রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাণী দ্বারা বুঝা যায় যে, সবচেয়ে ভাল মানুষ ঐ ব্যক্তি যে অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায়। ক্ষমা প্রার্থনা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি তত বেশী খুশী হন না। এজন্য নবী করীম (ছাঃ) দিনে প্রায় সত্তর বারেরও বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা; সম্ভবতঃ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলোকে মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেই দিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে অপদসত্ম করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সন্মুখে ও ডান পার্শ্বে ধাবিত হবে, তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন। আর আমাদের ক্ষমা করুন। আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান (তাহরীম ৮)।
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ.
‘সুতরাং তুমি জান যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোন মা‘বূদ নেই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের পাপের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্বন্ধে অবগত আছেন’ (মুহাম্মাদ ১৯)।
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ.
তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপানি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ততদের অন্ততর্ভুক্ত হব (আ‘রাফ ২৩)।
قَالَ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
তিনি বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু (কাছাছ ১৬)।
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ.
বল, হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই সবচেয়ে বেশী দয়ালু (মুমিনূন ১১৮)।
এমর্মে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم كُلُّ بَنِيْ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ اَلْخَطَّائِيْنَ اَلتَّوَّابُوْنَ-
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধী। উত্তম অপরাধী তারাই যারা তওবা করে, ক্ষমা চায়’ (আবুদাউদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৪০; বাংলা মিশকাত হা/২২৩৭)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, সবচেয়ে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্রوَاللهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سبعينَ مرَّةًগ্ধ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে ৭০ বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)।
عَنِ الاَغَرِّ الْمُزَانِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ-
আগার মুযানী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে মানব মন্ডলী! আল্লাহর নিকট তওবা কর। আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিক তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫; বাংলা মিশকাত হা/২২১৭)। রাসূল (ছাঃ) এমন একজন নবী যার আগের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি দিনে ৭০ বারেরও বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন। তাহলে আমাদের কতবার ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন তা বিবেচনা করা উচিত।