, সে বলতে পারে না, কত রাক‘আত ছালাত আদায় করেছে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৫৫; আবু দাউদ হা/৮৬৯; নাসাঈ হা/১২৩৬)।
আযান এমন একটি বিশেষ ইবাদত যা আরম্ভ হলে শয়তান ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে থাকে। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, সে আযান শুনে মদীনা থেকে ৩৬ মাঈল দূরে রাওহা নামক স্থানে পালিয়ে যায়। আযানের মত আর কোন ইবাদত নেই, যা শুরু হলে শয়তান ভয়ে পালাতে থাকে। আযানের শব্দ তার নিকট খুব ভারী বোধ হয় এবং তাতে সে বাতকর্ম করতে থাকে। কাজেই প্রত্যেক মুছল্লীর জন্য যরূরী কর্তব্য আযানের সময় হওয়ার সাথে সাথে আযান দেয়ার জন্য চরম আগ্রহী হওয়া। শ্রোতার জন্য অবশ্য কর্তব্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় জান্নাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে আগ্রহ সহকারে আযানের জওয়াব দেয়া। আমাদের দেশের মুছল্লীরা আযান ও এক্বামতের জওয়াব দেওয়ার ব্যাপারে খুব অমনোযোগী। প্রকাশ থাকে যে, ‘হাইয়্যা আলা’ দ্বয় ব্যতীত আযান ও এক্বামতের জওয়াব দেয়ার ক্ষেত্রে আযানের শব্দগুলিই হুবহু উচ্চারণ করতে হবে। এক্বামতে أَقَامَهَا اللهُ وَأَدَمَهَا বলা যাবে না। তেমনি ফজরের আযানে صَدَّقْتَ وَبَرَكْتَ বলা যাবে না। আযানের দো‘আয় اَلدَّرَجَةَ الرَّفِيْعَةَ ও اِنَّكَ لاَتُخْلِفُ الْمِيْعَادَ বলা যাবে না। এসকল অতিরিক্ত শব্দ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলি জাল ও যঈফ।