বহুজন যায় যেই দিকে,
পথ তারে কয় সর্বলোকে।
যেখানেই মানুষ ও সমাজ আছে, সেখানেই রাস্তা আছে। রাস্তা কিন্তু কারো একা চলার জন্য নয়। তাছাড়া রাস্তার ধারে-পাশে থাকে ঘর-বাড়ি, দোকান-পসার। রাস্তায় চলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব শ্রেণীর মানুষ। আর এই জন্যই রাস্তা সম্পর্কীয় বিভিন্ন আদব রয়েছে ইসলামে।
রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘খবরদার! তোমরা রাস্তার ধারে বসো না। আর একান্তই যদি বসতেই হয়, তাহলে তার হক আদায় করো।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘রাস্তার হক কি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করা (এবং পথভ্রষ্টকে পথ বলে দেওয়া)।’’[1]
সুতরাং রাস্তার হক আদায় করুন। অবশ্য উপরোক্ত হাদীসে যে সকল হকের কথা বলা হয়েছে, তাই কিন্তু শেষ নয়। বরং এ ছাড়াও আরো হক অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এখন আমরা দেখি, সেই হকগুলি কি কি?
দৃষ্টি সংযত রাখা।
রাস্তায় যেহেতু নারী-পুরুষ সকলেই হাঁটে, সেহেতু রাস্তার ধারে বসার সময় এবং রাস্তায় চলার সময় দৃষ্টি অবনত করে রাখা জরুরী। যাতে পুরুষ নারীর এবং নারী পুরুষের এমন জায়গা নজরে না পড়ে, যা দেখা কারো জন্য বৈধ নয়। কারণ, নজর থেকেই শুরু হয় হৃদয়ের গুপ্ত প্রণয়। তাছাড়া নজরে হয় এক প্রকার ব্যভিচার। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘চোখ দু’টিও ব্যভিচার করে। আর তার ব্যভিচার হল, (কাম-নজরে নারীর সৌন্দর্যের প্রতি) দৃষ্টিপাত করা। কান দু’টিও ব্যভিচার করে। আর তার ব্যভিচার হল, (যৌন-কথা) শ্রবণ করা। জিভও ব্যভিচার করে। আর তার ব্যভিচার হল, (যৌন-কথা) বলা। হাতও ব্যভিচার করে। আর তার ব্যভিচার হল, সকামে স্পর্শ করা। ব্যভিচার করে পা দু’টিও। আর তার ব্যভিচার হল, (যৌনক্রিয়ার উদ্দেশ্যে) হেঁটে যাওয়া।’’[2] আর তার জন্যই মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ -وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
অর্থাৎ, মু’মিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মু’মিনা নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত করে--।[3]
সমাজ-বিজ্ঞানী রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘একবার নজর পড়ে গেলে আর দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখো না। প্রথমবারের (অনিচ্ছাকৃত) নজর তোমার জন্য বৈধ। কিন্তু দ্বিতীয়বারের নজর বৈধ নয়।[4]
হযরত জারীর (রাঃ) আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘কোন মহিলার উপর আমার আচমকা নজর পড়ে গেলে আমি কী করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার নজর ফিরিয়ে নাও।’’[5]
অনুরূপভাবে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, কারো প্রতি বদ-নজর বা হিংসার নজর দ্বারা দৃষ্টিপাত না করা।
[2]. মিশকাত হা/ ৮৬
[3]. সূরা নূর-২৪:৩০-৩১
[4]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৭৯৫৩
[5]. আহমাদ, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, সহীহুল জামে’১০১৪