যে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে এ যুদ্ধের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের নিপতিত করা হয়েছিল যদিও সে প্রতিশোধ গ্রহণ সম্ভব হয় নি, তবুও মুসলিমগণের জন্য তার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মুসলিমগণ যে একটি অকুতোভয় জাতি এবং কোন পার্থিব শক্তি তা যত বিশালই হোক না কেন তার কাছে যে তাঁরা মাথা নোয়াতে পারেন না, তা আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, মুসলিমগণের শৌর্যবীর্যের কথাও বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ল এবং এর ফলশ্রুতিতে সমগ্র আরব জাহান স্তম্ভিত ও হতচকিত হয়ে পড়ল। কারণ, তদানীন্তন রোমক শক্তি ছিল পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎশক্তি। শত্রুভাবাপন্ন আরব জাহান মনে করে ছিল রোমক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারটি হবে মুসলিমগণের জন্য আত্মহত্যার শামিল। কিন্তু মাত্র তিন হাজার সৈন্যর একটি বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ও সুদক্ষ দুই লক্ষ সৈন্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদ পশ্চাদপসরণে সক্ষম হওয়ার ব্যাপারটি ছিল একটি অচিন্তণীয় ব্যাপার। অধিকন্তু, আরব জাহানের নিকট এ সত্যটিও উদঘাটিত হয়ে গেল যে, আরব ভূখন্ডে যে ধরণের লোকজন সম্পর্কে তাদের পরিচিতি ছিল, মুসলিমগণ সে সব হতে ভিন্নতর অনন্যসাধারণ একটি গোষ্ঠি। এরা হচ্ছেন আল্লাহর তরফ থেকে সাহায্য ও সহানুভূতি প্রাপ্ত এবং তাঁদের পরিচালক প্রকৃতই আল্লাহর রাসূল (ﷺ)।
এমনি এক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই যে, আরবের যে সকল গোত্র মুসলিমগণের প্রতি বৈরিতা পোষণ করত এবং কারণে অকারণে যখন তখন তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতো মুতাহ’ যুদ্ধের পর তারাও ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হল। এদের মধ্যে বনু সুলাইম, আশজা’, গাত্বাফান, যুবইয়ান এবং ফাযারাহ ও অন্যান্য কতগুলো গোত্র ইসলাম গ্রহণ করল। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই রোমকদের সঙ্গে মুসলিমগণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আরম্ভ হয়ে যায়, যার ফলে পরবর্তী সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দেশ বিজয় এবং দূর দূরান্তের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর মুসলিমগণের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।