১। হাফেয ইবনে হাজার (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ

অর্থঃ “আমরা তোমাদের জন্যে পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফুরি করো না।" (সূরা বাকারঃ ১০২) এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাদু শিক্ষা করা কুফর। (ফতহুল বারীঃ ১০/২২৫)

২। ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদু শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া নিষিদ্ধ এবং সকল আহলে ইলমও একথায় একমত যে, তা হারাম। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহেমাহুল্লাহ)-এর অনুসারীগণ বলেন যাদু শিখলে ও শিখালে কাফের হয়ে যায়। সে যদিও যাদুকে অবৈধ বলে বিশ্বাস করে। (আল-মুগনীঃ ১০/১০৬)

৩। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ রাযি (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর বিষয়ে শিক্ষা নেয়া ঘৃণিতও নয় নিষিদ্ধও নয়। কেননা সকল বিজ্ঞ পন্ডিতদের এই বিষেয় ঐক্যমত রয়েছে যে, জ্ঞানার্জন সাধারণভাবে বৈধ। যেমনঃ আল্লাহর বাণী

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

বলো জ্ঞানী ও মূর্খ কি এক সমান? (যুমারঃ ৯)

আরেকটি বিষয় হল যে, যদি যাদু সম্পর্কে ধারণা না থাকে তবে আমরা যাদু ও মু’জেযার মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করতে পারব। এই পার্থক্য নির্ণয় করার জন্যে এ বিষয়ে জানা প্রয়োজন। তাই যাদুর ইলম হাসিল করা নিষিদ্ধ হতে পারে না।

৪ । ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) উপরোক্ত ইমাম রাষীর অভিমত সম্পর্কে বলেনঃ কতগুলো কারণে তা গ্রহণীয় নয়। প্রথমতঃ যদি এই অভিমতকে বুদ্ধিভিত্তিক ও যৌক্তিক হিসেবে গ্রহণ করা হয় যে, যাদু শিক্ষা কোন খারাপ বিষয় নয় তবে কথা হল যে, মু'তাযিলা যারা যুক্তিকে প্রাধান্য দেয় তাদের কাছে যাদু শিক্ষা নিষিদ্ধ। আর যদি মনে করা হয় যে, শরীয়তে কোন নিষেধ নেই তবে এর উত্তর হল যে, আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ

وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ

অর্থঃ “তারা এমন বিষয়ের আনুগত্য করল যা সুলাইমান (আলাইহিস সালাম)-এর যুগে শয়তান পড়ত।" (সূরা বাকারাঃ ১০২) এই আয়াতে যাদু শিক্ষাকে শয়তানের বিষয় বলা হয়েছে।

সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে অথবা যাদুকরের কাছে যাবে সে যেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল।

আল্লামা রাযীর এই কথা বলা যে যাদু নিষিদ্ধ নয় এর পক্ষে কোন সঠিক প্রমাণ নেই। আর যাদুকে মর্যাদাপূর্ণ ইলমের সাথে তুলনা করা এবং আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ

وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ

অর্থঃ জ্ঞানী ও মূর্খ কি এক সমান। (সূরা যুমারঃ ৯)

প্রমাণ হিসেবে পেশ করা সঠিক নয়। কেননা এই আয়াতে শরীয়তসম্মত ইলমের বাহকদের প্রশংসা করা হয়েছে। (যাদুকরের নয়।)

আর এই কথা বলা যে, মুজেযাকে জানতে হলে যাদুকেও জানতে হবে সঠিক নয়, কেননা সর্বাপেক্ষা বড় মু'জেযা আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি অবতীর্ণ এই কুরআন। আর যাদু ও মু'জেযার মাঝে কোন সমঞ্জস্যতা নেই। আরও বিষয় হল যে, সাহাবা, তাবেঈন এমন সকল মুসলিমগণ মু'জেযা সম্পর্কে অবগত ছিলেন তারা যাদু সম্পর্কে ধারণা রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৫)

৫। আল্লামা আবু হাইয়ান স্বীয় কিতাব বাহরুল মুহীত-এ উল্লেখ করেছেন যে, যাদু যদি এমন হয় যে, তাদ্বারা শিরক করা হয় অর্থাৎ শয়তানের ও তারকার বড়ত্ব বর্ণনা ও পূজা করা হয়, তবে তা শিক্ষা করা সকলের ঐক্যমতে হারাম। তা শিক্ষা করা ও তার উপর আমল করা হারাম। অনুরূপ যদি তা দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয় রক্তপাত, স্বামী-স্ত্রী বা বন্ধুদের মাঝে বিছিন্ন সৃষ্টি। তা শিক্ষা করা ও তা আমল করা জায়েয নয়।

আর যা কিছু ভন্ডামী ও ভেল্কিবাজী ও এ ধরণের কিছু তা শিক্ষা করাও উচিত নয়, কেননা তা ভ্রান্ত ও বাতিল যদিও তা দ্বারা খেল-তামাশা উদ্দেশ্য নেয়া হয়। (রাওয়ে বয়ানঃ ১/৮৫)

উপরোক্ত সমস্ত বক্তব্যের মূল কথা হলোঃ যাদু যে প্রকারেরই হোক তার সম্পর্ক খেল-তামাশাই হোক না কেন সর্বাবস্থায় নাজায়েয।