জীবন বাজী রেখে যতই বীরত্ব এবং সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করুক না কেন এটা অতীব আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, অত্যন্ত রণ পিপাসু ও রণ কুশলী বিশাল রোমীয় বাহিনীর মোকাবেলায় মুসলিমগণের ছোট্ট একটি বাহিনী পর্বতের ন্যায় অটল থাকবে এবং তার চাইতেও আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল খালিদ বিন ওয়ালীদের রণ প্রজ্ঞা ও রণ নৈপুণ্য। মুতাহর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধের ভয়াবহ বিভীষিকা থেকে সম্মানের সঙ্গে বের করে আনার ব্যাপারে তিনি যে রণ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ইসলামের ইতিহাসে চিরদিনের জন্য তা স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে এবং প্রত্যেক মুসলিমগণের জন্য তা গর্ব ও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
এ যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাদির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে, যুদ্ধের প্রথম দিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রোমীয়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বক্ষণই অটল থাকেন। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তিনি এমন এক রণ কৌশল অবলম্বন করেন যা রোমীয়গণের মনে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং ভীতির সঞ্চার করে এবং অত্যন্ত দক্ষতা ও নিরাপত্তার সঙ্গে মুসলিম বাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করে নিতে সক্ষম হন। তাঁর এ রণ কৌশলের কারণেই রোমীয় বাহিনী পশ্চাদ্ধাবন করার সাহস পায়নি। সৈন্য সংখ্যার ব্যাপারে এ যুদ্ধ ছিল দারুণ অসম দু’ পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ। কাজেই, মুসলিমগণের সসম্মানে পশ্চাদপসরণ ছিল অনিবার্য। কিন্তু পশ্চাদপসরণের ক্ষেত্রে শত্রু পক্ষের পশ্চাদ্ধাবনের ভয়ও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) শত্রুদেরকে পশ্চাদ্ধাবনের প্রলুব্ধতা থেকে শুধু যে বিরত রেখেছিলেন তাই নয় বরং তারা কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত্রও হয়ে পড়েছিল।
তাঁর পরিবর্তিত রণ কৌশলের প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় দিবসে প্রভাতে তিনি নতুন এক ধারায় তাঁর বাহিনীকে বিন্যস্ত করে নেন। এ বিন্যাস সাধন করতে গিয়ে তিনি সম্মুখ ভাগের দলকে পশ্চাদ ভাগে এবং পশ্চাদ ভাগের দলকে সম্মুখ ভাগে, ডান পাশের দলকে বাম পাশে এবং বাম পাশের দলকে ডান পাশে স্থানান্তরিত করেন। পরিবর্তিত বিন্যাস ধারা প্রত্যক্ষ করে শত্রু চমকিত হয়ে ভাবল যে তাঁরা নতুন ভাবে সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছে। এর ফলে তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয়ে গেল। এরপর উভয় পক্ষের সৈন্যগণ যখন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) সুশৃঙ্খল ভাবে বিন্যস্ত মুসলিম বাহিনীকে ধীরে ধীরে পিছনের দিকে সরিয়ে নিতে শুরু করেন। কিন্তু রোমীয়গণ এই ভেবে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল না যে, মুসলিমগণ হয় তো এমন এক কৌশল অবলম্বন করেছেন যার মাধ্যমে তাদেরকে মরু প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত হতে পারে এবং তেমনি যদি হয়ে যায় তাহলে তাদেরকে দারুণ দূর্বিপাকে নিপতিত হতে হবে। এর ফলে রোমীয়গণ মুসলিমগণকে পশ্চাদ্ধাবন করার পরিবর্তে নিজ অঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারটিকেই প্রাধান্য দিয়ে স্বস্থানে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রস্থান করল। এ দিকে মুসলিমগণ নিরাপদে পশ্চাদপসরণ ক’রে মদীনা প্রত্যাবর্তন করল।[1]