ইমাম রাযী (রাহেমাহুল্লাহ) যাদুকে সাত ভাগে বিভক্ত করেছেন।
১। তারকা পূজারীদের যাদুঃ এরা সাতটি ঘূর্ণায়মান তারকার পূজা করত এবং তাদের বিশ্বাস ছিল যে, এই তারকাসমূহ বিশ্বকে পরিচালনাকারী এবং এগুলোর নির্দেশেই মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গল হয়ে থাকে। আর এগুলোর কাছে আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে প্রেরণ করেছেন।
২। ধারণাপ্রবণ ও কঠিন হৃদয় ওয়ালাদের যাদুঃ কল্পনা ও ধারণা দ্বারা মানুষ খুবই প্রভাবিত; কেননা মানুষের স্থলে রশি অথবা বাশের উপর যত সহজে চলা সম্ভব তা গভীর সমুদ্রে অথবা বিপদজনক কিছুর উপরে বা ঝুলন্ত বাশের উপর চলা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেনঃ যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে, নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়া রুগীর কোন লাল জিনিস দেখা উচিত নয়। এটি শুধু এজন্য যে মানুষের প্রকৃতিই হলো সীমাহীন ধারণাপ্ৰবন।
৩। জ্বিনের সহায়তায় যাদুঃ জিন দু'প্রকারঃ (১) মুমিন ও (২) কাফির। কাফের জিনদেরকেই শয়তান বলা হয় । ইমাম রাযী বলেনঃ যাদুকররা শয়তানদের মাধ্যমে যাদু ক্রিয়া পৌছিয়ে থাকে।
৪। ভেল্কিবাজী ও নজর বন্দীঃ এটি এমন কলাকৌশল যার ফলে মানুষের দৃষ্টি ও মনযোগ সবদিক হতে আকর্ষণ করে কোন নির্ধারিত ক্ষেত্রে গন্ডিভূত করে তাকে আহমক বানিয়ে দেয়।
৫। চমকপ্রদ কর্ম প্রদর্শনমূলকঃ এটি কোন যন্ত্র সেট করে দেখানো হয়। যেমনঃ কোন অশ্বারোহীর নিকট একটি শিঙ্গা রয়েছে যা মাঝে মাঝে এমনি এমনি বেজে ওঠে বা যেমন এ্যালারম ঘড়ি নির্দিষ্ট সময়ে বেজে ওঠে। এমনটি কেউ অন্যভাবে সাজিয়ে যাদু প্রকাশ করে। তিনি বলেনঃ এটি প্রকৃতপক্ষে বাস্তব বিষয়, যাদু নয়, যে এর বিদ্যা অর্জন করবে সে তা করতে সক্ষম।
৬। কোন বিশেষ দ্রব্য ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করেঃ যেমন খাদ্যতে বা তৈলে মিশিয়ে। তিনি বলেনঃ জেনে রাখুন বিশেষ দ্রব্যের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। যেমনঃ ম্যাগনেট।
৭। যাদুকর মানুষের অস্তরের বিশ্বাসকে জয় করে যাদু করে থাকেঃ যেমন সে দাবী করল যে, সে ইসমে আজম জানে এবং জ্বিন তার অনুগত তার এই সব কথার দ্বারা যখন কোন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা হয় এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য করতে না পারে। তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তখন সে তার বুদ্ধিমত্তা হারিয়ে ফেলে সে মুহুর্তে যাদুকরের দ্বারা সম্ভব যা চায় তাই করতে পারে।
* একজনের কথা অন্যজনের নিকটে গোপন, সূক্ষ ও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে লাগান যা মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচারিত। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৮)
ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইমাম রাযী উল্লেখিত অনেক প্রকারই যাদু বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কেননা সবগুলির মধ্যেই সূক্ষতা পাওয়া যায়। আর যাদুর আভিধানিক অর্থ হলো যার কারণ অতি সূক্ষ ও গোপনীয়।” (ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৭)