রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ঘুম থেকে জেগে উঠে দু‘আ পড়ুন।

পেশাব-পায়খানার দরকার হলে সারুন।

দাঁতন করুন।

গোসলের দরকার হলে গোসল নতুবা ওযূ করুন।

তাহিয়্যাতুল ওযূ নামায পড়ুন।

তাহাজ্জুদ পড়ুন।

আযান শুনে আযানের জবাব দিন।

আযানের পর ফজরের সুন্নাত পড়ুন।

ফজরের পর ডানকাতে শুয়ে একটু বিশ্রাম নিন। তবে অবশ্যই ঘুমিয়ে যাবেন না।

আযান হলে জামাআতে নামায পড়তে মসজিদে যান।

মসজিদে যাওয়া ও সেখানে অবস্থান করার নানান আদব খেয়াল রাখুন।

ফরয নামাযের ইকামত হলে সুন্নাত ত্যাগ করে ফরয নামায পড়ুন।

নামাযের পর যথানিয়মে জিকির পড়ুন।

ফজরের নামায পড়ে সূর্য ওঠা পর্যন্ত মুসাল্লায় বসে তিলাওয়াত ও জিকির করুন। তার সওয়াব অনেক। ইল্মী মজলিস থাকলে সেখানে বসুন।

সকালের জিকির-আযকার পড়ুন।

প্রকাশ থাকে যে, সকালে ৭০ হাজার ফিরিশ্তার দু‘আ এবং ঐ দিনে মরলে শহীদের দর্জা পাওয়ার জন্য সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করার হাদীস সহীহ নয়। (যয়ীফ তারগীব হা/৩৭৯, যয়ীফুল জামে’ হা/৫৭৩২)

ফজরের ফরয নামাযের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত (ফজরের ছুটে যাওয়া সুন্নাত বা কারণ-ঘটিত কোন নামায ছাড়া) সাধারণ কোন নফল নামায পড়া যাবে না। যেমন সূর্য ওঠা, ডোবা ও ঠিক মাথার উপর থাকার সময় নফল নামায নিষিদ্ধ।

প্রয়োজনে ফজরের পর ঘুমাতে পারেন। তবে উদাসীন ও অলসদের মত খামাখা বিলাস-নিদ্রায় পড়ে থাকা উচিত নয়। বরং কাজ থাকলে সকাল-সকালই সেরে ফেলা কর্তব্য। অবশ্য ‘‘সকালের ঘুম রুযী থেকে বঞ্চিত করে।’’ এ হাদীস সহীহ নয়। (যয়ীফুল জামে’হা/৩৫৩১) যেমন ‘‘সুবহে সাদেকের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ে মানুষের রুযী বন্টন করা হয়’’ এ মর্মে নবী-দুলালী ফাতিমার হাদীসটি মউযূ’ বা জাল। (যয়ীফ তারগীব হা/১০৪৭)

সূর্য ওঠার পর ইশরাক্বের নামায পড়ুন। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর জিকির করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।’’ বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।’’ অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব।[1]

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘ইসমাঈলের বংশধরের চারটি মানুষকে দাসত্বমুক্ত করা অপেক্ষা ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকিরকারী দলের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক প্রিয়। অনুরূপ চারটি জীবন দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জিকিরকারী সম্প্রদায়ের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।’’[2]

নাশ্তার সময় খাওয়ার আদব মনে রাখুন।

পোশাক পরার সময় তার পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জার আদব মনে রাখুন।

ঘর থেকে বের হওয়ার আদব এবং সফর, সাক্ষাৎ, যিয়ারত ও যিয়াফতের আদব খেয়াল রাখুন।

যে কাজেই যান ইসলামের বিধান ভুলে যাবেন না।

ঘরে থাকলে চাশ্তের সময় চাশ্তের নামায পড়ুন।

যাওয়ালের পূর্বে যাওয়ালের নামায পড়ুন। যাওয়ালের পরেও ৪ রাকআত পড়ুন।

যোহরের সময় যোহরের নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করুন।

দুপুরের খাবারের সময় খাবারের আদব খেয়াল করুন।

খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিন। যেহেতু রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘তোমরা দুপুরের সময় বিশ্রাম নাও। শয়তানরা এ সময় বিশ্রাম নেয় না।’’[3]

এই বিশ্রাম ও বিরতির ফলে দেহ-মন তরতাজা হয়ে উঠবে। নতুনভাবে কাজ ও ইবাদতে মন বসবে। রাত্রিতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে সহজ হবে। বিজ্ঞানীরা বলেন, সামান্য দিবানিদ্রা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।

আসরের সময় আসরের নামায মসজিদে গিয়ে পড়ুন।

আসরের আগে ৪ রাকআত সুন্নাত পড়ুন, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করবেন।

আসরের ফরয নামাযের পর (কারণ-ঘটিত কোন নামায ছাড়া) আর কোন নফল নামায নেই।

আসরের নামাযের পর বসে তিলাওয়াত ও জিকির করুন। ইল্মী মজলিসে বসুন।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘ইসমাঈলের বংশধরের চারটি মানুষকে দাসত্বমুক্ত করা অপেক্ষা ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকিরকারী দলের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক প্রিয়। অনুরূপ চারটি জীবন দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জিকিরকারী সম্প্রদায়ের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।’’

আসরের পর কস্নান্ত থাকলে অথবা বিশ্রাম বা ঘুমের প্রয়োজন হলে আপনি ঘুমাতে পারেন। এ সময় ঘুম নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে অথবা ঘুমালে মস্তিষ্ক-বিকৃতি ঘটতে পারে বলে যে হাদীস বর্ণনা করা হয় তা সহীহ নয়।

মাগরেবের নামায মসজিদে গিয়ে আদায় করুন।

ইচ্ছা হলে ও সময় থাকলে মাগরেবের ফরযের আগে ২ রাকআত নামায পড়ুন। সুন্নাত ও নফল নামায ঘরে পড়ার চেষ্টা করুন। মাগরেবের সুন্নতের পর আর নির্দিষ্ট কোন নফল নামায নেই।

এশার আযান হলে জামাআতে এশার নামায পড়ুন। সুন্নাত পড়ে বাড়ি ফিরে রাতের খানা খেয়ে বেশী রাত না জেগে যথাসম্ভব আগে আগে ঘুমিয়ে যান। যাতে রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে উঠতে আপনার কষ্ট না হয়। আর কোন বৈধ কারণবশতঃ রাত হয়েই গেলে ওযূ করে ২/৪ রাকআত নামায পড়ে বিত্র পড়ে শুয়ে যান। পক্ষান্তরে রাতে উঠতে পারবেন না -এই আশঙ্কা হলে এশার সুন্নতের পরে বিত্র পড়ে নিন।

আর জেনে রাখুন যে, আল্লাহর রসূল (ﷺ) এশার আগে ঘুমাতে এবং পরে (অপ্রয়োজনীয়) কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন।[4]

প্রকাশ থাকে যে, এশার নামাযের পর বাড়ি ফিরে ৪ অথবা ৬ রাকআত নামায পড়ার হাদীস সহীহ নয়।

কোন কর্মে দ্বিধাগ্রস্ত হলে নিজ রবের কাছে পরামর্শ নিন এবং তার জন্য ইস্তিখারার নামায পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।

কঠিন বিপদে বা সমস্যায় পড়লে অথবা কোন প্রয়োজন পূরণ করার দরকার হলে স্বালাতুল হা-জাহ পড়ে আল্লাহর কাছে আবেদন জানান।

কোন পাপ করে ফেললে আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের জন্য স্বালাতুত তাওবাহ পড়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানান।

চন্দ্রে অথবা সূর্যে গ্রহণ লাগলে যথানিয়মে জামাআত সহকারে তার নামায পড়ুন।

অনাবৃষ্টি দেখা দিলে যথানিয়মে জামাআত সহকারে স্বালাতুল ইস্তিস্কা পড়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।

জুমআর দিন বেশী বেশী দরূদ পড়ুন, সূরা কাহফ পড়ুন। সকাল সকাল গোসল করে মসজিদে উপস্থিত হন। নিয়মিতভাবে জুমআর নামায আদায় করুন। এই দিনে দু‘আ কবুল হওয়ার সময় খুঁজতে আল্লাহর ইবাদতে ও দু‘আয় মশ্গুল থাকুন। অবশ্য রুযী সন্ধানের প্রয়োজন থাকলে কাজে বেরিয়ে যান।

প্রত্যেক সোম বৃহস্পতিবার রোযা রাখুন।

প্রত্যেক হিজরী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ এই তিনদিন রোযা রাখুন।

যেহেতু আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা রাখা সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য।’’[5]

আবূ যার্র (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে ৩টি করে রোযা রাখবে, তার সারা বছর রোযা রাখা হবে। আল্লাহ আযযা অজাল্লা এর সত্যায়ন অবতীর্ণ করে বলেন, مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا

কেউ কোন ভাল কাজ করলে, সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে।[6] এক দিন ১০ দিনের সমান।’’[7]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘ধৈর্যের (রমযান) মাসে রোযা আর প্রত্যেক মাসের তিনটি রোযা অন্তরের বিদ্বেষ ও খট্কা দূর করে দেয়।’’[8]

মুহার্রাম মাসের অধিকাংশ দিন রোযা রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ৯ ও ১০ তারীখে আশূরার রোযা রেখে এক বছরের পাপ মাফ করিয়ে নিন।

শা’বান মাসের অধিকাংশ দিন রোযা রাখার চেষ্টা করুন। রমযানের মাসের রোযা রাখার সাথে সাথে নিয়মিত তারাবীহ পড়ুন। বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত্রি শবেকদরের রাত্রির খোঁজে শেষ দশকের সমস্ত বেজোড় রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করার চেষ্টা করুন। রমযানের পর শওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখুন। আপনার সারা বছর রোযা রাখা হবে।

বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন যুল-হজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন সর্বপ্রকার নেক আমল করার চেষ্টা করুন। এই নয় দিনে রোযা রাখুন। বিশেষ করে এ মাসের ৯ তারীখে আরাফার রোযা রেখে গত ও আগামী এক বছরের (সর্বমোট দুই বছরের) গোনাহ মাফ করিয়ে নিন। ১০ তারীখে সাধ্যমত কুরবানী করুন। ঈদের নামায পড়ে খুশী হন, অপরকে খুশী করুন।

খুব বেশী শক্তি থাকলে একদিন পর একদিন দাঊদী রোযা রাখুন। যৌন-পীড়ায় পীড়িত হলে রোযা রেখে তার উপশম খুঁজুন।

প্রত্যহ সামর্থ্য হলে কিছু না কিছু দান করুন। অন্নহীনকে অন্নদান করুন। অক্ষম ব্যক্তির সহযোগিতা করুন। এতীম-বিধবার খোঁজ খবর রাখুন। জানাযায় অংশগ্রহণ করুন। সামাজিক কাজ করুন। সৎকাজে আদেশ করুন ও মন্দ কাজে বাধা দিন। বিবদমান গোষ্ঠীর মাঝে সন্ধি স্থাপন করুন। যুলম থেকে বিরত রেখে যালেমের ও যুলম প্রতিহত করে মযলূমের সহযোগিতা করুন। নিজের জন্য যা পছন্দ করেন, তা অপরের জন্য পছন্দ করুন। অপরের ত্রুটি গোপন করুন। অপরকে ক্ষমা প্রদর্শন করুন।

বড়দের সম্মান করুন। আলেমদের শ্রদ্ধা করুন এবং তাঁদের পাশে বসুন। দৈনিক কিছু কিছু করে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করুন। সহীহ দলীল-ভিত্তিক আকীদা, ফারায়েয ও হারাম-হালাল শিখুন।

বিদআত থেকে সুদূরে থাকুন। ইসলামী ক্যাসেট শুনুন। ইসলামী বই পড়ুন। হিকমতের সাথে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করুন। বিপদ ও কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করুন। প্রত্যেক কষ্টে সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছেই সাহায্য ভিক্ষা করুন। বিশ্বজাহানের মুসলিমদের জন্য দু‘আ করুন। জিহাদের সামর্থ্য থাকলে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করুন।

সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আপনার মন আল্লাহর সাথে সংযুক্ত থাক। আপনার হৃদয় মসজিদের সাথে লটকে থাক। সংসারের কাজ থাকলে কাজ করুন। পিতামাতা ও স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আযান হলে আবার মসজিদে আসুন।

পিতামাতার হক আদায় করুন। আদায় করুন স্ত্রী-সন্তানের হক। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও সাক্ষাৎকারীর হকও ভুলে গিয়ে নির্জনে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হবেন না। যেহেতু সেগুলিও তুলনামূলক বড় ইবাদত। অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় মুক্তির স্বাদ লাভ করতে হবে আপনাকে।

কোন কিছুতে অবজ্ঞা ও অতিরঞ্জন প্রদর্শন করবেন না। খরচে কার্পণ্য ও অপচয় করবেন না। ব্যবহারে সুন্দর চরিত্র প্রকাশ পাবে আপনার দৈনন্দিন জীবনে।

[1]. তিরমিযী, সহীহ তারগীব ৪৬১

[2]. আবু দাঊদ, সহীহ তারগীব ৪৬২

[3]. ত্বাবারানী, আবূ নুআইম, সহীহুল জা’মে হা/৪৪৩১

[4]. সহীহুল জা’মে হা/৬৯১৫

[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/১৯৭৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১১৫৯

[6]. সূরা আনআম-৬: ১৬০

[7]. তিরমিযী, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৭০৮

[8]. বাযযার, সহীহ তারগীর হা/১০১৮