যদি কোন ব্যক্তির ওপর হজ ফরয ও উমরা ওয়াজিব হয়; কিন্তু সে সশরীরে তা আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোন ব্যক্তির হজ পালনকে বদলী হজ এবং উমরা আদায়কে বদলী উমরা বলা হয়। বেশ কিছু হাদীস দ্বারা বদলী হজ ও বদলী উমরার বিধান প্রমাণিত হয়। যেমন ইবন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, খাছআম গোত্রের জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ فِى الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِى شَيْخًا كَبِيرًا ، لاَ يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ ، أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ « نَعَمْ » . وَذَلِكَ فِى حَجَّةِ الْوَدَاعِ.
‘হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যা হজের ব্যাপারে ফরয করেছেন তা আমার পিতাকে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করে দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’, ঘটনাটি ছিল বিদায় হজের সময়কার।[1]
আবূ রাযীন বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, জনৈক ব্যক্তি বলল,
يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلَا الْعُمْرَةَ وَلَا الظَّعْنَ قَالَ حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ.
‘হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা একেবারে বৃদ্ধ। তিনি হজ-উমরা করার শক্তি রাখেন না। সওয়ারীর ওপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে তুমি হজ ও উমরা করো।’[2]
যার ওপর হজ ফরয তিনি যদি হজ না করেই মারা যান, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে হজ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বের করতে হবে। ইবন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
أَمَرَتْ امْرَأَةٌ سِنَانَ بْنَ سَلَمَةَ الْجُهَنِيَّ أَنْ يَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ أُمَّهَا مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجَّ أَفَيُجْزِئُ عَنْ أُمِّهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا قَالَ «نَعَمْ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا أَلَمْ يَكُنْ يُجْزِئُ عَنْهَا فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا».
‘সিনান ইবন আবদুল্লাহ জুহানির স্ত্রী তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে, তার মা মৃত্যু বরণ করেছেন অথচ তিনি হজ করতে পারেননি। তার জন্য কি তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ করা যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তার মায়ের ওপর কোন ঋণ থাকত, আর সে তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করত, তাহলে তার পক্ষ থেকে কি তা পরিশোধ হত না? তাই সে যেন তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ আদায় করে।’[3]
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে,
أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّى نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ ، فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ « نَعَمْ . حُجِّى عَنْهَا ، أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ ، فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ » .
‘জুহাইনা বংশের জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার মা হজের মানত করেছিলেন। তিনি সে হজ আদায়ের আগেই মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করবো?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। তোমার মায়ের যদি কোন ঋণ থাকতো তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? তুমি (তোমার মায়ের যিম্মায় থাকা) আল্লাহর হক পরিশোধ করো। কেননা আল্লাহর পাওনা অধিক পরিশোধযোগ্য।’[4]
বদলী হজের পূর্বে হজ করা জরুরী কি না?
বিশুদ্ধ মতানুসারে প্রতিনিধি হওয়ার আগে তার নিজের হজ করা জরুরী।[5] ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ مَنْ شُبْرُمَةُ قَالَ أَخٌ لِي أَوْ قَرِيبٌ لِي قَالَ حَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ قَالَ لَا قَالَ حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, শুবরুমার পক্ষ থেকে লাব্বাইক। তিনি বললেন, শুবরুমা কে? সে বলল, আমার ভাই, অথবা সে বলল আমার নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ করেছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, (আগে) নিজের হজ করো, তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ করবে।’[6]
বদলী হজ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য
১. বদলী হজে প্রেরণকারীর উচিত একজন সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে তার পক্ষে হজ করতে পাঠানো, যিনি হজ-উমরার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত এবং যার অন্তরে রয়েছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়।
২. বদলী হজকারির কর্তব্য আপন নিয়ত পরিশুদ্ধ করা এবং দুই উদ্দেশের যেকোন একটি সামনে রেখে বদলী হজ করতে যাওয়া:
ক. যে ব্যক্তি চায় মৃত ব্যক্তিকে তার হজের দায় থেকে মুক্ত করতে। আল্লাহর প্রাপ্য এই ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে তার উপকার করতে। সে এটা করবে হয়তো মৃত ব্যক্তির সাথে তার আত্মীয়তার সূত্রে কিংবা একজন মুসলমান ভাই হিসেবে। অতএব যতটুকু অর্থ খরচ হবে তা-ই গ্রহণ করবে। অবশিষ্টগুলো ফেরত দেবে। এটি একটি ইহসান বা সৎকর্ম আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলকে ভালোবাসেন।
খ. যে ব্যক্তি হজ করতে এবং হজের নিদর্শনাবলি দেখতে ভালোবাসে অথচ সে হজের খরচ যোগাতে অক্ষম। অতএব সে তার প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ নেবে এবং তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে হজের ফরয আদায় করবে।
মোটকথা বদলী হজকারী হজের জন্য টাকা নেবে। টাকার জন্য হজে যাবে না। আশা করা যায়, এ ব্যক্তি বিশাল নেকির অধিকারী হবে এবং তাকে প্রেরণকারীর মতো সেও পূর্ণ হজের সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْخَازِنُ الأَمِينُ الَّذي يُؤدِّي مَا أُمِرَ بِهِ طَيِّبَةً بِهِ نَفْسُهُ أَحَدُ الْمُتَصَدِّقَيْنِ».
‘যে বিশ্বস্ত কোষাধ্যক্ষ সন্তুষ্টচিত্তে তার দায়িত্ব পালন করে সেও একজন সদকাকারী।’[7]
আর বদলী হজের মাধ্যমে যার উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন করা, আখিরাতের আমলের উসিলায় দুনিয়া কামাই করা এবং দুনিয়াবী কোন স্বার্থ লাভ করা, সে আখিরাতে কিছুই পাবে না।[8]
হজের সামর্থ থাকা না থাকা সংক্রান্ত কয়েকটি মাসআলা
যে ব্যক্তি অতি বার্ধক্যে উপনীত অথবা যার সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন রোগের কারণে হজ-উমরা আদায়ে অক্ষম এ অবস্থায় যদি সে আর্থিকভাবে সক্ষম হয় তবে তার ওপর হজ ফরয হবে না।
যে বর্তমানে শারীরিকভাবে অক্ষম কিন্তু সে শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ছিল। তার ওপর হজ ফরয এবং তার কর্তব্য হল, তার পক্ষ থেকে হজ আদায়ের জন্য একজনকে প্রতিনিধি নিয়োগ করা।
যার ওপর হজ ফরয সে যদি হজ না করেই মারা যায় আর তার সম্পদ থাকে, তাহলে তার সে সম্পদ থেকে হজের খরচ পরিমাণ অর্থ নিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে তার বদলী হজ আদায় করাতে হবে।
মহিলাদের মধ্যে যারা হজ-উমরা সম্পাদন করেছে তারাও মহিলাদের পক্ষ থেকে বদলী হজ ও বদলী উমরা করতে পারবে।
মহিলারা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম হলেও কোন মাহরাম না থাকলে হজ করতে পারবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« لاَ تَحُجَّنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ ».
‘কোন মহিলা যেন তার মাহরামের সাথে ছাড়া হজ না করে।’[9]
বদলী হজ কোন্ প্রকারের হবে
তিন প্রকার হজের মধ্যে বদলী হজ কোন্ প্রকারের হবে, তা যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ করা হচ্ছে তিনি নির্ধারণ করে দেবেন। যদি ইফরাদ করতে বলেন, তাহলে ইফরাদ করতে হবে। যদি কিরান করতে বলেন, তাহলে কিরান করতে হবে। আর যদি তামাত্তু করতে বলেন, তাহলে তামাত্তু করতে হবে। এর অন্যথা করা যাবে না। মনে রাখবেন, বদলী হজ ইফরাদই হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে বলেছিলেন,
«حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ»
‘তোমার পিতার পক্ষ থেকে তুমি হজ ও উমরা করো।’[10] এই হাদীসে হজ ও উমরা উভয়টার কথাই আছে। এতে প্রমাণিত হয়, বদলী হজকারী তামাত্তু ও কিরান হজ করতে পারবে।
বদলী হজকারী ইফরাদ ভিন্ন অন্য কোন হজ করলে তার হজ হবে না- হাদীসে এমন কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। আর এর সপক্ষে কোন দলীল-প্রমাণও নেই। ‘হজ’ শব্দ উচ্চারণ করলে শুধুই ইফরাদ বোঝাবে, এর পেছনেও কোন প্রমাণ নেই। কেননা এক হাদীসে এসেছে,دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ ِفْي اْلحَجِّ (হজে উমরা প্রবিষ্ট হয়েছে)।[11] সুতরাং হজের সাথে উমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাস‘আম গোত্রের মহিলাকে তাঁর পিতার বদলী-হজ করার অনুমতি দেয়ার সময় যে বলেছেন, فَحُجِّيْ عَنْهُ ‘তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ করো’-এর দ্বারা তিনি উমরাবিহীন হজ বুঝিয়েছেন- এ কথার পেছনে কোন যুক্তি নেই।
বদলী-হজ কেবলই ইফরাদ হজ হতে হবে- ফিক্হশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবেও এ কথা লেখা নেই। ফিক্হশাস্ত্রের কিতাবে লেখা আছে, বদলী-হজ যার পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তিনি যে ধরনের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজই করতে হবে। যেমন প্রসিদ্ধ কিতাব বাদায়েউস সানায়ে গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে :
إذَا أَمَرَ بِحَجَّةٍ مُفْرَدَةٍ أَوْ بِعُمْرَةٍ مُفْرَدَةٍ فَقَرَنَ فَهُوَ مُخَالِفٌ ضَامِنٌ فِي قَوْلِ أَبِي حَنِيفَةَ وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ : يُجْزِي ذَلِكَ عَنْ الْآمِرِ نَسْتَحْسِنُ وَنَدَعُ الْقِيَاسَ فِيهِ ، وَلَوْ أَمَرَهُ أَنْ يَحُجَّ عَنْهُ فَاعْتَمَرَ ضَمِنَ ؛ لِأَنَّهُ خَالَفَ وَلَوْ اعْتَمَرَ ثُمَّ حَجَّ مِنْ مَكَّةَ يَضْمَنُ النَّفَقَةَ فِي قَوْلِهِمْ ؛ جَمِيعًا لِأَمْرِهِ بِهِ بِالْحَجِّ ، بِسَفَرٍ وَقَدْ أَتَى بِالْحَجِّ مِنْ غَيْرِ سَفَرٍ ؛ لِأَنَّهُ صَرَفَ سَفَرَهُ الْأَوَّلَ إلَى الْعُمْرَةِ ، فَكَانَ مُخَالِفًا فَيَضْمَنُ النَّفَقَةَ . وَلَوْ أَمَرَهُ بِالْحَجِّ عَنْهُ فَجَمَعَ بَيْنَ إحْرَامِ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَأَحْرَمَ بِالْحَجِّ عَنْهُ وَأَحْرَمَ بِالْعُمْرَةِ عَنْ نَفْسِهِ فَحَجَّ عَنْهُ وَاعْتَمَرَ عَنْ نَفْسِهِ صَارَ مُخَالِفًا فِي ظَاهِرِ الرِّوَايَةِ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ .
‘(যিনি বদলী-হজ করাচ্ছেন) তিনি যদি শুধু হজ করার নির্দেশ দেন অথবা শুধু উমরা করার নির্দেশ দেন, আর বদলী-হজকারী কিরান হজ করে তবে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর মতে, বদলী-হজকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, নির্দেশকারীর পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আমরা ‘ইসতিহসান’-এর ওপর আমল করি এবং কিয়াস পরিত্যাগ করি। যিনি বদলী হজ করাচ্ছেন, তিনি যদি হজ করার নির্দেশ দেন আর বদলী-হজকারী উমরা করে, তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা সে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেনি। আর যদি সে উমরা করে এবং পরে মক্কা থেকে হজ করে তাহলে সকলের মতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেননা বদলী-হজকারীর প্রতি যিনি হজ করাচ্ছেন তার নির্দেশ ছিল হজের সফর করার, সে সফর ছাড়াই হজ করেছে। কারণ প্রথম সফরটা সে উমরার জন্য করেছে। তাই সে নির্দেশের উল্টো কাজ করেছে। সে জন্য তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি নির্দেশদাতা হজ ও উমরা উভয়টা এক ইহরামে একত্রে আদায় করতে বলেন, আর বদলী-হজকারী নির্দেশদাতার জন্য শুধু হজ করে, কিন্তু উমরা করে নিজের জন্য, তবে সে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর যাহেরী রেওয়ায়েত[12] অনুসারে-নির্দেশের উল্টো করল।’[13]
উপরের উদ্ধৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, বদলী-হজ যিনি করাচ্ছেন তাঁর কথা মতো হজ সম্পাদন করতে হবে। তিনি যে ধরনের হজের নির্দেশ দেবেন সে ধরনের হজ করতে হবে। নির্দেশ মোতাবেক হজ না করলে কোথায় কোথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বদলী-হজকারীকে সর্বাবস্থায় ইফরাদ হজ করতে হবে, এ কথা ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহ. কেউই বলেননি। বরং যিনি হজ করাবেন তার উচিত তামাত্তু হজ করানো। কারণ এতে হজ-উমরা উভয়টি রয়েছে। আর বিশুদ্ধ মতানুযায়ী উমরা করা ওয়াজিব। ফলে তামাত্তু করলে উভয়টি আদায় হয়ে যায়।
[2]. তিরমিযী : ৮৫২।
[3]. আহমাদ : ১/২৯৭।
[4]. ফাতহুল বারী : ১৩/২৯৬।
[5]. ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর মতে, বদলী হজ করার জন্য তার পূর্বে হজ করা জরুরী নয়। তবে যিনি পূর্বে হজ করেছেন তাকে দিয়ে বদলী হজ করানো উত্তম।
[6]. আবূ দাউদ : ১১৮১; ইবনে মাজাহ্ : ৩০৯২।
[7]. বুখারী : ৪/৪৩৯; মুসলিম : ২/৭১০।
[8]. মাজমু‘, ইবন তাইমিয়া : ২৬/২৮।
[9]. দারা কুতনী : ২/২২৩।
[10]. তিরমিযী : ৮৫২।
[11]. মুসলিম : ১২১৮।
[12]. যে ছয়টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের বর্ণনা হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য সেগুলোকে যাহেরী রেওয়ায়েত বলে।
[13]. বাদায়েউস্ সানায়ে : ২/২১৩-২১৪।