উপদেশ ২. আল্লাহ ভরসা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ (حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ) قَالَهَا إِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ حِيْنَ أُلْقِيَ فِي النَّارِ-

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্ম বিধায়ক। একথা ইবরাহীম (আঃ) বলেন, যখন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়’ (বুখারী, রিয়াযুছ ছালেহীন, ১ম খন্ড, হা/৭৬)

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزِقْتُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا-

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথভাবে ভরসা কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ পাখিদের দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫০৬৯)। এ হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে যে, আল্লাহর উপর ভরসা করলে মানুষ সকল বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে এবং তাদের রিযিকের ব্যবস্থাও তিনি করে দেন।

عَنْ أَبِى بَكْرٍ رضى الله عنه قَالَ قُلْتُ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا فِى الْغَارِ لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيْهِ لأَبْصَرَنَا. فَقَالَ مَا ظَنُّكَ يَا أَبَا بَكْرٍ بِاثْنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا.

আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা যখন গর্তে আশ্রয় নিলাম। তখন আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, যদি কাফেররা তাদের পায়ের নিচের দিকে তাকায়, তাহলে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবু বকর! আপনি কি মনে করেন, তারা দু’জন? আল্লাহ তাদের তৃতীয়জন রয়েছেন’ (বুখারী হা/৩৬৫৩)। এ হাদীছ দ্বারা আমাদের নবীর আল্লাহর উপর ভরসার পরিমাণ অনুমান করা যায়। তিনি একেবারেই নিশ্চিত যে, শত্রু তাঁদেরকে দেখতে পাবে না। অথচ শত্রু তাঁদের মাথার উপরে রয়েছে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِى سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ، هُمُ الَّذِينَ لاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ.

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। আর এসব লোক তারাই যারা ঝাঁড়ফুঁক করে না। অশুভফল গ্রহণ করে না। যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৫)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم هَاجَرَ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بِسَارَةَ، فَدَخَلَ بِهَا قَرْيَةً فِيهَا مَلِكٌ مِنَ الْمُلُوكِ، أَوْ جَبَّارٌ مِنَ الْجَبَابِرَةِ، فَقِيلَ دَخَلَ إِبْرَاهِيمُ بِامْرَأَةٍ، هِىَ مِنْ أَحْسَنِ النِّسَاءِ. فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ، مَنْ هَذِهِ الَّتِى مَعَكَ قَالَ أُخْتِى. ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهَا، فَقَالَ لاَ تُكَذِّبِى حَدِيثِى فَإِنِّى أَخْبَرْتُهُمْ أَنَّكِ أُخْتِى، وَاللهِ إِنْ عَلَى الأَرْضِ مُؤْمِنٌ غَيْرِى وَغَيْرُكِ. فَأَرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ، فَقَامَ إِلَيْهَا، فَقَامَتْ تَوَضَّأُ وَتُصَلِّى فَقَالَتِ اللهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ وَأَحْصَنْتُ فَرْجِى، إِلاَّ عَلَى زَوْجِى فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَىَّ الْكَافِرَ. فَغُطَّ حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ. أَوْ فِى الثَّالِثَةِ، فَقَالَ وَاللهِ مَا أَرْسَلْتُمْ إِلَىَّ إِلاَّ شَيْطَانًا، ارْجِعُوهَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، وَأَعْطُوهَا آجَرَ. فَرَجَعَتْ إِلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَتْ أَشَعَرْتَ أَنَّ اللهَ كَبَتَ الْكَافِرَ وَأَخْدَمَ وَلِيدَةً.

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) একদা সারাকে সাথে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন যেখানে এক বাদশাহ ছিল। অথবা এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হল যে, ইবরাহীম নামক এক ব্যক্তি নারীদের মধ্যে সবচেয়ে পরমা সুন্দরী এক নারীকে নিয়ে আমাদের এখানে প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল। হে ইবরাহীম! তোমার সাথে এ নারী কে? তিনি বললেন, সে আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথায় আমাকে মিথ্যা প্রমাণ কর না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর কসম! দুনিয়াতে এখন তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ মুমিন নেই। (সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনি ভাই-বোন)। এরপর ইবরাহীম (আঃ) বাদশাহর নির্দেশে সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। এ সময় সারা ওযূ করে ছালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দো‘আ করলেন, اللهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي إِلَّا عَلَى زَوْجِي فَلَا تُسَلِّطْ عَلَيَّ هَذَا الْكَافِرَ ‘হে আল্লাহ! যদি আমি তোমার উপর এবং তোমার রাসূল ইবরাহীমের উপর ঈমান এনে থাকি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল মানুষ হতে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করে থাকি, তাহলে তুমি এ কাফেরকে আমার উপর জয়ী কর না’। তৎক্ষণাৎ বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে মাটির উপর পায়ের আঘাত করতে লাগল। তখন সারা বললেন, হে আল্লাহ! এ লোক যদি এভাবে মারা যায়, তাহলে লোকেরা বলবে স্ত্রী লোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে জ্ঞান ফিরে পেল। এরূপ অবস্থা তিনবার ঘটল। তারপর বাদশাহ বলল, আল্লাহর কসম! তোমরাতো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে ফিরে এসে বললেন, আপনি কি জানেন, আল্লাহ তা‘আলা কাফেরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে একজন দাসী হাদিয়া হিসাবে দিয়েছে (বুখারী হা/২২১৭)