নাবী কারীম (ﷺ) ছিলেন অসামান্য সৌন্দর্যমন্ডিত এবং পরিপূর্ণ স্বভাবের এমন এক ব্যক্তিত্ব, মানব সমাজে কোনকালেও যাঁর তুলনা মেলে না। তিনি ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত এবং সর্বপ্রকার চরিত্র ভূষণে বিভূষিত এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর সংশ্রবে আসা ব্যক্তিমাত্রই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা সম্পদে হৃদয় মন পরিপূর্ণ না করে পারতেন না। জাতি ধর্ম বর্ণ এবং শ্রেণী নির্বিশেষে সকল মানুষেরই তিনি ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু, একান্ত নির্ভরযোগ্য সুহৃদ এবং পরম হিতৈষী আপন জন। তাঁর সাহচর্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণও তাঁর জানমালের হেফাজত, সেবা যত্ম এবং মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যাপারে এতই সচেতন ও তৎপর থাকতেন যে, মানব জাতির ইতিহাসে কোন কালেও এর কোন নজির মেলে না। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও কখনো কুণ্ঠাবোধ করতেন না।
নাবী কারীম (ﷺ)-এর বন্ধু ও সাহাবীগণ (রাযি.) তাঁকে মহববত করতেন আত্মহারার সীমা পর্যন্ত। নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ কিংবা মনে সামান্যতম আঁচড় লাগাটাও তাঁরা বরদাশত করতে পারতেন না। যদিও এ ব্যাপারে তাঁদের গ্রীবা কর্তন করার পর্যায়ে উপনীত হতে হত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য তাঁদের প্রাণাধিক এ ভক্তি ভালবাসার কারণ ছিল মানবত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁকে এত অধিক পূর্ণত্ব প্রদান করা হয়েছিল যা কোন দিন কাউকেও দেয়া হয়নি। আমাদের অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তি করে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে এ পর্যায়ে উপর্যুক্ত বিষয় সমূহের সার সংক্ষেপ লিপিবদ্ধ করছি।
উম্মু মা’বাদ খুযায়ীয়্যাহ এর বর্ণনা : হিজরতের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মু মা’বাদ খুযায়ীয়্যাহ নাম্নী এক মহিলার তাঁবুর পাশ দিয়ে গমন করেন। নাবী কারীম (ﷺ)-এর গমনের পর তাঁর চেহারা মুবারক সম্পর্কে সে মহিলা স্বীয় স্বামীর নিকট যে বর্ণনা চিত্র তুলে ধরেছিলেন তা হচ্ছে এই, ঝকঝকে গাত্রবর্ণ, সমুজ্জ্বল মুখমণ্ডল, সুশোভন দেহ সৌষ্ঠব, লম্বোদর ও টেকো মাথা হতে ত্রুটিমুক্ত, সুমিষ্ট উজ্জ্বলতায় সুস্নাত সুশোভন চিত্র, দীর্ঘ পলক বিশিষ্ট সুরমা সুশোভিত চক্ষু, গাম্ভীর্যমন্ডিত কণ্ঠস্বর, দীর্ঘ গ্রীবা, পরস্পর সন্নিবেশিত চিকন ভ্রূযুগল, জাঁকাল কৃষ্ণ কেশদাম, নীরবতা অবলম্বন করলে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে গাম্ভীর্য, অত্যন্ত আকর্ষণীয় কথনভঙ্গী, সুমিষ্টভাষী, সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন কথাবার্তা না সংক্ষিপ্ত, না অতিরিক্ত, কথা বললে মনে হয় মালা থেকে মুক্তা ঝরছে, মানানসই মধ্যম উচ্চতা বিশিষ্ট দেহ, না স্বাভাবিক দীর্ঘ, না খর্ব, দুই শাখার মধ্যে এক শাখা বিশিষ্ট তিনটির মধ্যে যেটি সব চাইতে তাজা, সুন্দর ও উজ্জ্বলতাপূর্ণ। বন্ধুগণ তাঁর চারপাশে গোলাকৃতি ধারণ করেন। তিনি যখন কোন কিছু বলেন তাঁরা অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করেন। তাঁর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশপ্রাপ্ত হলে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে তা পালন করেন। আনুগত্যশীল, সম্মানিত, সুমিষ্ট ও স্বল্পভাষী।[1]
‘আলী (রাঃ) এর বর্ণনা : নাবী কারীম (ﷺ)-এর গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আলী (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেমানান দীর্ঘকায় কিংবা হ্রস্বকায় কোনটিই ছিলেন না। তিনি ছিলেন এ দুয়ের সমন্বয়ে অত্যন্ত মানানসই মধ্যম দেহী পুরুষ। তাঁর চুলগুলো অতিরিক্ত কোঁকড়ানো ছিল না, কিংবা একেবারে সোজা খাড়াও ছিল না, বরং এ দুয়ের সমন্বয়ে ছিল এক চমৎকার রূপভঙ্গী বিশিষ্ট। তাঁর গন্ডদেশে মাংস বাহুল্য ছিল না। চিবুক ক্ষুদ্রাকার এবং কপাল নীচু ছিল না। তাঁর মুখমণ্ডল ছিল গোলাকার গাত্রবর্ণ ছিল গোলাপী ও বাদামীর সংমিশ্রণ। চোখের পাতা ছিল লম্বাটে গড়নের, সন্ধিসমূহ এবং কাঁধের হাড্ডিগুলো ছিল বড় আকারের, বক্ষের উপরিভাগ থেকে নাভি পর্যন্তত ছিল স্বল্প পশমবিশিষ্ট একটি হালকা বক্ষরেখা, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছিল কেশমুক্ত। হাত ও পাদ্বয় ছিল মাংসল, পথ চলার সময় একটু সম্মুখভাগে ঝুঁকে পা ওঠাতেন এবং এমনভাবে চলতেন যা দেখে মনে হতো যে, যেন কোন ঢালু পথ। যখন কারো প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন তখন সে ব্যাপারে পুরোপুরি মনোযোগী হতেন। তাঁর পৃষ্ঠদেশে উভয় কাঁধের মধ্যভাগে ছিল মোহরে নবুওয়াত। নাবী কারীম (ﷺ) ছিলেন সর্বশেষ নাবী। দানশীলতা, সাহসিকতা এবং সত্যবাদিতায় তিনি ছিলেন সকলের চাইতে শ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা অধিক আমানতের হেফাজতকারী এবং অঙ্গীকার পালনকারী, তিনি ছিলেন সর্বাধিক কোমল স্বভাবের অধিকারী এবং সকলের চাইতে বিশ্বস্ত সহচর এবং নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
কেউ আকস্মিকভাবে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সাক্ষাতপ্রাপ্ত হলে তার অন্তর ভয়ে কম্পিত হত। কেউ তাঁর সঠিক পরিচয় লাভ করলে ঐকান্তিক আন্তরিকতার সাথে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করত। নাবী কারীম (ﷺ)-এর সীরাত বর্ণনাকারীগণ শুধুমাত্র এটুকুই বলতে পারেন যে, তাঁর আগে এবং পরে অনুরূপ কোন ব্যক্তিকেই তাঁর মতো দেখি নি।[2]
আলী (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাথা ছিল বড়, সন্ধির (জোড়ের) হাড্ডিগুলো ছিল ভারী এবং বক্ষপুটে ছিল পশমের দীর্ঘ রেখা। পথ চলার সময় সামনের দিকে এমন ভাবে একটু ঝুঁকে চলতেন যাতে মনে হতো যে, তিনি যেন কোন ঢালু স্থান হতে অবতরণ করছেন।[3]
জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল ছিল প্রশস্ত, চক্ষু ছিল হালকা লাল বর্ণের এবং পায়ের গোড়ালি ছিল পাতলা।[4]
আনাস বিন মালিক বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গাত্রবর্ণ ছিল গৌর, মুখমণ্ডল ছিল অত্যন্ত সুশ্রী ও মাধূর্যমন্ডিত এবং দেহ মুবারক ছিল মাঝারি গড়নের।[5]
আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতের তালু ছিল প্রশস্ত, গাত্রবর্ণ ছিল সাদা এবং বাদামির মাঝামাঝি উজ্জ্বল। মৃত্যু পর্যন্ত চুল ও দাড়ি মুবারক তেমন সাদা হয় নি।[6] শুধু কান এবং মাথার মধ্যবর্তী স্থানে চুলগুলো কিছুটা সাদা হয়েছিল এবং মাথার উপরি ভাগে সামান্য কিছু সংখ্যক চুল সাদা হয়েছিল।[7]
আবূ যুহাইফাহ (রাঃ) বলেছেন, ‘আমি নাবী কারীম (ﷺ)-এর অধরের নিম্ন ভাগে কিছু সংখ্যক সাদা দাড়ি লক্ষ্য করেছি।[8]
আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন : ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর নীচের চুলগুলোর মধ্যে কয়েকটি চুল সাদা ছিল।[9]
বারা’ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর দৈহিক গঠন ছিল মধ্যম ধরণের। উভয় কাঁধের মধ্যে ছিল দূরত্ব এবং কেশরাশি ছিল দু’ কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত। আমি নাবী কারীম (ﷺ)-কে সৌন্দর্যমন্ডিত পোশাকাদি পরিহিত অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছি। নাবী কারীম (ﷺ)-এর চাইতে অধিক সুন্দর কোন কিছু আমি কখনো প্রত্যক্ষ করি নি।[10]
প্রথমাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আহলে কিতাবের সঙ্গে সাদৃশ্য বজায় রেখে চলা পছন্দ করতেন এবং এ কারণে চুলে চিরুনী ব্যবহার করতেন, কিন্তু তাঁর সিঁথি প্রকাশ পেত না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সিঁথি প্রকাশিত।[11]
বারা’ (রাঃ) বলেছেন, ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল ছিল সর্বাধিক সুশ্রী এবং তাঁর আচার আচরণ ছিল সর্বোত্তম।[12] তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল যে, নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল কি তলোয়ারের মতো ছিল? উত্তরে বলা হল, ‘না, বরং পূর্ণ চন্দ্রের মতো ছিল।’ এক বর্ণনায় আছে যে, ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল ছিল গোলাকার।[13]
রুবায়্যি’ বিনতে মুওয়াভ্যিয বলেছেন, ‘যদি তোমরা নাবী কারীম (ﷺ)-কে দেখতে তাহলে মনে হতো যে, তোমরা উদিত সূর্য দেখছ।[14]
জাবির বিন সামুরাহ বলেছেন, ‘আমি এক চাঁদনী রাতে নাবী কারীম (ﷺ)-কে দেখলাম। তাঁর উপর রক্তিম আভা ছড়ানো ছিল। আমি তখন একবার রাসূল (ﷺ)-এর দিকে একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে, চাঁদের চাইতেও তিনি অধিক সুন্দর।[15]
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেয়ে উজ্জ্বলতর কোন চেহারা আমি কক্ষনো দর্শন করিনি। তাঁর চেহারায় যেন সূর্য কিরণের ন্যায় ঝলমল করতো। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেয়ে দ্রুত চলন কারো দেখিনি, জমিন যেন তার কাছে সংকুচিত হয়ে যায়। আমরা খুব কষ্ট করে তার নাগাল পেতাম অথচ এটা তার কাছে কিছুই মনে হতো না।
কা‘ব বিন মালিক বর্ণনা করেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন প্রফুল্ল থাকতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল এরূপ চমকিত হতো যে, মনে হতো যেন তা চন্দ্রের একটি অংশ।[16]
একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন, এমতাবস্থায় যখন তাঁর দেহ মুবারক ঘর্মাক্ত হল তখন তাঁর মুখমণ্ডল উজ্জ্বলতায় ঝলমলিয়ে উঠল। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে আয়িশাহ (রাঃ) আবূ কাবীর হুযালীর এ কবিতার আবৃত্তি করলেন,
وإذا نظرت إِلٰى أسرة وجهه ** برقت كبرق العارض المتهلل
অর্থ: তাঁর মুখমণ্ডলের উজ্জ্বলতার দিকে লক্ষ্য করবে তখন তা এমনভাবে আলোকিত দেখবে যেন ঘনঘটার মধ্য থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।’
আবূ বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখে এ কবিতা আবৃত্তি করতেন,
أمين مصطفى بالخير يدعو ** كضوء البدر زايله الظلام
অর্থ : নাবী কারীম (ﷺ) বিশ্বাসী ছিলেন, মনোনীত এবং পছন্দনীয়। ভালোর দিকে আহবান জানাচ্ছেন, যেন পূর্ণমাত্রার আলো মুখে খেলছে।[17]
উমার (রাঃ) কবি যুহাইয়েরের এ কবিতা আবৃত্তি করতেন যা হারিম বিন সিনান সম্পর্কে বলা হয়েছিল,
لو كنت من شيء سوى البشر ** كنت المضيء لليلة البدر
অর্থ : ‘যদি আপনি মানুষ ছাড়া অন্য কিছুর অন্তর্ভুক্ত হতেন তবে আপনি স্বয়ং চতুর্দশী রাত্রিকে আলোকিত করতেন।’ অতঃপর ইরশাদ করতেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনটিই ছিলেন।[18]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন রাগান্বিত হতেন তখন তাঁর মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করত। মনে হতো যেন গন্ডদ্বয়ের উপর ডালিমের রস সিঞ্চিত হয়েছে।[19]
জাবির বিন সামুরাহ হতে বর্ণিত হয়েছে, নাবী কারীম (ﷺ) -এর পিন্ডলি কিছুটা পাতলা ছিল। তিনি যখন হাসতেন তখন মুচকি হাসতেন। তাঁর চক্ষুদ্বয় ছিল সুরমা বর্ণের। দেখে মনে হতো যে তিনি সুরমা ব্যবহার করেছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে তিনি তা ব্যবহার করেন নি।[20]
‘উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে দাঁতগুলো সব মানুষের চেয়ে সুন্দর ছিল।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখের সম্মুখ ভাগে দুটি দাঁতের মধ্যে কিছু ফাঁক ছিল। তিনি যখন কথা বলতেন তখন তাঁর দাঁত দুটির ফাঁক দিয়ে আলোর আভাষ পাওয়া যেত।[21]
নাবী কারীম (ﷺ)-এর গ্রীবা ছিল যেন চন্দ্রের পরিচ্ছন্নতায় উজ্জ্বল একটি পুতুলের গ্রীবা। দাড়ি মুবারক ছিল ঘন সন্নিবেশিত, ললাট প্রশস্ত, ভ্রূযুগল ছিল বিজড়িত অথচ একটি হতে অন্যটি ছিল পৃথক, নাসিকা সমুন্নত, গন্ডদ্বয় ছিল হালকা গড়নের, গর্দান থেকে নাভি পর্যন্ত ছড়ির ন্যায় বক্ষকেশর একটি সুশোভন রেখা বিদ্যমান ছিল। সে রেখার পশম ব্যতীত বক্ষ এবং পেটের অন্য কোথাও পশম ছিল না। তবে হাতের কবজি এবং কাঁধের উপর পশম ছিল। পেট এবং বক্ষের সম্মুখ ভাগের দিকে দৃষ্টিপাত করে বক্ষ সমতল ও প্রশস্ত প্রতীয়মান হত। হাতের কবজিদ্বয় কিছুটা বড় আকারের, হাতের তালুদ্বয় প্রশস্ত ছিল সোজা, পায়ের পাতা শূন্য এবং আঙ্গুলগুলো কিছুটা বড় সড় আকারের ছিল। চলার সময় সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে সহজ ভাবে চলতেন।[22]
আনাস (রাঃ) বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতের তুলনায় অধিক কোমল এবং মোলায়েম রেশম কিংবা মলমল আমি স্পর্শ করি নি। অধিকন্তু, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দেহ মুবারক নিঃসৃত সুগন্ধির তুলনায় অধিক সুগন্ধিযুক্ত কোন আতর কিংবা মেশক আম্বরের সুগন্ধি আমি গ্রহণ করি নি।[23]
আবূ যুহায়ফা (রাঃ) বলেছেন, ‘রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর হাত মুবারক আমার মুখমণ্ডলের উপর স্থাপন করায় আমি তা বরফের ন্যায় শীতল এবং মেশক আম্বর হতে অধিক সুগন্ধিযুক্ত অনুভব করলাম।[24]
আনাস (রাঃ) বলেছেন, ‘নাবী কারীম (ﷺ)-এর ঘর্মবিন্দু দেখতে মণিমুক্তার মতো মনে হতো এবং উম্মু সুলাইম (রাঃ) বলেছেন, ‘নাবী (ﷺ)-এর ঘর্মরাজি থেকে উত্তম সুগন্ধি প্রকাশ পেত।[25]
জাবির (রাঃ) বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন পথ ধরে চলতেন এবং তার পর অন্য কেউ সে পথ ধরে চললে, তাঁরা (নাবী (ﷺ)-এর) দেহ নিঃসৃত সুগন্ধি থেকে বুঝতে পারতেন যে, নাবী কারীম (ﷺ) এ পথে গমন করেছেন।[26]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দু’ কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল ‘মোহর নবুওয়াত’। আকার আকৃতি ছিল কবুতরের ডিমের ন্যায় এবং তা ছিল পবিত্র গাত্রবর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ মোহরের অবস্থিতি ছিল বাম কাঁধের নরম হাড়ের নিকট। এ মোহরের উপর ছিল সবুজ রেখার ন্যায় তিলের সমাহার।[27]
[2] ইবনু হিশাম ১ম খন্ড ৪০১-৪০২ পৃঃ। তিরমিযী তোহফাতুল আহওয়াযী সহ ৪র্থ খন্ড ৩০৩ পৃঃ।
[3] তিরমিযী মা‘য়া শরহ।
[4] সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৮ পৃঃ।
[5] সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৮ পৃঃ।
[6] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃঃ।
[7] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃ: ও সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৯ পৃঃ।
[8] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০১ -৫০২ পৃ: ।
[9] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃঃ।
[10] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃঃ।
[11] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০৩ পৃঃ।
[12] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃ: ও সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৯ পৃঃ।
[13] সহীহুল মুসলিম দারেমী, মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ৫১৭ পৃঃ।
[14] তিরমিযী শামায়েলের মধ্যে পৃ: ২ দারমী মিশকাত ২য় খন্ড ৫১৭ পৃঃ।
[15] শারহা তোহফা সহ তিরমিযী ৪র্থ ৩০৬ পৃঃ, মিশকাত ২য় খন্ড ৫১৮ পৃঃ।
[16] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০২ পৃঃ।
[17] খোলাসাতুস সিয়ার ২০ পৃঃ।
[18] খোলাসাতুস সিয়ার ২০ পৃঃ।
[19] মিশকাত ১ম খন্ড ২২ পৃঃ, তিরমিযী কাদার অধ্যায় ভাগ্য সম্পর্কে খোঁজে কঠোরতা ২য় খন্ড ৩৫ পৃঃ।
[20] জামে তিরমিযী সারাহ সহ ৪র্থ খন্ড ৩০৬ পৃঃ।
[21] তিরমিযী, মিশকাত ২য় খন্ড ৫১৮ পৃঃ।
[22] খোলাসাতুস সিয়ার ১৯-২০ পৃঃ।
[23] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫০৩ পৃঃ, সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৭ পৃঃ।
[24] সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ২৫৬ পৃঃ।
[25] সহীহুল মুসলিম ।
[26] দারমী, মিশকাত, ২য় খন্ড ৫১৭ পৃঃ।
[27] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ২৫৯ ও ২৬০ পৃঃ।