- সা‘ঈ করতে যাচ্ছেন এ মর্মে মনে মনে নিয়ত বা ইচ্ছা পোষণ করুন। সা‘ঈ করতে যাবার পূর্বে হাজরে আসওয়াদ পাথর ‘ইস্তিলাম’ (চুম্বন-স্পর্শ) করা উত্তম; তবে ভিড়ের কারণে সম্ভব না হলে কোনো সমস্যা নেই, সরাসরি সাফা পাহাড়ের দিকে রওয়ানা হয়ে পড়ুন। তবে এ সময় হাজরে আসওয়াদ পাথরের দিকে হাত তুলে ইশারা করা বা তাকবীর বলার কোনো বিধান নেই।
- সাফা পাহাড়ে যতটুকু সম্ভব উঠে বা কাছাকাছি পৌছে এ দো‘আটি শুধুমাত্র এখন একবারই পড়ুন:
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآئِرِاللهِ (أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ)
‘‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আয়িরিল্লাহ, আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি’’।
‘‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম।
আমি আরম্ভ করছি যেভাবে আল্লাহ আরম্ভ করেছেন’’।[1]
- এবার কা‘বা শরীফের দিকে মুখ করে কা‘বার দিকে দুই হাত উঠিয়ে এ দো‘আটি তিনবার পাঠ করুন:[2]
اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ –
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَـهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ –
وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআহদাহু লা শারিকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদ্, ইয়ুহয়ী ওয়া ইয়ুমিতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়য়িন ক্বদীর।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআহদাহু লা শারিকালাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু ওয়ানাসারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু’’।
‘‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। সকল সার্বভৌমত্ব ও প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।
তিনিই জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু দেন। তিনি সর্বশক্তিমান।
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই।
তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেছেন এবং দুষ্কর্মের সহযোগীদের পরাস্ত করেছেন”।[3]
- পদ্ধতি এমন হবে যে, উক্ত দো‘আটি প্রথমে একবার পাঠ করে তারপর আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যান্য দো‘আ পড়বেন। ফের উক্ত দো‘আটি পড়ে আবার সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যান্য দো‘আ পড়বেন। শেষ আর একবার এমনভাবে দো‘আ পড়বেন। অর্থাৎ তিন বার এভাবে করবেন।[4]
- দো‘আ শেষ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে চলতে শুরু করুন। এখানে কা‘বাকে উদ্দেশ্য করে হাতের উঠানো বা তাকবীর বলা কিংবা তালুতে চুম্বন করার কোনো নিয়ম নেই।
- সাফা থেকে মারওয়া পায়ে হেঁটে অথবা হুইল চেয়ারে করে যেতে পারেন। সা‘ঈ করার সময় তাওয়াফের মতো দো‘আ করতে পারেন। আপনি ইচ্ছে করলে কুরআন তিলাওয়াত, দো‘আ, যিকির, ইসতিগফার করতে পারেন আপনার নিজের ইচ্ছা মত। আওয়াজ করে, জোরে শব্দ করে বা দলবদ্ধ হয়ে কোনো দো‘আ পাঠ করার বিধান নেই। অথচ লক্ষ্য করে দেখবেন এখানে অনেকেই এ ভুল কাজটি করছেন।
- সাফা পাহাড় থেকে কিছু দূর এগুলেই উপরে ও ডানে-বামে সবুজ আলোর বাতি দেখবেন। এ সবুজ আলোর জায়গাটুকুতে শুধু পুরুষরা আস্তে আস্তে জগিং করার মতো দৌঁড়াবেন (রমল এর মতো)। সবুজ আলো অতিক্রম করার পর আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন। সা‘ঈ করার সময় যতবারই এ সবুজ আলোর জায়গার মধ্য দিয়ে যাবেন ততবারই জগিং করার মতো দৌড়াবেন। কিন্তু মহিলারা এখানে দৌড়াবেন না, স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন।
- সবুজ আলোর জায়গাটুকুতে দৌড়ানোর সময় এ দো‘আটি পড়ুন:
«رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ»
‘‘রাবিবগফির ওয়ারহাম ইন্নাকা আনতাল আ‘আযযুল আকরাম’’
‘‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন রহম করুন। নিশ্চয় আপনি সমধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।’’
- সাফা থেকে হেঁটে মারওয়া পাহাড় এসে পৌছলে ১ চক্কর সম্পন্ন হল। মারওয়া পাহাড়ে উঠে বা যতটুকু সম্ভব মারওয়া পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর আবার কা‘বার দিকে মুখ করে দুই হাত উঠিয়ে উপরোক্ত বড় দো‘আটি আবার ৩বার পড়ুন; ঠিক একই পদ্ধতিতে যেমন সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। এবার পুনরায় মারওয়া থেকে সাফার দিকে হাঁটা শুরু করুন এবং মাঝখানে সবুজ জায়গাটুকুতে দৌড়ে পার হোন। মারওয়া থেকে হেঁটে সাফা পাহাড়ে পৌঁছলে ২ চক্কর সম্পন্ন হল। এভাবে আরও ৫ চক্কর সম্পন্ন করার পর (২+৫=৭ চক্কর) মারওয়া পাহাড়ে এসে সা‘ঈ শেষ করবেন।
- সাঈ করার সময় কোনো সালাতের ইকামত হলে সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায় করে নিবেন এবং যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকে ফের শুরু করবেন।
- সা‘ঈ করার সময় এদিক ওদিক তাকানো ও ঘুরাঘুরি না করে একাগ্রচিত্তে বিনয়ের সাথে সা‘ঈ করাই উত্তম। খুব বেশি প্রয়োজন ব্যাতিরেকে সা‘ঈ করার সময় কথা না বলাই শ্রেয়। এ বইয়ের শেষে কুরআন ও হাদীস থেকে বেশ কিছু দো‘আ সংযোজন করা হয়েছে যা সা‘ঈ করার সময় পড়তে পারেন।
সা‘ঈ করার সময় দলবদ্ধ হয়ে সা‘ঈ করা সহজ। কারণ বেজমেন্ট/প্রথম তলা/দ্বিতীয় তলা/ছাদের উপরও প্রয়োজনে সা‘ঈ করা যায়, তাই সা‘ঈ করার সময় লোকের ভিড় ও চাপ তাওয়াফের তুলনায় কিছুটা কম হয়।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৩৭
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯০৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২/২২২
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৩৭