খায়বার বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মনের দিক দিয়ে যখন কিছুটা মুক্ত হলেন তখন ওয়াদিল কুরা বা কুরা উপত্যকায় গমন করলেন। সেখানে ইহুদীদের একটি দলের বসবাস ছিল। এক পর্যায়ে আরবদের একটি দল গিয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।

মুসলিমগণ যখন কোরা উপত্যকায় অবতরণ করলেন তখন ইহুদীগণ তাঁদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে আক্রমণ করল। তারা পূর্ব হতেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল। তাদের এ আক্রমণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একজন দাস মৃত্যুমুখে পতিত হল। লোকজনেরা বললেন, ‘তার জন্য জান্নাত বরকতময় হোক। নাবী কারীম (ﷺ) বললেন,

(‏كَلَّا، وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِيْ أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنْ الْمَغَانِمِ، لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمَ، لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا‏)

‘কখনই না। সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে রয়েছে আমার জীবন, খায়বার যুদ্ধে এ ব্যক্তি যুদ্ধ লব্ধ মাল হতে বন্টনের পূর্বেই যে চাদর খানা চুরি করেছিল তা আগুনে পরিবর্তিত হয়ে ওর জন্য দীপ্তিমান হয়ে উঠেছে। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এ কথা শুনে একটি ফিতা, দুটি ফিতা কিংবা যিনি যে জিনিস গোপনে নিয়ে গিয়েছিলেন সে সব রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খিদমতে এনে হাজির করলেন। নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, ‏(‏شِرَاكٌ مِّنْ نَّارٍ أَوْ شِرَاكَانِ مِنْ نَّارٍ‏)‏‏ ‘এ একটি কিংবা দুটি ফিতা ছিল আগুনের।’’[1]

অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধের উপযোগী সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ করলেন। সমগ্র বাহিনীর পতাকা সা‘দ বিন উবাদাহর হাতে সমর্পণ করলেন। একটি পতাকা দিলেন হুবাব বিন মুনযিরকে এবং তৃতীয় পতাকা দিলেন উবাদাহ বিন বিশরকে। এরপর ইহুদীদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন। এ দাওয়াত গ্রহণ না করে তাদের এক ব্যক্তি যুদ্ধের জন্য ময়দানে অবতরণ করল। আল্লাহর নাবী (ﷺ)-এর পক্ষে যুবাইর বিন ‘আউওয়াম (রাঃ) যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করলেন। অতৎপর ইহুদীদের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় ব্যক্তি ময়দানে অবতীর্ণ হলেন। যুবাইর (রাঃ) তাকেও হত্যা করলেন। এরপর তাদের পক্ষ থেকে তৃতীয় ব্যক্তি ময়দানে অবতরণ করলেন। এর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আলী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাকে হত্যা করলেন। এভাবে একে একে তাদের ১১ ব্যক্তি নিহত হয়। যখন একজন নিহত হতো তখন নাবী কারীম (ﷺ) অবশিষ্ট ইহুদীগণকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।

ঐ দিন যখন সালাতের সময় হতো তখন সাহাবাদের নিয়ে নাবী কারীম (ﷺ) সালাত পড়তেন। সালাতের পর পুনরায় ইহুদীদের সামনে ফিরে যেতেন এবং তাঁদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করতেন।

এভাবে যুদ্ধ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন সকালে পুনরায় গমন করলেন। তখনো সূর্য বর্শা বরাবর উপরে ওঠেনি এমন সময় তাদের হাতে যা কিছু ছিল তা সম্পূর্ণ নাবী কারীম (ﷺ)-এর হাতে সমর্পণ করে দিল। অর্থাৎ নাবী (ﷺ) শক্তি দিয়ে বিজয় অর্জন করেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পদসমূহের সবটুকুই নাবী কারীম (ﷺ)-এর হাতে গণীমত হিসেবে প্রদান করেন। বহু সাজ-সরঞ্জামাদি সাহাবীগণ (রাযি.)-এর হস্তগত হয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওয়াদিল কুরা নামক স্থানে চার দিন অবস্থান করেন এবং যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সাহাবীগণ (ﷺ)-এর মধ্যে বন্টন করে দেন। তবে জমিজমা খেজুরের বাগানগুলো ইহুদীদের হাতেই ছেড়ে দেন এবং খায়বারবাসীগণের অনুরূপ ওয়াদিল কোরাবাসীগণের সঙ্গেও একটি চুক্তি সম্পাদন করেন।[2]

[1] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬০৮ পৃঃ।

[2] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৪৬ পৃঃ।