মহিলার রূপ ও সৌন্দর্যের সাথে সুগন্ধি হল স্বামীর মন আকৃষ্ট করার জন্য আজব যাদু। ঘরে একাকিনী অথবা কেবল মহিলাদের মাঝে থাকলে সেন্ট্ ব্যবহার তার জন্য বৈধ। স্বামীর জন্য ব্যবহার করা বিধেয়। গোলাপের সৌন্দর্যের সাথে সৌরভের মিলন না থাকলে গোলাপের কদর থাকে না। এ জন্যই স্বামী-সোহাগিনী স্ত্রীদের কাছে সেন্ট্ অতি প্রিয় জিনিস।
মহিলা আতর ব্যবহার করবে কেবল নিজের জন্য এবং নিজের স্বামীর জন্য। স্বামী যেন তার নিকট থেকে কোন দুর্গন্ধ না পায় তার খেয়াল রাখতে হয় তাকে। আসলে প্রেম এমন সূক্ষ্ম জিনিস, যা সামান্য কারণে সৃষ্টি হয়; কিন্তু সামান্য কারণে নষ্টও হয়। তাই প্রেমের মাটিতে যাতে কোন প্রকার ঘৃণার বীজ রোপিত না হয়, তার খেয়াল দম্পতিকে অবশ্যই রাখতে হয়। আর সেই মানসেই মাসিক শেষে মহিলাদেরকে লজ্জাস্থানে সুগন্ধি রেখে দুর্গন্ধ দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পর মহিলা সারা শরীর ধুয়ে নেবে। পরে বস্ত্রখন্ড- বা তুলোর মধ্যে কোন সুগন্ধি লাগিয়ে লজ্জাস্থানে রেখে নেবে।[1]
পক্ষান্তরে স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষের জন্য সেন্ট্ ব্যবহার করা কোন মহিলার জন্য বৈধ নয়। বিশেষ করে পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন মেয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করলে, সে ভালো মেয়ে নয়।
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধ ব্যবহার করে কোন (পুরুষদের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তবে সে ব্যভিচারিণী।’’[2]
এমন কি আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে মসজিদে যেতেও সেন্ট্ ব্যবহার করতে পারে না কোন মহিলা।
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে আসতে বারণ করো না, তবে তারা যেন খোশবূ ব্যবহার না করে সাদাসিধাভাবে আসে।’’[3]
তিনি আরো বলেন, ‘‘সেই মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মত গোসল না করে।’’[4]
তদনুরূপ স্বামী মারা গেলে তার শোকপালনের সময়কালে বিধবার জন্য সর্বপ্রকার সুগন্ধি; সুবাসিত সাবান বা তৈলাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ।[5] এমন কি নিজের ছেলেমেয়ে বা অন্য কাউকে সেন্ট্জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিতেও পারে না। যেহেতু সুগন্ধি হাতে এসে যাবে তাই।[6] অবশ্য মাসিক থেকে পবিত্রতার সময় দুর্গন্ধ দূরীকরণার্থে কিছু সেন্ট লজ্জাস্থানে ব্যবহার করতে পারে।[7]
সতর্কতার বিষয় যে, অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলামহলে মহিলাদের আপোসে গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্ষণে ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ্’ করা বা অলঙ্কার বদলে পরা বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো মেয়ের লক্ষণ নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে মানুষ লোকচক্ষু খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যা ইচ্ছা খাও-পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব।’’[8]
আল্লাহ তাআলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়। কারণ, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। পরন্তু অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।
সবশেষে বলি যে, সকলের জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান অলঙ্কার হল, ঈমান, জ্ঞান ও আদবের অলঙ্কার। এ অলঙ্কার না থাকলে, অন্য কোন অলঙ্কারেই রমণী রমণীয় ও সুন্দরী হতে পারে না। মহিলা যদি তাকওয়ার লেবাস না পরে, তাহলে অন্য কোন লেবাস তার ইজ্জত ঢাকতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
অর্থাৎ, হে মানব জাতি! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে লেবাস দিয়েছি। পরন্তু ‘তাক্বওয়া’র লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট।[9]
বলাই বাহুল্য যে, একজন মুসলিম নারীর উচিত হল, স্বামীর জন্য বাহ্যিক রূপ-লাবণ্যের খেয়াল রাখার সাথে সাথে আভ্যন্তরিক সৌন্দর্যের অধিক খেয়াল রাখা। যেহেতু কসমেটিক ও অলঙ্কার যেমন নারীর রূপ বর্ধন করে, তেমনি সুন্দর চরিত্রও রূপের ফুল-বাগানে বসন্ত আনে।
একজন এক বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করল, এ বৃদ্ধ বয়সেও তোমার দেহ-মুখে লাবণ্য! তুমি কোন্ ক্রিম ব্যবহার কর? বৃদ্ধা বলল, দুই ঠোঁটে ব্যবহার করি সত্যবাদিতার লিপ্ষ্টিক, চোখে ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত দৃষ্টির কাজল, মুখম-লে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম ও গোপনীয়তার পাওডার, হাতে ব্যবহার করি পরোপকারিতার ভেজলীন, দেহে ব্যবহার করি ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার করি আল্লাহর প্রেম, মস্তিষ্কে ব্যবহার করি প্রজ্ঞা, আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির জন্য ব্যবহার করি ঈমান।
ময়ুরের মত সুন্দরী হয়েও তা নিয়ে গর্ব করা উচিত নয় মুসলিম নারীর। কারণ, ময়ুর নিজের পায়ের দিকে তাকালেই তার সে গর্ব খর্ব হয়ে যায়। চরিত্রে দোষ থাকলে সে নারীর রূপের কি দাম? ফুলের সুবাস না থাকলে, তার কি কোন কদর থাকে? খাবারে নুন না থাকলে যেমন তার প্রতি আগ্রহ থাকে না, তেমনি নারীর গুণ না থাকলে তার প্রতি আগ্রহ না থাকারই কথা।
পক্ষান্তরে ফুলের সৌরভ আর রূপের গৌরব থাকেও না বেশী দিন। আর মালার ফুল বাসি হলেই তার মর্যাদা কমে যায়। অতএব রূপ নিয়ে গর্ব কিসের?
পরন্তু হার্দিক রূপ থাকলে এবং বাহ্যিক রূপ তত না থাকলে মনঃক্ষুণ্ণ হওয়া উচিত নয় কোন নারীর। যেহেতু চাঁদের অত রূপ বলেই তাতে কলঙ্কের কালো দাগ আছে, পদ্ম অত সাদা বলেই তাতে কালো ভোম্রা বসে থাকে।
প্রসাধিকা মহিলাকে জেনে রাখা উচিত যে, সাজ-সজ্জা ও প্রসাধনের পিছনে যে সময় নষ্ট হয় তা সামান্য নয়। প্রত্যেক দিন এক ঘন্টা করে ধরলে ৬০ বছর বয়সে কমসে কম ১৮২৫০ ঘন্টা (প্রায় ২৫ মাস ১০দিন) তার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হয়। আর এই পরিমাণ সময় যদি ফালতু ব্যয় হয়ে থাকে, তাহলে কিয়ামতের মাঠে সময় নষ্ট করার প্রশ্নের জবাবে উত্তর তৈরী করে রাখা দরকার ঐ মহিলার।
[2]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিববান, ইবনে খুযাইমাহ, হাকেম, সহীহুল জা’মে হা/৪৫৪০
[3]. আহমাদ, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৫৭
[4]. আবূ দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বাইহাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১০৩১
[5]. ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮১৩
[6]. কিতাবুদ দা’ওয়াহ ২/১৪৩
[7]. লিক্বাউল বা-বিল মাফতুহ, ইবনে উসাইমীন ২৪/১৩
[8]. বুখারী
[9]. সূরা আ’রাফ-৭:২৬