উপদেশ ৮. ফরয ছালাতের ফযীলত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ : صَلُّوْا خَمْسَكُمْ، وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ، تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ-

আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের প্রতি নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত কায়েম কর, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর, তোমাদের মালের যাকাত প্রদান কর এবং তোমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যা আদেশ করেন তার আনুগত্য কর। তাহলে তোমরা ইচ্ছা মত তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’ (আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/ ৫৭১; বাংলা মিশকাত হা/৫২৫)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلاَةَ يَوْمًا، فَقَالَ: مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ تَكُنْ لَهُ نُوْرًا، وَلاَ بُرْهَانًا، وَلاَ نَجَاةً، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ، وَفِرْعَوْنَ، وَهَامَانَ، وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রাঃ) হতে বর্ণিত একদা নবী করীম (ছাঃ) ছালাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বললেন, যে ব্যক্তি সঠিক নিয়মে ও সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করবে, ক্বিয়ামতের দিন ছালাত তার জন্য আলো, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে এভাবে ছালাত আদায় করবে না, ছালাত তার জন্য আলো, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে কারুণ, ফের‘আউন, হামান ও উবাই ইবনু খালফের সাথে থাকবে’ (আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৭৮; বাংলা মিশকাত হা/৫৩১)

ব্যাখ্যা : হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষ যদি ছালাতের নিয়ম-কানূন সঠিকভাবে মেনে সঠিক সময়ে আদায় করে, তাহলে ছালাত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন বিশেষ আলো হিসাবে গণ্য হবে। ছালাত তার জন্য প্রমাণ স্বরূপ হবে। ছালাত তার জন্য মুক্তির উপায় হবে। অন্যথা সে ছালাত আদায় করা সত্ত্বেও যথাযথ শাস্তি ভোগের জন্য জাহান্নামে যাবে। যেখানে সাথী হিসাবে ফের‘আউন, হামান, কারুণ ও উবাই ইবনু খালাফের সাথী হিসাবে বড় অপরাধী লোকেরা থাকবে। আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সঠিকভাবে ছালাত আদায়ের তাওফীক্ব দান কর।

عَنْ عُمَارَةَ بْنِ رُؤَيْبَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَنْ يَّلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا-

ওমারা ইবনু রুআইবা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কখনও এমন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না যে, ফজর ও আছরের ছালাত আদায় করেছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৫)

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الأشْعَرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ-

আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত আদায় করল সে জান্নাতে যাবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৫; বাংলা মিশকাত হা/৫৭৬)

অত্র হাদীছে ফজর ও আছরের ছালাতের বিশেষ গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য ছালাত সহ যারা ফজর ও আছরের ছালাত সঠিকভাবে আদায় করবে, তারা কখনও জাহান্নামে যাবে না; বরং তাদের ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوْا، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي التَّهْجِيْرِ لاَسْتَبَقُوْا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি মানুষ জানত আযান দেয়া এবং ছালাত আদায়ের জন্য প্রথম সারিতে দাঁড়ানোর মধ্যে কি নেকী রয়েছে, তাহলে লটারী করা ব্যতীত তাদের কোন উপায় থাকত না। আর যদি তারা জানত প্রথম সময়ে ছালাত আদায় করাতে কি নেকী রয়েছে, তাহলে তারা অন্যের আগে পৌঁছার আপ্রাণ চেষ্টা করত। আর যদি তারা জানত এশা ও ফজর ছালাতের মধ্যে কি নেকী রয়েছে, তাহলে তারা এই ছালাত আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৮; বাংলা মিশকাত হা/৫৭৯)

অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ফজর ও এশার ছালাতে এত অধিক ছওয়াব নিহিত থাকার কথা বলেছেন যে, মানুষ যদি ছওয়াবের কথা জানত তাহলে ভাল মানুষতো যেতই অক্ষম মানুষও হামাগুড়ি দিয়ে হলেও যেত এবং এ ছওয়াব অর্জন করত।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِيْنَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুনাফেকদের উপর সবচেয়ে কঠিন ছালাত হচ্ছে ফজর ও এশা। যদি তারা জানত এ ফজর ও এশা ছালাতে কি নেকী রয়েছে, তাহলে তারা এ ছালাত আদায় করতে আসত হামাগুড়ি দিয়ে হলেও’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৯; বাংলা মিশকাত হা/৫৮০)

عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ-

ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে এশার ছালাত জাম‘আতে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত্রি ছালাত আদায় করল। আর যে ফজরের ছালাত জাম‘আতে আদায় করল সে যেন পূর্ণ রাত্রি ছালাত আদায় করল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৩০; বাংলা মিশকাত হা/৫৮১)। এশা এবং ফজরের ছালাতে কি রয়েছে তার কিছু প্রমাণ অত্র হাদীছে পাওয়া যায়। এশার ছালাত জামা‘আতে আদায় করার পর ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করলে পূর্ণ রাত্রি ছালাত আদায় করে যা ছওয়াব হবে অনুরূপ ছওয়াব হবে। এটা আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। আল্লাহ বান্দার উপর খুশি হলে এরূপ অনুগ্রহ করে থাকেন।