তৃতীয় শতকের মুহাদ্দিসগণের মধ্যে বিদ্যমান ‘আবূ হানীফা’ বিরোধী প্রচারণা আরো ব্যাপকতা লাভ করে চতুর্থ শতকে। আমরা দেখি যে, এ শতক থেকে মুহাদ্দিসগণের মধ্যে মাযহাবী তাকলীদ প্রসার লাভ করে এবং অধিকাংশ মুহাদ্দিসই শাফিয়ী মাযহাব অনুসরণ করতেন। তৎকালীন পরিবেশে মাযহাবী কোন্দল দ্বারা তাঁরা কমবেশি প্রভাবিত হতে লাগলেন। এর প্রভাব আমরা তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে দেখতে পাই। এর বড় উদাহরণ ইবন হিব্বান (রাহ)। তিনি ইমাম আবূ হানীফার বিষয়ে বলেন:
وكان رجلا جدلا ظاهر الورع لم يكن الحديث صناعته، حدث بمائة وثلاثين حديثا مسانيد ماله حديث في الدنيا غيرها أخطأ منها في مائة وعشرين حديثا. إما أن يكون أقلب إسناده أو غير متنه من حيث لا يعلم فلما غلب خطؤه على صوابه استحق ترك الاحتجاج به في الاخبار.
‘‘তিনি একজন ঝগড়াটে-তার্কিক লোক ছিলেন, বাহ্যিক পরহেযগার ছিলেন। হাদীস তাঁর বিদ্যার মধ্যে ছিল না। তিনি মোট ১৩০টি সনদসহ হাদীস বর্ণনা করেছেন। দুনিয়ায় তাঁর বর্ণিত আর কোনো হাদীস নেই। এগুলির মধ্যে ১২০টি হাদীসে তিনি ভুল করেছেন। না জেনে হয় সনদ উল্টে দিয়েছেন অথবা মতন পাল্টে দিয়েছেন। এভাবে নির্ভুল বর্ণনার চেয়ে ভুল বর্ণনার আধিক্যের কারণে তিনি হাদীস বর্ণনায় পরিত্যক্ত বলে গণ্য হন।’’[1]
উল্লেখ্য যে, তৎকালীন হানাফীদের সাথে শাফিয়ী ফকীহ ইমাম ইবন হিববানের অত্যন্ত কঠিন শত্রুতা ছিল। হানাফীগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়াতে তাদের অত্যাচারও বেশি ছিল। ফলে তিনি ইমাম আবূ হানীফার বিরুদ্ধে অত্যন্ত নোংরাভাবে বিষোদ্গার করেছেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে বড় বড় বই লিখেছেন এবং ‘‘মাজরূহীন’’ গ্রন্থের সবচেয়ে বড় অনুচ্ছেদটি তিনি ইমাম আবূ হানীফার কলঙ্ক বর্ণনার জন্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি নিজে যে সকল রাবীকে জালিয়াত বলেছেন, এ অনুচ্ছেদে তাদের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। কোনো মুহাদ্দিস যখন অন্য মুহাদ্দিসের ‘জারহ’ বা ত্রুটি বর্ণনা করেন এবং পারিপার্শিক প্রমাণ থেকে বুঝা যায় যে, তা আকীদা বা মাযহাবী ক্ষোভজড়িত, তাহলে সে ‘জারহ’ বাতিল বলে গণ্য হয়। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ শাফিয়ী ফকীহ ইমাম সুবকীর বক্তব্য আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি। সর্বোপরি, ইমাম ইবন হিব্বান (রাহ)-এর বিষয়ে ইলমুল হাদীসের সাথে পরিচিত সকলেই জানেন যে তাঁর বক্তব্য, সমালোচনা বা ‘‘জারহ’ সাধারণভাবে কঠিন যাচাই ছাড়া গৃহীত হয় না। ইমাম যাহাবী প্রায়ই ইবন হিববানের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করেছেন। একস্থানে তিনি বলেন:
ابن حبان ربما قَصَبَ (جَرَحَ) الثقةَ حتى كأنه لا يدري ما يخرج من رأسه
‘‘ইবন হিব্বান প্রায়ই নির্ভরযোগ্যকে দুর্বল বলেন; এমনকি মনে হয়, তাঁর মাথা থেকে কি বের হচ্ছে তা তিনি নিজেই বুঝেন না।’’[2]
[2] যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ১/৪৪১।