ইসলাম দয়া-দাক্ষিণ্য ও রহমতের ধর্ম। সমাজের মানুষের সাথে সম্পর্ক, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রাখতে আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে ইসলাম। মানুষের বিপদে সহযোগিতা করতে এবং আপদে সান্ত্বনা দিতে অনুপ্রাণিত করেন আমাদের রহমতের নবী (ﷺ) রোগীকে দেখা করে সান্ত্বনা দেওয়া সেই ইসলামী আদবের অন্যতম। বরং একজন রোগগ্রস্ত মুসলিম ভায়ের এটি একটি প্রাপ্য অধিকার।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের ৫টি অধিকার রয়েছে; সালামের জবাব দেওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা দেওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাবে ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা।’’[1]

রোগীকে সাক্ষাৎ করলে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয় এবং তার প্রতিদান পাওয়া যায় সঙ্কটময় দিন কিয়ামতে।

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘আল্লাহ আযযা অজাল্লা কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম অথচ তুমি আমাকে সাক্ষাৎ করনি!’ মানুষ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আপনার (অসুস্থতা ও) সাক্ষাৎ সম্ভব ছিল, কারণ আপনি তো বিশ্বজাহানের পালনকর্তা!’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তো তাকে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা দাও নি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে সাক্ষাৎ করতে তাহলে তার নিকটেই আমাকেও পেতে?’

(আল্লাহ আরো বলবেন,) ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট অন্ন ভিক্ষা করেছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে অন্নদান করনি!’ মানুষ বলবে, ‘হে প্রভু! কেমন করে আপনাকে অন্নদান করতাম? আপনি তো সারা জাহানের পালনকর্তা!’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট অন্ন ভিক্ষা করেছিল? কিন্তু তুমি তাকে অন্ন দান করনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে অন্ন দান করে থাকতে তাহলে তা আমার নিকট পেয়ে যেতে?’

(আল্লাহ আরো বলবেন,) ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পিপাসায় পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি!’ মানুষ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আপনাকে পানি পান করাতাম? আপনি তো সারা বিশ্বের পালনকর্তা!’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পিপাসায় পানি ভিক্ষা করেছিল। কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে তাহলে তা আমার নিকট পেয়ে যেতে?’’[2] আর সাক্ষাৎকারী মুসলিম ভায়ের রয়েছে বড় সওয়াব।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করে অথবা তার কোন লিল্লাহী (আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্বস্থাপন করে সেই) ভাইকে সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহবানকারী আহবান করে বলে, ‘সুখী হও তুমি, সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের প্রাসাদে।’’[3]

তিনি আরো বলেন, ‘‘যখনই কোন ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় কোন রোগীকে সাক্ষাৎ করতে যায়, তখনই তার সাথে ৭০ হাজার ফিরিশ্তা বের হয়ে সকাল পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর যে ব্যক্তি সকালবেলায় রোগীকে দেখা করতে আসে সে ব্যক্তির সাথে ও ৭০ হাজার ফিরিশ্তা বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।’’[4]

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রোগীকে সাক্ষাৎ করতে যায়, সে আসলে ফিরে না আসা পয‎©ন্ত জান্নাতের ফল তুলতে থাকে।’’[5]

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রোগীকে সাক্ষাৎ করতে যায়, সে আসলে রহমতে বিচরণ করতে থাকে। অতঃপর সে যখন (রোগীর নিকটে) বসে যায়, তখন রহমতে স্থায়ী হয়ে যায়।’’[6]

[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ১২৪০, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১৬২

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৫৬৯

[3]. তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিববান, সহীহ তিরমিযী হা/১৬৩৩

[4]. আহমাদ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, প্রমুখ, সহীহুল জা’মে হা/৫৭১৭

[5]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২১৮৬৮, মুসলিম ২৫৬৮, তিরমিযী ৯৬৭ন

[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ ৫২২