রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য বলেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ لَمَّا بَعَثَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْيَمَنِ خَرَجَ مَعَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوْصِيْهِ وَمُعَاذٌ رَاكِبٌ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِيْ تَحْتَ رَاحِلَتِهِ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ يَا مُعَاذُ إِنَّكَ عَسَى أَنْ لاَ تَلْقَانِيْ بَعْدَ عَامِيْ هَذَا أَوْ لَعَلَّكَ أَنْ تَمُرَّ بِمَسْجِدِيْ أَوْ قَبْرِيْ فَبَكَى مُعَاذٌ جَشَعًا لِفِرَاقِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ نَحْوَ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُوْنَ مَنْ كَانُوْا وَحَيْثُ كَانُوْا-
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, যখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ইয়ামান পাঠান, তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য তার সাথে বের হলেন। মু‘আয সওয়ারীর উপরে আরোহন করেছিলেন এবং নবী করীম (ছাঃ) সওয়ারীর নীচে চলতেছিলেন। তিনি উপদেশ শেষে বললেন, মু‘আয! সম্ভবত এ বছরের পর তোমার সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হয়ে যাবে। মু‘আয (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর বিচ্ছিন্নতায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং মদীনার দিকে ফিরে দেখলেন। তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিরাই সবচেয়ে আমার নিকটে। তারা যেই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন’? (ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৪৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নবী করীম (ছাঃ) মু‘আয ইবনে জাবালকে অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। তার প্রতি শেষ উপদেশ ছিল পরহেযগার হওয়ার। তিনি পরহেযগার ব্যক্তিকে তাঁর সবচেয়ে নিকটে বলেছেন।
রাসূল (ছঃ) তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ)-কে তাক্বওয়ার উপদেশ দেন। এমর্মে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كُنَّ أَزْوَاجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَهُ لَمْ يُغَادِرْ مِنْهُنَّ وَاحِدَةً فَأَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِيْ مَا تُخْطِئُ مِشْيَتُهَا مِنْ مِشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَلَمَّا رَآهَا رَحَّبَ بِهَا فَقَالَ مَرْحَبًا بِابْنَتِي ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكَتْ بُكَاءً شَدِيدًا فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَضَحِكَتْ فَقُلْتُ لَهَا خَصَّكِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ نِسَائِهِ بِالسِّرَارِ ثُمَّ أَنْتِ تَبْكِيْنَ فَلَمَّا قَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلْتُهَا مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ مَا كُنْتُ أُفْشِي عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِرَّهُ قَالَتْ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لِي عَلَيْكِ مِنَ الْحَقِّ لَمَا حَدَّثْتِنِيْ مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ أَمَّا الْآنْ فَنَعَمْ أَمَّا حِيْنَ سَارَّنِيْ فِي الْمَرَّةِ الْأُوْلَى فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ جِبْرِيْلَ كَانَ يُعَارِضُهُ الْقُرْآنَ فِيْ كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ وَإِنَّهُ عَارَضَهُ الْآنْ مَرَّتَيْنِ وَإِنِّيْ لاَ أُرَى الْأَجَلَ إِلاَّ قَدْ اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِيْ فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أَنَا لَكِ قَالَتْ فَبَكَيْتُ بُكَائِي الَّذِيْ رَأَيْتِ فَلَمَّا رَأَى جَزَعِي سَارَّنِي الثَّانِيَةَ فَقَالَ يَا فَاطِمَةُ أَمَا تَرْضَيْ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ أَوْ سَيِّدَةَ نِسَاءِ هَذِهِ الْأُمَّةِ قَالَتْ فَضَحِكْتُ ضِحْكِي الَّذِيْ رَأَيْتِ-
আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সকল স্ত্রী একদা তাঁর নিকট ছিলাম। এ সময় ফাতিমা (রাঃ) আসলেন। তার চলার ভঙ্গি রাসূল (ছাঃ)-এর চলার ভঙ্গির সাথে স্পষ্ট মিল ছিল। যখন তিনি তাকে দেখলেন তখন বললেন, হে আমার কন্যা! তোমার আগমন মুবারক হোক। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) তাকে তাঁর ডানে অথবা বামে বসালেন। তারপর চুপে চুপে তাকে কিছু বললেন, এতে ফাতিমা ভীষণভাবে কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর যখন তার অস্থিরতা দেখলেন, তিনি পুনরায় তার কানে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন ফাতিমা হেসে উঠলেন। আমি তাকে বললাম, রাসূল (ছাঃ) তাঁর স্ত্রীদের মাঝে তোমাকে খাছ করে চুপে চুপে কিছু বললেন, তুমি এতে কেঁদে উঠলে। অতঃপর ভীতিকর কান্না শুনে দ্বিতীয়বার তার সাথে চুপে চুপে কথা বললেন, তখন ফাতিমা হেসে উঠলেন। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি ফাতিমাকে বললাম, নবী করীম (ছাঃ) তোমাকে কি বললেন? ফাতিমা বলল, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর গোপন কথা ফাঁস করব না। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) যখন ইন্তেকাল করলেন। তারপর আমি ফাতিমাকে বললাম, তোমার উপর আমার যে অধিকার রয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, রাসূল (ছাঃ) তোমাকে চুপে চুপে যা বলেছেন, তা আমাকে বল। ফাতিমা বলল, এখন সে কথাটি প্রকাশ করতে কোন আপত্তি নেই। প্রথম বার তিনি আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, জিবরাঈল প্রতিবছর আমার সামনে কুরআন একবার পেশ করেন। কিন্তু এবার তিনি দু’বার পেশ করেছেন। এতে আমি মনে করছি আমার মরণের সময় নিকটে চলে এসেছে। অতএব ফাতিমা তুমি আল্লাহকে ভয় কর, পরহেযগার হও এবং ধৈর্য ধারণ কর। আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রযাত্রী। একথা শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম। অতঃপর যখন তিনি আমার অস্থিরতা দেখলেন, তখন দ্বিতীয় বার আমাকে চুপে চুপে বললেন, ফাতিমা তুমি খুশী হবে না যে, তুমি মুমিন নারীদের সরদার অথবা এ উম্মতের নারীদের সরদার। তখন আমি হাসতে লাগলাম। যে হাসি আপনি দেখলেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৭৮)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করার জন্য আদেশ করেন।
ছাহাবীগণ উপদেশ চাইলে নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে তাক্বওয়াশীল হতে বলেন,
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَاَوْصِنَا فَقَالَ أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) আমাদের ছালাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ করে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন, যাতে চক্ষু সমূহ অশ্রু প্রবাহিত করল এবং অন্তর সমূহ ভীত-বিহক্ষল হল। এ সময়ে এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! এ মনে হচ্ছে বিদায় গ্রহণের শেষ উপদেশ। আমাদের আরও কিছু উপদেশ দিন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার, তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং নেতার কথা শুনতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি, নেতা বা ইমাম হাবশী গোলাম হলেও। আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অল্প দিনের মধ্যেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে শক্তভাবে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাহর বাইরে নতুন কথা হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’ (আবু দাউদ, মিশকাত হা/১৫৮)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সকল উপদেশের মূল হচ্ছে তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপদেশ প্রদান করা। তাক্বওয়া মানুষকে সকল প্রকার অপছন্দনীয় কথা ও কাজ হতে বিরত রাখতে পারে এবং তাক্বওয়া মানুষের সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে।