মেহমান গিয়ে তিনদিনের বেশী মেহমানি করা উচিত নয়। উচিত নয় মেযবানকে গোনাহ অথবা কষ্টে ফেলা। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘মেহমানের পারিতোষিক হল এক দিন-রাত। মেহমান-নেওয়াযী তিন দিন। আর তার বেশী হল সদকাহ স্বরূপ। কোন মুসলিমের জন্য তার ভায়ের নিকট এতটা থাকা বৈধ নয়, যাতে সে তাকে গোনাহগার করে ফেলে।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাকে কিভাবে গোনাহগার করে ফেলে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এ ওর কাছে থেকে যায়, অথচ ওর এমন কিছু থাকে না, যার দ্বারা সে মেহমানের খাতির করতে পারে।’’[1]
অনেক অকর্মণ্য, বেকার ও কুঁড়ে লোক অযাচিত মেহমান হয়ে আত্মীয়, বিয়াই বা বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে মেহমানী করে বেড়াতে ভালোবাসে। তিন দিনের বেশী বসে বসে সদকা খেতে আনন্দবোধ করে। কিন্তু সে এতটুকু অনুভব করতে পারে না যে, তার জন্য মেযবান কষ্ট পাচ্ছে। ভালো খাবার ও শোবার জায়গার ব্যবস্থা করতে তাকে বেগ পেতে হচ্ছে। বদনামের ভয়ে সে হয়তো ঋণ করেও মাছ-মুরগী-ডিম যোগাড় করে তার খাতির করে যাচ্ছে। এমন ছুঁচা ও বেহায়া মেহমান নিয়ে বাড়ির লোক সত্যই ফাঁপরে পড়ে। স্পেশাল রান্নার চাপ পড়ে স্ত্রীর উপর। তাতে অনেক স্ত্রী বিরক্ত হয়। যার ফলে স্বামী-স্ত্রীতে কলহ বাধে। বাড়িতে ঐ মেহমান নিয়ে গীবত চলে। ঐ মেহমান সম্বন্ধে নানা কুধারণা করা হয়। মনে মনে মেযবান ও তার বাড়ির লোক তার প্রতি বিরক্ত হয়ে যায়। আর এ সবের ফলে তার সওয়াব বাতিল, বরং উল্টে সে গোনাহর শিকার হয়ে যায়। কষ্ট হয় অথচ তার ফলও মিলে না। অবশ্য সব কুটুম যে সমান, তা নয়। অনেক কুটুম আছে যে সত্যই মন থেকে থাকতে ও বেড়াতে বলে। সে ক্ষেত্রে তিনদিনের বেশী থাকায় দোষ নেই। তবুও মেহমানের উচিত, সময় থাকতে নিজের মান বাঁচিয়ে নেওয়া।
উপরোক্ত হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে মেযবানের উচিত, মেহমান এলে প্রথম একদিন ও একরাত তার ভালোরূপ খাতির করা; অতঃপর দুইদিন স্বাভাবিক খাতির করা। তারপরেও মেহমান থেকে গেলে তাকে সাধারণ খাবার দেওয়া এবং তার প্রতি বিরক্ত না হওয়া। কারণ, তাতে সে সদকার সওয়াব অর্জন করতে থাকবে। অন্য বর্ণনা ও ব্যাখ্যামতে মেযবান মেহমানের তিনদিন খাতির করবে এবং তার একদিন ও একরাতের (পারিতোষিক) খাবার সাথে বেঁধে দিবে।
অনেকের মতে মেহমান এসে থেকে গেলে তার খাতির তিনদিন করা জরুরী। তারপর জরুরী নয়, সদকাহ। আর মেহমান এসে না থাকলে তাকে পারিতোষিক এতটা পরিমাণ খাবার সাথে বেঁধে দিতে হবে, যাতে তার ২৪ ঘন্টা পথের জন্য যথেষ্ট হয়।