- হজ ফ্লাইটের শিডিউল ও বিমানবন্দর থেকে দুরত্বের ওপর ভিত্তি করে আপনার হজ এজেন্সি আপনাকে ফ্লাইটের দিনই বিমানবন্দরে অথবা এর দুই/একদিন আগে ঢাকা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাবেন।
- যেহেতু অধিকাংশ হজযাত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন, তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে এখানে একটি দৃশ্যপট চিন্তা করি; ধরুন প্রথমে আপনি ঢাকা হজ ক্যাম্পে যাবেন।
- চেক লিস্ট অনুযায়ী ব্যাগ গোছান; বড় আকারের একটি মেইন ব্যাগ করবেন (ওজন ৮-১০ কেজি) এবং ছোট আকারের একটি হাত ব্যাগ করবেন (ওজন ৫-৭ কেজি) এবং ছোট ব্যাগটিতে দরকারী কাগজপত্র (পাসপোর্ট, টিকেট, অনাপত্তিপত্র, ওষুধপত্র ইত্যাদি) নিবেন। আপনার ব্যাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৩টি জিনিস নিতে ভুলবেন না তা হল; ধৈর্য, ত্যাগ ও ক্ষমা!
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শান্ত ও খুশি মনে আপনার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিন। ভালো হয় যদি আপনার পরিবারের দুই একজন সদস্য আপনাকে বিদায় জানানোর জন্য কিছু পথ এগিয়ে দিতে আসেন।
- যাদের ছেড়ে হজের সফরে বের হচ্ছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য বলতে পারেন:
أَسْتَوْدِعُكمُ اللهُ الَّذِيْ لَا تضِيْعُ وَدَائِعُهُ
“আসতাওদি‘উ কুমুল্লাহুল্লাযী লা তাদী‘উ ওয়াদা-য়ী‘উহু”।
অর্থাৎ “আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হিফাযতে রেখে যাচ্ছি যার হিফাযতে থাকা কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না”।[1]
- ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আপনি নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করতে পারেন:
بسم الله توكلت على الله ولا حول ولا قوة إلا بالله
‘‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”।
অর্থ “আল্লাহর নামে, সকল ভরসা তারই ওপর এবং আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভালো করার বা মন্দকে প্রতিহত করার ক্ষমতা নেই”।[2]
- সিঁড়ি অথবা লিফটে করে উপরে ওঠার সময় বলুন ‘আল্লাহু আকবার’। নামার সময় বলুন ‘সুবহানাল্লাহ’। পরিবহনে ওঠার সময় বলুন ‘বিসমিল্লাহ’। আসনে বসার সময় বলুন ‘আলহামদুলিল্লাহ’।[3]
- রিক্সা, ট্যাক্সি, কার, বাস, ট্রেন ও বিমানে আরোহন করে আপনি নিম্মোক্ত যাত্রা পথের দো‘আটি পড়তে পারেন:
اَللهُ أَكْبر، اَللهُ أَكْبَر، أَللهُ أَكْبَر سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ وإنا إلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ
“আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, সুবহানাল্লাযি সাখ্খারালানা হাযা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন”।
অর্থ: “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এ বাহনকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। একে বশীভূত করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না। আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাবো”।[4]
- নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজে উঠে আপনি নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করতে পারেন:
﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ مَجۡرٜىٰهَا وَمُرۡسَىٰهَآۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ﴾ [هود: ٤١]
উচ্ছারণ: বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরছাহা ইন্না রাব্বিবলা গাফুরুর রাহীম।
অর্থ: আল্লাহর নামেই এ বাহন চলাচল করে এবং থামে। নিশ্চয় আমার প্রভু ক্ষমাশীল ও দয়ালু”। [সূরা হুদ, আয়াত: ৪১]
- যারা দূর থেকে আসবেন তারা বাস অথবা ট্রেন স্টেশনে এসে আপনার হজ সঙ্গীদের সঙ্গে মিলিত হবেন। তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আপনার দলনেতা অথবা আমীরের নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। অতঃপর আপনার ব্যাগপত্র নিয়ে পরিবহনে উঠুন এবং চূড়ান্তভাবে আপনার পরিচিতজনদের কাছ থেকে বিদায় নিন।
- যখন তিনজন বা এর অধিক লোক কোনো দূরবর্তী স্থানে সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নির্বাচন করে নেওয়া উত্তম। তাই আমীরের নির্দেশনা শুনুন ও দলের শৃংখলা বজায় রাখুন।[5]
- ভ্রমণ অবস্থায় আপনি রিলাক্স হয়ে বসুন। সম্ভব হলে হজ বিষয়ে বই পড়ুন বা মনে মনে দো‘আ ও যিকির করুন। মুসাফিরের দো‘আ আল্লাহ কবুল করেন।
- সফরে আপনি ঘুমাতে অভ্যস্থ হলে আপনি ঘুমিয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনি আপনার অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে হজ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে সময় কাটানোর জন্য অযথা গল্পে লিপ্ত না হওয়াই ভালো।
- মুসাফির অবস্থায় ভ্রমণে সালাত কসর করে আদায় করতে পারেন। কসর সালাত আদায় এর নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নিন। যোহর ও আসরকে একত্রে কসর করে যোহর বা আসরের সময় এবং মাগরিব ও এশাকে একত্রে কসর করে মাগরিব বা এশার সময় জমা করেও আদায় করতে পারেন।[6]
- সফররত অবস্থায় জুমু‘আর সালাত-এর পরিবর্তে যোহর সালাত আদায় করতে পারেন। কিবলা কোন দিকে তা একটু চিন্তা-ভাবনা বা জিজ্ঞাসা করে নির্ণয় করে নিবেন, তবে নির্ণয় করা সম্ভব না হলে বা জটিলতার কারণে কোনো এক দিককে কিবলা নির্ধারণ করবেন।[7]
- যাত্রা পথে কোথাও অবতরণ করে এ দো‘আ পাঠ করা:
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্ছারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক্ব।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্য দ্বারা তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি।[8]
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৯৬; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২৬
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৩
[4] সূরা-আল যুখরূফ ৪৩:১৩-১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪২
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ২২৪১
[6] সহীহ মুসলিম
[7] সূরা-বাকারা ২:২৩৯, আবু দাউদ, হাদীস নং ১২২৪-২৮
[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৮