সকলের সাথে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ করা আল্লাহর প্রিয় ইবাদত। আবু দারদা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:


مَا مِنْ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلاةِ.


‘‘কিয়ামতের দিন কর্মবিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে সুন্দর আচরণ এবং সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই নফল সিয়াম ও নফল সালাত পালনকারীর মর্যাদা লাভ করবে।[1]

জাবির (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:


إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاقًا وَإِنَّ أَبْغَضَكُمْ إِلَيَّ وَأَبْعَدَكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الثَّرْثَارُونَ وَالْمُتَشَدِّقُونَ وَالْمُتَفَيْهِقُونَ


‘‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান লাভ করবে যাদের আচরণ সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় এবং কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে তারা যারা বেশি কথা বলে, যাদের কথায় বা আচরণে অহংকার প্রকাশিত হয় এবং যারা কথাবার্তায় অন্যের প্রতি অবজ্ঞা বা অভদ্রতা প্রকাশ করে।’’[2]

এভাবে আমরা দেখছি যে, সুন্দর আচরণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল, তেমনি অশোভন আচরণ একটি কঠিন পাপ। তবে সকল অশোভন আচরণ নেক আমল বিনষ্ট করে না। ইমাম আবূ হানীফা অশোভন আচরণ বলতে মূলত খোঁটা দেওয়া ও কষ্ট দেওয়া (المن والأذى) বুঝিয়েছেন এবং তিনি বিষয়টি কুরআনের আলোকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

এছাড়া হিংসা-বিদ্বেষ নেক আমল নষ্ট করে বলে বর্ণিত হয়েছে। যুবাইর ইবুনল আউআম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :


دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمْ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلا أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ


‘‘পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে : হিংসা ও বিদ্বেষ। হিংসা-বিদ্বেষ মুন্ডন করে। আমি বলি না যে তা চুল মুন্ডন করে, বরং তা দীনকে মুন্ডন ও ধ্বংস করে। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, মুমিন (বিশ্বাসী) না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরে একে অপরকে ভালো না বাসলে তোমরা মুমিন (বিশ্বাসী) হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এ ভালবাসা প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি শিখিয়ে দিব না? পরস্পরে সালাম প্রদানের রেওয়াজ প্রচলিত রাখবে।’’[3]

এ অর্থে আবু হুরাইরা (রা) থেকে যয়ীফ সনদে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:


إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ


‘‘খবরদার! হিংসা থেকে সাবধান; কারণ হিংসা এমনভাবে নেককর্ম ধ্বংস করে ফেলে, যেভাবে আগুন খড়ি বা খড়কুটো পুড়িয়ে ফেলে।’’[4]

[1] হাদীসটি সহীহ। তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৩৬৩ (কিতাবুল বির্রি ওয়া সিলাহ, বাবু মা জাআ ফী হুসনিল খুলুকি); হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২২; আলবানী, সহীহুল জামি ২/৯৯৮।

[2] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৩৭০। (কিতাবুল বির্রি ওয়াস সিলাহ, বাবু মা জাআ ফী মাআলিল আখলাক)। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

[3] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪, নং ২৫১০, (কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাতি..., বাব ৫৬); আহমদ, আল-মুসনাদ ১/১৬৪, হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/১৮৫, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৩০, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ৩/২৩৭-২৪২, নং ৭৭৭। হাদীসটি হাসান।

[4] আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৭৬ (কিতাবুল আদাব, বাবুন ফিল হাসাদি); আলবানী, যায়ীফুল জামিয়িস সাগীর, পৃ. ৩২৩, নং ২১৯৭।