উপদেশ ৭. নফল ছালাতের ফযীলত আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إنَّ فِي اللَّيْلِ لَسَاعَةً، لاَ يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ الله تَعَالَى خَيْراً مِّنْ أمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، إِلاَّ أعْطَاهُ إيَّاهُ، وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ-

জাবির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছিলেন, ‘রাত্রের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মুসলমান সে সময় লাভ করতে পারে এবং আল্লাহর নিকট ইকালের কোন কল্যাণ চায় আল্লাহ তাকে তা দান করেন। আর এই সময়টি প্রত্যেক রাতেই রয়েছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৪; বাংলা মিশকাত হা/১১৫৬)। ব্যাখ্যা : এই বিশেষ মুহূর্ত কোন রাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রত্যেক রাতেই ঘটে। এসময় সবার অনুসন্ধান করা উচিত।

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأَبُ الصَّالِحِيْنَ قَبْلَكُمْ وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ وَمُكَفِّرَةٌ لِّلسَّيِّئَاتِ وَمَنْهَاةٌ عَنِ الْإِثْمِ-

আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাতে ছালাত আদায় করা উচিত। রাতে ইবাদত করা হচ্ছে তোমাদের পূর্ববর্তী নেক লোকদের নিয়ম। তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের পন্থা, গুনাহ মাফের উপায় এবং অপরাধ, অশ্লীলতা হতে বিরত থাকার মাধ্যম’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১২২৭; বাংলা মিশকাত হা/১১৫৯)

ব্যাখ্যা : রাসূল (ছাঃ) মানুষকে রাতে ইবাদত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাতে ইবাদত প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের বড় মাধ্যম। পাপ মোচনের বড় উপায়। অপরাধ, অশ্লীলতা হতে বিরত থাকার বড় মাধ্যম। রাতে ইবাদত করা পূর্ববর্তী নেক লোকদের নিয়ম।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى ثُمَّ أَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلَّتْ فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِيْ وَجْهِهَا الْمَاءَ وَرَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ ثُمَّ أَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلَّى فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ-

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন যে ব্যক্তি রাতে উঠে ছালাত আদায় করে, স্বীয় স্ত্রীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহলে তার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়। অনুরূপ আল্লাহ দয়া করেন সেই স্ত্রী লোকের প্রতি যে রাতে উঠে ছালাত আদায় করে। নিজের স্বামীকেও জাগায় এবং সেও ছালাত আদায় করে। আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৩০)

ব্যাখ্যা : যে সব নারী-পুরুষ রাতে উঠে ইবাদত করে এবং স্ত্রী বা স্বামীকে ইবাদত করার জন্য জাগ্রত করে, তাদের প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন। তাদের প্রতি রাযী-খুশি থাকেন।

عَنْ أَبِيْ مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدَّهَا اللهُ لِمَنْ أَلَانَ الْكَلَامَ، وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَتَابَعَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ-

আবু মালিক আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে এমন মসৃণ প্রাসাদ রয়েছে যার বাহিরের জিনিস সমূহ ভিতর হতে এবং ভিতরের জিনিস সমূহ বাহির হতে দেখা যায়। সেসব প্রাসাদ আল্লাহ এমন ব্যক্তির জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন যে ব্যক্তি মানুষের সাথে নরম কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খেতে দেয, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছালাত আদায় করে’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/১২৩২; বাংলা মিশকাত হা/১১৬৪)

ব্যাখ্যা : এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় চারটি কাজের বিনিময়ে আল্লাহ মানুষের জন্য জান্নাতে উন্নতমানের প্রাসাদের ব্যবস্থা করেছেন। ১. শান্ত মেজাযে ধীর কণ্ঠে নরম ভাষায় কথা বলা। ২. ক্ষুধার্তকে খাদ্য প্রদান করা। ৩. নিয়মিত বেশী বেশী ছিয়াম পালন করা। ৪. রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছালাত আদায় করা। এসময় আল্লাহ মানুষের প্রার্থনা কবুল করেন এবং এসময় ইবাদত করলে আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ وَأَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالاَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَيْقَظَ الرَّجُلُ أَهْلَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّيَا أَوْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيْعًا كُتِبَا فِي الذَّاكِرِيْنَ وَالذَّاكِرَاتِ-

আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি রাতে স্বীয় স্ত্রীকে জাগায়, অতঃপর উভয়ে পৃথকভাবে অথবা একসাথে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণকারী ও স্মরণকারিণীদের অন্তর্ভুক্ত হয়’ (ইবনু মাজাহ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১২৩৮; বাংলা মিশকাত হা/১১৬৯)

ব্যাখ্যা : যে স্বামী-স্ত্রী রাতে উঠে একসাথে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ তাদেরকে যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন।

যেসব ছালাত আদায় করলে খুব বেশী নেকী পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাশতের ছালাত। সূর্যোদয়ের পর হতে সূর্য স্থির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে যোহা বা চাশত বলে। পূর্ববর্তী নবীগণ এই সময়ে ছালাত আদায় করতেন। বেশী কল্যাণের আশায় এই ছালাত আদায় করা উচিত।

عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ : فَكُلُّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيْدةٍ صَدَقَة، وَكُلُّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقةٌ، وَنَهيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى-

আবু যার গিফারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সকাল হওয়া মাত্রই তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গ্রন্থির জন্য একটি ছাদাকা করা আবশ্যক। তবে (মনে রেখো) তোমাদের প্রত্যেক তাসবীহ একটি ছাদাকা, প্রত্যেক তাহমীদ একটি ছাদাকা, প্রত্যেক তাহলীল একটি ছাদাকা, প্রত্যেক তাকবীর একটি ছাদাকা এবং সৎকাজের আদেশ একটি ছাদাকা এবং অসৎ কাজে নিষেধ একটি ছাদাকা। অবশ্য এশরাক বা চাশতের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা এসবের পরিবর্তে যথেষ্ট’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১১; বাংলা মিশকাত হা/১২৩৬)

ব্যাখ্যা : আমাদের শরীরের প্রত্যেক অণু-পরমাণুর জন্য একটা দান করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া করে নিম্নের শব্দগুলিকে দান স্বরূপ প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাললাহ, আল্লাহু আকবার। অতএব এই শব্দগুলি বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তবে চাশতের ছালাত শুকরিয়া আদায়ের সর্বোত্তম মাধ্যম। এসব তাসবীহ পাঠ করে যত নেকী পাওয়া যাবে চাশতের দুরাক’আত ছালাত আদায় করলে তত নেকী পাওয়া যাবে।