১২. ১. মুহাদ্দিসের মূল্যায়ন-পদ্ধতি ও নমুনা
পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি যে, কোনো মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনায় ভুল করেছেন কিনা তা নির্ণয় করার জন্য তাঁর বর্ণিত হাদীস অন্যান্য মুহাদ্দিসের বর্ণিত হাদীসের সাথে তুলনা ও নিরীক্ষা করা হয়। এরূপ নিরীক্ষায় প্রত্যেক মুহাদ্দিসেরই কম বেশি কিছু ভুল ধরা পড়ে। কারণ শতশত বা হাজারহাজার হাদীস শুনেছেন, লিখেছেন, মুখস্ত করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে মুহাদ্দিস, তার বর্ণনার মধ্যে মাঝে মধ্যে কিছু ভুল হতেই পারে। এরূপ ভুলের পরিমাণ, তার বর্ণিত মোট হাদীসের মধ্যে ভুলের অনুপাত ও ভুলের গুরুত্ব অনুসারে মুহাদ্দিসের মান নির্ধারণ করেন সমালোচকগণ। আর এক্ষেত্রেই কখনো কখনো মতভেদ হয় তাদের।
মুহাদ্দিসগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) আমানত রক্ষার্থে সর্বোত্তম নিরপেক্ষতার সাথে এরূপ যাচাই বাছাই করেছেন। পাশাপাশি প্রত্যেকেই মানবীয় দুর্বলতায় মাঝে মাঝে ভুল করেছেন। সমালোচনার পদ্ধতি, বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি, ব্যক্তিগত বা আঞ্চলিক বিদ্বেষ, আকীদা বা ফিকহ বিষয়ে মতপার্থক্য ইত্যাদি কারণে কখনো একজন মুহাদ্দিস অন্য মুহাদ্দিসের সামান্য ত্রুটিকে বড় করে ধরেছেন। কখনো বা অনেক বেশি ভুলকে তিনি ছোট করে দেখেছেন।
আগেই বলেছি মুহাদ্দিসদের সমালোচনা কোর্টের বিচারের মতই দলিলভিত্তিক। ‘অমুক মুহাদ্দিস অনেক ভুল করেন’- একথা বলার সাথে সাথে উক্ত মুহাদ্দিস বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করে সে ভুল প্রমাণ করতে হয় এবং ভুলের অনুপাতও বলতে হয়। এজন্য কোনো মুহাদ্দিস এভাবে ভুল বা একপেশে কথা বললে পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ চেষ্টা করলে তা ধরতে পারেন। কারণ উক্ত মুহাদ্দিসের বর্ণিত হাদীসগুলো হাদীসগ্রন্থগুলোতে সংরক্ষিত। যে কোনো মুহাদ্দিস যে কোনো সময়ে ইচ্ছা করলে এগুলোর নিরীক্ষা করতে পারেন। তবে এরূপ নিরীক্ষা গভীর পান্ডিত্য ও ব্যাপক অধ্যয়নের মাধ্যমেই সম্ভব। পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ পূর্ববর্তীগণের মত ও সামগ্রিক অধ্যয়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দশটি নমুনা এখানে উল্লেখ করছি।
(১) হাম্মাদ ইবন আবী সুলাইমান (১২০ হি)
ইমাম আবূ হানীফার বিষয়ে অভিযোগগুলো অনুধাবনের জন্য তাঁর উস্তাদ হাম্মাদ ইবন আবী সুলাইমানকে বুঝতে হবে। ছাত্রের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ সবই উসতাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, কিন্তু ছাত্র যত আক্রমণ ও চরিত্র হননের শিকার হয়েছেন উস্তাদ তত হন নি। কারণ সম্ভবত একটিই: ছাত্রের প্রসিদ্ধির প্রতি বিরোধীদের ঈর্ষা।
তাঁর বিষয়ে ইবন মায়ীন বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য। শুবা বলেন: তিনি সত্যপরায়ণ। অন্য বর্ণনায় শুবা বলেন: তিনি হাদীস মুখস্থ রাখতে পারেন না। ফিকহ নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকেন ফলে হাদীস মুখস্থ করার তাওফীক হয় নি। ইজলী বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য। নাসায়ী বলে: তিনি নির্ভরযোগ্য তবে তিনি মুরজিয়া। ইবন আদী বলেন: তিনি হাদীস বর্ণনায় মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। আবূ হাতিম রাযী বলেন: তিনি সত্যপরায়ণ, তবে তাঁর হাদীস প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ফিকহে সুদৃঢ়, তবে হাদীস বলতে গুলিয়ে ফেলেন। আবূ বকর ইবন আইয়াশ বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবন সাদ বলেন: তিনি হাদীসে দুর্বল ছিলেন। তিনি মুরজিয়া ছিলেন। যখন ফিকহী মাসআলা বলতেন তখন সঠিক বলতেন আর যখন হাদীস বলতেন তখন ভুল করতেন। যুহলী বলেন: তিনি খুব বেশি ভুল করেন।
এখানে আমরা দেখছি যে মুহাদ্দিসগণ একমত যে, তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন, কিন্তু ফিকহী বিষয়ে অত্যধিক ব্যস্ত থাকার কারণে হাদীস বর্ণনায় কিছু দুর্বলতা ছিল। কিন্তু সে দুর্বলতার মান নির্ধারণে তাঁরা মতভেদ করছেন। কেউ বলছেন তাঁর হাদীস মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ বলছেন তা গ্রহণযোগ্য। সামগ্রিক বিচারে ইমাম যাহাবী বলছেন: (ثقة إمام مجتهد): তিনি নির্ভরযোগ্য এবং মুজতাহিদ ইমাম। ইবন হাজার বলেন: (فقيه صدوق له أوهام و رمى بالإرجاء): তিনি ফকীহ সত্যপরায়ণ, তাঁর ভুলভ্রান্তি আছে, তিনি মুরজিয়া হিসেবে অভিযুক্ত।
বুখারীর আদাব গ্রন্থে, মুসলিমের সহীহ গ্রন্থে ও সুনান গ্রন্থসমূহে তাঁর হাদীস সংকলিত। অর্থাৎ মুহাদ্দিসগণ তাঁর হাদীস সহীহ ও হাসান বলে গণ্য করেছেন।[1]
(২) শারীক ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবী নামির (১৪০ হি)
তিনি কূফার বাসিন্দা ছিলেন, পরে মদীনায় বসবাস করেন। তিনি ইমাম আবূ হানীফার বিরোধী ছিলেন। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কেউ তাঁকে গ্রহণযোগ্য এবং কেউ তাঁকে দুবল বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবন সায়ীদ আল-কাত্তান তাঁকে পরিত্যাগ করেন। ইবন মায়ীন বলেন: (لا بأس به) ‘তাঁর বিষয়ে অসুবিধা নেই’। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوى) তিনি শক্তিশালী নন। আবূ দাউদ বলেন: (ثقة) তিনি নির্ভরযোগ্য। ইবনুল জারূদ বলেন: (ليس به بأس و ليس بالقوى) তাঁর বিষয়ে অসুবিধা নেই, তবে তিনি শক্তিশালী নন। সাজী বলেন: তিনি কাদারিয়া আকীদার অনুসারী ছিলেন। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: (صدوق يخطىء) সত্যপরায়ণ ভুল করেন। বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ বলে গণ্য।
(৩) শারীক ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবী শারীক নাখয়ী (১৭৮ হি)
তিনি কূফার কাযি ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে তাঁর হাদীসে ভুলভ্রান্তি খুবই বেশি। তাঁর সমসাময়িক জারহ-তাদীলের প্রসিদ্ধতম ইমাম কাত্তান ও ইবন মাহদী তাঁকে দুর্বল বলে গণ্য করেছেন এবং তাঁর থেকে হাদীস গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন। কাত্তান বলেন: আমি তাঁর পাণ্ডুলিপিতে গোঁজামিল ও গোলমাল দেখেছি। তিনি বলেন: শারীক কিছুই নয়, অর্থাৎ একেবারেই পরিত্যক্ত। পক্ষান্তরে ইবন মায়ীন বলেন: শারীক নির্ভরযোগ্য, তবে তিনি হাদীস ভাল পারেন না এবং ভুল করেন। ইয়াকূব ইবন শাইবা বলেন: তিনি সত্যপরায়ণ তবে মুখস্থশক্তি খুবই দুর্বল। আয্দী ও জূযজানী বলেন: শারীকের মুখস্থ শক্তি খারাপ, তাঁর হাদীস এলোমেলো এবং সে নিজে বিপথগামী। আবূ যুরআ বলেন: শারীক খুবই ভুল করেন। নাসাঈ একস্থানে বলেন: তাঁর বিষয়ে ক্ষতি নেই। অন্যত্র বলেন: তিনি শক্তিশালী নন। দারাকুতনী বলেন: তিনি শক্তিশালী নন। জাওহারী বলেন: তিনি ৪০০ হাদীসের বর্ণনায় ভুল করেছেন। আহমদ ইবন হাম্বাল বলেন: শরীক হাদীস বলার ক্ষেত্রে যা খুশি তাই বলেন, তবে তিনি বিদআতীদের বিরুদ্ধে খুব কঠোর ছিলেন। সামগ্রিক মূল্যায়নে ইবন হাজার বলেন: (صدوق يخطىء كثيرا، تغير حفظه منذ ولى القضاء بالكوفة): সত্যপরায়ণ, খুব বেশি ভুল করেন, কুফার কাযির দায়িত্ব গ্রহণের পর তার স্মৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়।’’
এখানে আমরা দেখছি যে, অধিকাংশ মুহাদ্দিস তাঁকে দুর্বল বলেছেন এবং সকলেই বলেছেন যে, হাদীস নির্ভুলভাবে বলার ক্ষেত্রে তাঁর ভুলভ্রান্তি খুবই বেশি। আর সামগ্রিক মুল্যায়নে তিনি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। ইমাম মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারীও তালীকের জন্য তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ বা হাসান বলে গণ্য করেছেন।[2]
(৪) উসামা ইবন যাইদ লাইসী (১৫৩ হি)
ইমাম আবূ হানীফার সমসাময়িক মদীনার একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস উসামা ইবন যাইদ লাইসী (১৫৩ হি)। ইয়াহইয়া ইবন সায়ীদ কাত্তান তাঁকে দুর্বল বলেন এবং শেষ দিকে পরিত্যাগ করেন। অর্থাৎ তাঁর বিচারে তিনি (متروك); পরিত্যক্ত। আহমদ বলেন: (ليس بشئ): একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এক বর্ণনায় ইবন মায়ীন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। দারিমী বলেন: (ليس به بأس): তাঁর বিষয়ে অসুবিধা নেই। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوي): শক্তিশালী নন। ইজলী বলেন: (ثقة): নির্ভরযোগ্য। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: (صدوق يهم): সত্যপরায়ণ, ভুল করেন। বুখারী (তালীকে), মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন।[3]
(৫) হাস্সান ইবন ইবরাহীম ইবন আব্দুল্লাহ কিরমানী (৮৬-১৮৬হি)
তাবি-তাবিয়ী মুহাদ্দিস ও ফকীহ হাস্সান ইবন ইবরাহীম কিরমান প্রদেশের কাযী ছিলেন। আহমদ তাঁকে সত্যপরায়ণ বলেছেন এবং তাঁর কিছু হাদীস মুনকার বলেছেন। ইবন মায়ীন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। নাসায়ী বলেছেন: ‘‘(ليس بالقوي): তিনি শক্তিশালী নন’’। ইবন আদী বলেন: তিনি সত্যপরায়ণ, তবে তিনি ভুল করতেন, ইচ্ছা করে নয়।’’ উকাইলী, ইবন হিব্বান ও অন্যান্যরাও অনুরূপ বলেছেন। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: ‘(صدوق يخطىء): সত্যপরায়ণ ভুল করতেন।’ বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর বর্ণিত হাদীস ‘সহীহ’ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।[4]
(৬) ইবরাহীম ইবন মুহাজির ইবন জাবির আল-বাজলী
ইমাম আবূ হানীফার সমসাময়িক কূফার অন্য প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুহাদ্দিস ইবরাহীম ইবন মুহাজির ইবন জাবির। তাঁর বিষয়ে কাত্তান বলেন: (ضعيف): দুর্বল। আহমদ বলেন: (لا بأس به): অসুবিধা নেই। ইজলী বলেন: (جائز الحديث) তাঁর হাদীস গ্রহণ করা জায়েয। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوي في الحديث): তিনি হাদীসে শক্তিশালী নন। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার আসকালানী বলেন: (صدوق لين الحفظ): সত্যপরায়ণ, মুখস্থে দুর্বল। ইমাম মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন।[5]
(৭) কাসীর ইবন শিনযীর মাযিনী, আবূ কুর্রা
সমসাময়িক বসরার অন্য তাবি-তাবিয়ী কাসীর ইবন শিনযীর। কাত্তান তাঁকে অগ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন। ইবন মাহদী তাঁর হাদীস বর্ণনা করতেন। ইবন মায়ীন বলেন (ليس بشئ): একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আহমদ ইবন হাম্বাল বলেন: চলনসই... রাবীগণ তাঁকে মেনে নিয়েছেন। আবূ যুরআ বলেন (لين): দুর্বল। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوي): শক্তিশালী নন। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন (صدوق يخطىء): সত্যপারয়ণ ভুল করেন। বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ তাঁর বর্ণিত হাদীস ‘সহীহ’ বলে গণ্য করেছেন তাঁরা।[6]
(৮) ইবরাহীম ইবন ইউসূফ ইবন ইসহাক (১৯৮ হি)
ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র পর্যায়ের কুফার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবরাহীম ইবন ইউসূফ ইবন ইসহাক (১৯৮ হি)। তাঁর বিষয়ে ইবন মায়ীন বলেন: (ليس بشئ) কিছুই নয়, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوي): শক্তিশালী নয়। জূযজানী বলেন: (ضعيف الحديث): হাদীসে দুর্বল। আবূ হাতিম বলেন: (حسن الحديث) তিনি গ্রহণযোগ্য বা হাসান হাদীস বর্ণনাকারী। ইবন আদী তাঁকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। দারাকুতনী তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আবূ দাউদ তাঁকে দুর্বল বলেছেন। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: (صدوق يهم): সত্যপরায়ণ, ভুল করেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন। অর্থৎ তাঁর বর্ণিত হাদীসকে তাঁরা সহীহ হিসেবে গণ্য করেছেন।[7]
(৯) উবাই ইবন আব্বাস ইবন সাহল
মদীনার একজন প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী মুহাদ্দিস উবাই ইবন আব্বাস ইবন সাহল ইবন সা’দ আনসারী। তাঁর বিষয়ে দূলাবী বলেন: (ليس بالقوى): শক্তিশালী নন। ইবন মায়ীন বলেন: (ضعيف): দুর্বল। আহমদ ইবন হাম্বাল বলেন: (منكر الحديث): আপত্তিকর হাদীস বর্ণনাকারী। নাসায়ী বলেন: (ليس بالقوى) শক্তিশালী নয়। বুখারীও বলেছেন: (ليس بالقوي): শক্তিশালী নয়। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: (فيه ضعف): তাঁর মধ্যে দুর্বলতা বিদ্যমান। ইমাম বুখারী তাঁর একটি হাদীস গ্রহণ করেছেন।[8]
(১০) আসবাত ইবন নাসর, আবূ ইউসূফ হামদানী
ইমাম আবূ হানীফার পরের যুগের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আসবাত ইবন নাসর। তাঁর বিষয়ে ইমাম আহমদ বলেন: দুর্বল। আবূ নুআইম ফাদল ইবন দুকাইন বলেন: তাঁর হাদীসগুলি অগ্রহণযোগ্য, সনদগুলি উল্টানো। নাসায়ী বলেন: তিনি শক্তিশালী নন। ইবন মায়ীন বলেন: একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অন্য একবার নির্ভরযোগ্য বলেন। বুখারী বলেন: সত্যপরায়ণ। সামগ্রিক বিচারে ইবন হাজার বলেন: (صدوق كثير الخطأ يغرب): সত্যপরায়ণ, খুব বেশি ভুল করেন, উদ্ভট হাদীস বলেন। ইমাম বুখারী তালীক হিসেবে তাঁর একটি হাদীস গ্রহণ করেছেন। ইমাম মুসলিম তাঁর হাদীস গ্রহণ করেছেন।[9]
[2] ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ৪/২৯৩-২৯৬; তাকরীবুত তাহযীব, পৃষ্ঠা ২৬৬।
[3] ইবন হাজার, তাহযীব ১/১৮৩-১৮৪; তাকরীব, পৃ. ১৫৮।
[4] ইবন হাজার, তাহযীব ২/২১৪-২১৫; তাকরীব, পৃ. ১৩৭।
[5] ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ১/১৪৬; তাকরীবুত তাহযীব, পৃ. ৯৪।
[6] ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩৭৪-৩৭৫; তাকরীব, পৃ. ৪৫৯।
[7] ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ১/১৬০; তাকরীবুত তাহযীব, পৃ. ৯৫।
[8] ইবন হাজার, তাহযীব ১/১৬৩; তাকরীব, পৃ. ৯৬।
[9] ইবন হাজার, তাহযীব ১/১৮৫-১৮৬; তাকরীব, পৃ. ৯৮।