৩৩- মারওয়া পাহাড়ে শেষ চক্করকালে তিনি বললেন, হে লোক সকল!

«لَوْ أَنِّى اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِى مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ وَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْىٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً. »

‘আমি আগে যা করে এসেছি তা যদি আবার নতুন করে শুরু করার সুযোগ থাকত, তাহলে হাদী বা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসতাম না এবং হজকে উমরায় পরিণত করতাম। তোমাদের মধ্যে যার সাথে হাদী বা পশু নেই সে যেন হালাল হয়ে যায় এবং এটাকে উমরাতে পরিণত করে।’[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

«أَحِلُّوا مِنْ إِحْرَامِكُمْ فَطُوفُوا بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَقَصِّرُوا ثُمَّ أَقِيمُوا حَلاَلاً حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ فَأَهِلُّوا بِالْحَجِّ وَاجْعَلُوا الَّتِي قَدِمْتُمْ بِهَا مُتْعَةًً».

‘বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে তোমরা তোমাদের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাও এবং চুল ছোট করে ফেল। অতপর হালাল অবস্থায় অবস্থান কর। এমনভাবে যখন তারবিয়া দিবস (যিলহজের আট তারিখ) হবে, তোমরা হজের ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ কর। আর তোমরা যে হজের ইহরাম করে এসেছ, সেটাকে তামাত্তুতে পরিণত কর।[2]

৩৪- তখন সুরাকা ইবন মালিক ইবন জু‘ছুম মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের এই উমরায় রূপান্তর করে তামাত্তু করা কি শুধু এ বছরের জন্য নাকি সব সময়ের জন্য? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বললেন,

«دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِى الْحَجِّ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، لاَ بَلْ لأَبَدٍ أَبَدٍ، لاَ بَلْ لأَبَدٍ أَبَدٍ»

‘হজের ভেতরে উমরা কিয়ামত দিন পর্যন্ত প্রবিষ্ট হয়েছে, না বরং তা সবসময়ের জন্য, না বরং তা সবসময়ের জন্য’ এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন।’[3]

৩৫- সুরাকা ইবন মালিক রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদেরকে দীনের ব্যাখ্যা দিন, আমাদেরকে যেন এখনই সৃষ্টি করা হয়েছে (অর্থাৎ আমাদেরকে সদ্যভূমিষ্ট সন্তানের ন্যায় দীনের তালীম দিন)। আজকের আমল কিসের ওপর ভিত্তি করে? কলম যা লিখে শুকিয়ে গিয়েছে এবং তাকদীর যে বিষয়ে অবধারিত হয়ে গিয়েছে, তার ভিত্তিতে? না কি ভবিষ্যতের নতুন কোনো বিষয়ের ভিত রচিত হবে?[4] তিনি বললেন,

«لَا، بَل فيمَا جَفَّت به الأَقلاَم وَجَرَت به المَقَاديرُ.»

‘না, বরং যা লিখে কলম শুকিয়ে গিয়েছে এবং যে ব্যাপারে তাকদীর নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে, তা-ই তোমরা আমল করবে। তিনি বললেন, ‘তাহলে’[5] আর আমলের দরকার কি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ [لِمَا خُلِقَ لَهُ]»

‘তোমরা আমল করে যাও, তোমাদের কেউ যে জন্য সৃষ্ট হয়েছ তার জন্য সে কাজটা করা সহজ করে দেয়া হয়েছে[6]।’[7]

৩৬- জাবের রা. বলেন, ‘তিনি আমাদেরকে আদেশ দিলেন, আমরা হালাল হয়ে গেলে যেন হাদীর ব্যবস্থা করি।’[8] ‘আমাদের মধ্য থেকে এক উটে সাতজন অংশ নিতে পারে।’[9] ‘যার সাথে হাদী নেই সে যেন হজের সময়ে তিনদিন রোজা রাখে আর যখন নিজ পরিবারের নিকট অর্থাৎ দেশে ফিরে যাবে তখন যেন সাতদিন রোজা রাখে।’[10]

৩৭- ‘অতপর আমরা বললাম, কী হালাল হবে? তিনি বললেন,

الْحِلُّ كُلُّهُ.

‘সব কিছু হালাল হয়ে যাবে।’’[11]

৩৮- ‘বিষয়টি আমাদের কাছে কঠিন মনে হল এবং আমাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে গেল।’[12]

[1]. সাহাবাগণের মধ্যে যারা হাদী সঙ্গে নিয়ে আসেন নি রাসূল সা. তাঁদেরকে উমরা করে হালাল হতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তাদের হজ মুশরিকদের বিপরীত হয়। কেননা, মুশরিকরা মনে করতো হজের মাসসমূহে ওমরা পালন জঘন্যতম অপরাধ। (বুখারী : ৭২৩০)

[2]. বুখারী ও মুসলিম।

[3]. ইবন জারূদ, আল-মুনতাকা।

[4]. অর্থাৎ, আমাদের কর্মকান্ড কি আগেই নির্ধারিত নাকি আমরা সামনে যা করব সেটাই চূড়ান্ত?

[5]. মুসনাদে আহমদ।

[6]. অর্থাৎ তাকদীর যদি ভাল লিখা হয়ে থাকে, তাহলে ভাল কাজ করা তার জন্য সহজ হবে। আর যদি তাকদীরে খারাপ লিখা থাকে, তবে খারাপ কাজ করা তার জন্য সহজ করে দেয়া হবে।

[7]. মুসনাদে আহমদ।

[8]. মুসলিম, মুসনাদে আহমদ।

[9]. মুসনাদে আহমদ।

[10]. মুয়াত্তা, বায়হাকী।

[11]. মুসনাদে আহমদ, তাহাবী।

[12]. মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ।