হজের ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত
- দীর্ঘ ১৪০০ বছর সময় ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোতে হজের রীতি-নীতি মৌখিক ও লিখিত আকারে পৌঁছেছে। দুঃখের বিষয় হলো এ দীর্ঘ্য সময়ের ব্যাবধানে কিছু লোক অথবা দল হজের কিছু রীতি-নীতির মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং এটা হওয়া স্বাভাবিকভাবে অনিবার্য ছিল।
- কিছু লোক অথবা দল হজের কিছু রীতি-নীতি ভুলভাবে বুঝেছে এবং তারা তাদের সেই বোধ থেকেই হজের রীতিনীতি পালন করছে। আবার অনেকে হজের পদ্ধতিতে নতুন রীতি ও বিভিন্ন দো‘আ যোগ করেছে। সাধারণভাবে দেখলে এসব রীতি সঠিকই মনে হবে, এর কোনো ত্রুটিই খুজে পাবেন না। মনে হবে এসব রীতি পালন করাও ভালো।
- কিন্তু কথা হলো কেন এসব ভ্রান্ত রীতি বা অতিরিক্ত রীতি পালন করবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজে যা যা করেছেন তার থেকে বেশি করে আপনি কি বেশি আমল অর্জন করতে পারবেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে করেছেন এবং করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন সে সম্পর্কে আপনি যতটুক শুদ্ধ ভাবে জানতে পারেন বা আপনার জ্ঞান অনুসারে আমল করাই কি ভালো নয়? আপনি কি জানেন, ইবাদতে বা আমলে নতুন রীতি তৈরি অথবা নতুন কিছু যোগ করার ফলে আপনার ইবাদতই বাতিল হয়ে যেতে পারে; কেননা তা বিদ‘আত!
- এখন প্রশ্ন আসতে পারে; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজের নিয়ম-কানুন আমি কোথায় পাবো বা কীভাবে জানবো? উত্তর সহজ: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী-এর হজ অধ্যায়ের হাদীস পড়ুন। যদি সব হাদীস পড়ার মতো যথেষ্ট সময় না পান বা সকল হাদীস বই না থাকে তাহলে নির্ভরযোগ্য সুপরিচিত আলেমদের দলীল ভিত্তিক লেখা বই পড়ুন। কয়েকটি বই পড়ে যাচাই করুন। হজের শুদ্ধ রীতি-নীতির সবকিছুই বিভিন্ন বই থেকে পেয়ে যাবেন।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ‘‘তোমরা হজের নিয়ম-কানুন শিখে নাও আমার কাছ থেকে”।[1]
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘‘আমি তোমাদের যা কিছু করতে বলেছি সেই সব ব্যতীত আর কোনো কিছুই তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে না এবং যে সকল বিষয় সতর্ক করেছি সেগুলো ব্যতীত কোনো কিছুই তোমাদের জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে না”।[2]
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘‘যে দীনের মধ্যে এমন কাজ করবে যার প্রতি আমার নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত (বাতিল)”।[3]
- হুযায়ফাহ ইবন আল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘যেসব ইবাদাত (আমল) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ করেন নি, তা তোমরাও করো না”।[4]
- ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মেনে চলো ও নতুন কিছু সৃষ্টি করো না, রাসূলের দেখানো এ পথ আঁকড়ে ধরাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট’’।
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই (বিদ‘আত) পথভ্রষ্টতা, এবং সকল পথভ্রষ্টতা আগুনে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে”।[5]
- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ সম্পন্ন করার পর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائدة: ٣]
‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি‘আমতও পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকেই মনোনিত করলাম”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
- ইসলামের যেকোনো ইবাদতের নির্দেশিকা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কারো এর কম বা বেশি করার কোনো অধিকার বা ক্ষমতা নেই। আমাদের শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা দরকার।
- এ বইয়ে হজের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিবিধ ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত বিষয়গুলো সংযোজন করেছি; কারণ এগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ না করলে হজযাত্রীরা এগুলোকে সাধারণ রীতি-নীতি হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এ ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত বিষয়গুলো বিগত শতাব্দীর প্রথিতযশা হাদীস বিশারদ, আরব বিশ্বে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন আলবানীর ‘আহায্যুকা সাহীহুন’ (আপনার হজ শুদ্ধ হচ্ছে কি?) ও Innovations of Hajj, Umrah & Visiting Madinah. বই থেকে সংগ্রহ করেছি।
[1] আস-সুনানুল কাবরা লিল-বায়হাকী, হাদীস নং ৯৩০৯
[2] মুসনাদে আস শাফে‘ঈ
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭
[4] সহীহ বুখারী
[5] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬
[2] মুসনাদে আস শাফে‘ঈ
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭
[4] সহীহ বুখারী
[5] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬