ইহরাম বাঁধার মধ্য দিয়ে হজ ও উমরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ করা। হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন হজ বা উমরা কিংবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ওপর কতিপয় হালাল ও জায়েয বস্তুও হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই এ প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।
শুধু হজ বা উমরার সংকল্প করলেই কেউ মুহরিম হবে না। যদিও সে নিজ দেশ থেকে সফর শুরুর সময় হজের সংকল্প করে। তেমনি শুধু সুগন্ধি ত্যাগ অথবা তালবিয়া পাঠ আরম্ভ করলেই মুহরিম হবে না। এ জন্য বরং তাকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করার নিয়ত করতে হবে।
তাই হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি গোসল ও পবিত্রতা অর্জন সম্পন্ন করে ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন, অতঃপর হজ অথবা উমরা কিংবা উভয়টি শুরুর নিয়ত করবেন। যদি তামাত্তুকারী হন, তাহলে বলবেন,
لَبَّيْكَ عُمْرَةً. (লাব্বাইকা উম্রাতান)
তবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেবেন, এ উমরা থেকে হালাল হবার পর এ সফরেই হজের ইহরাম করব। যদি কিরানকারী হন, তাহলে বলবেন,
لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا. (লাব্বাইকা উমরাতান ও হাজ্জান)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,[1]
لَبَّيْكَ عُمْرَةً وَحَجًّا.
আর যদি ইফরাদকারী হন, তাহলে বলবেন,
لَبَّيْكَ َحَجًّا. (লাব্বাইকা হাজ্জান)
পক্ষান্তরে যদি উমরা পালনকারী হন, তাহলে বলবেন,
لَبَّيْكَ عُمْرَةً. (লাব্বাইকা উমরাতান)
এরপর তালবিয়া পাঠ করতে থাকবেন। হজ পালনকারী ব্যক্তি যদি অসুখ কিংবা শত্রু অথবা অন্য কোন কারণে হজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে শঙ্কা বোধ করেন, তাহলে নিজের ওপর শর্তারোপ করে বলবেন,
اللَّهُمَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي (আল্লাহুম্মা মাহিল্লী হাইছু হাবাসতানী)
‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যেখানে রুখে দেবেন, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।’[2] অথবা বলবে,
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، وَمَحِلِّي مِنَ الأَرْضِ حَيْثُ تَحْبِسُنِي.
(লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ওয়া মাহিল্লী মিনাল আরদি হাইছু তাহবিসুনী)
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, যেখানে তুমি আমাকে আটকে দেবে, সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।’[3] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুবা‘আ বিন্ত জুবায়ের রা. কে এমনই শিখিয়েছেন।
নাবালকের ইহরাম
মুহরিম ব্যক্তি যদি ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী ও বোধসম্পন্ন বালক হয়, তাহলে সে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিহার করে ইহরামের কাপড় পরিধান করে নিজেই ইহরাম বাঁধবে। হজ বা উমরার যেসব আমল সে নিজে করতে পারে, নিজে করবে। অবশিষ্টগুলো অভিভাবক তার পক্ষ থেকে আদায় করবেন।
বালক যদি ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী বা বোধসম্পন্ন না হয়, তাহলে অভিভাবক তার শরীর থেকে সেলাইযুক্ত কাপড় খুলে ইহরামের কাপড় পরিধান করাবেন। অতপর তার পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধবেন এবং তাকে নিয়ে হজের সকল আমল সম্পন্ন করবেন।
[2]. বুখারী : ৫০৮৯; মুসলিম : ১২০৭।
[3]. নাসাঈ : ২৭৬৬।