সহীহুল বুখারীর একটি দীর্ঘ হাদীসে এ পত্রখানার বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। নাবী কারীম (ﷺ) এ পত্রখানা রোম সম্রাট হিরাক্বল এর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। এ পত্রখানার বিষয়বস্তু হচ্ছে নিম্নরূপ :
(بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ . مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ إِلٰى هِرَقِلَ عَظِيْمِ الرُّوْمِ، سَلَامٌ عَلٰى مَنْ اِتَّبَعَ الْهُدٰي، أَسْلِمْ تَسْلَمْ أَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ، فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمُ الْأُرَيْسِيِّيْنَ (يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلٰى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوْا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُوْنَ)) [آل عمران:64].
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হিরাক্বল (হিরাক্লিয়াস) এর প্রতি-
সেই ব্যক্তির উপর সালাম যে হেদায়াতের অনুসরণ করে চলবে। আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন নিরাপদে থাকবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান করবেন। কিন্তু যদি আপনি মুখ ফিরিয়ে নেন তাহলে আপনার উপর প্রজাবৃন্দেরও পাপ বর্তাবে। হে আল্লাহর গ্রন্থপ্রাপ্ত সম্প্রদায়! এমন এক কথার প্রতি আসুন যা আমাদের ও আপনাদের মাঝে সমান তা এই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও উপাসনা করব না, তাঁর সঙ্গে কাউকেও শরীক বা অংশীদার করব না। তা সত্ত্বেও যদি লোকজন মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও যে, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।[1]
এ পত্র প্রেরণের জন্য নাবী কারীম (ﷺ) দূত মনোনীত করলেন দাহয়াহ বিন খলীফা কালবীকে। নাবী (ﷺ) তাঁকে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, তিনি যেন এ পত্র খানা বসরার প্রধানের নিকট সমর্পণ করেন। অতঃপর তিনি সেটা পৌঁছে দেবেন ক্বায়সারের নিকট। এরপর এ প্রসঙ্গে যা কিছু সংঘটিত হয়েছিল তাঁর বিবরণ সহীহুল বুখারীতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফইয়ান বিন হারব তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হিরাক্বল তাঁকে একটি কুরাইশ দলের সঙ্গে ডেকে পাঠান। এ দলটি হুদায়বিয়াহ সন্ধিচুক্তির আওতায় নিরাপত্তা লাভ হেতু শামদেশে গিয়েছিল ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে। এঁরা ঈলিয়া (বায়তুল মুক্বাদ্দাস) নামক স্থানে তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন।[2]
হিরাক্বল তাঁদেরকে তাঁর দরবারে আহবান করলেন। ঐ সময় তাঁর পাশে রোমের প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর দোভাষীর মাধ্যমে মুসলিমগণের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে নাবী বলে দাবী করেছেন তাঁর সঙ্গে আপনাদের মধ্যে কে সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ট?’ আবূ সুফইয়ানের বর্ণনা যে, ‘আমি বললাম, আমি সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ট।’
হিরাক্বল বললেন, ‘তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো এবং তার সঙ্গী সাথীদেরকেও তার পেছনে বসাও।’’
এরপর হিরাক্বল নিজ দোভাষীকে বললেন, ‘আমি এ ব্যক্তিকে এ নাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এ যদি মিথ্যা বলে তবে তোমরা তা মিথ্যা বলে প্রমাণ করবে।’
আবূ সুফইয়ান বলল, ‘আল্লাহর কসম! মিথ্যা বলার কারণে আমাকে মিথ্যুক বলে আ্যখায়িত করার ভয় যদি না থাকত তবে আমি অবশ্যই নাবী (ﷺ) সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।’
আবূ সুফয়ান বলেছেন, ‘এরপর নাবী (ﷺ) সম্পর্কে হিরাক্বল আমাকে প্রথম যে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিলেন তা হচ্ছে তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা কেমন?
আমি বললাম, ‘তিনি উচ্চ বংশোদ্ভূত।’
হিরাক্বল বললেন, ‘তবে এ কথা তাঁর পূর্বে তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ কি বলেছিল।?’
আমি বললাম, ‘না’’, হিরাক্বল পুনরায় বললেন, ‘তাঁর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কেউ কি রাজা ছিল? আমি বললাম, ‘না’। হিরাক্বল বললেন, ‘আচ্ছা তবে সম্মানিত লোকজন তাঁর অনুসরণ করেছে, না দুর্বল লোকজন?’
আমি বললাম, ‘বরং দুর্বল লোকজন।’
হিরাক্বল জিজ্ঞেস করলেন, ‘এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে?’
আমি বললাম, ‘কমছে না, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
হিরাক্বল বললেন, ‘এ দ্বীন গ্রহণের পর কোন ব্যক্তি কি বিদ্রোহী হয়ে ধর্মত্যাগ করছে?’
আমি বললাম, ‘না’
হিরাক্বল বললেন, ‘তিনি যখন থেকে এ সব কথা বলছেন তাঁর পূর্বে কি তাঁকে তোমরা কোন মিথ্যার সঙ্গে জড়িত দেখেছ?’
আমি বললাম, ‘না’
হিরাক্বল বললেন, ‘তিনি কি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন?’
আমি বললাম, না, তবে এখন আমরা তাঁর সঙ্গে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছি। এর মধ্যে বেশ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। জানি না, এ ব্যাপারে এরপর তিনি কী করবেন।’
এ প্রসঙ্গে আবূ সুফইয়ান বলেছেন যে, এ বাক্যটি ছাড়া অন্য কথা তাঁর বিপক্ষে বলার সুযোগ আমি পাই নি।
হিরাক্বল বললেন, ‘কোন সময় তাঁর সঙ্গে কি তোমরা যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়েছ?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’
হিরাক্বল বললেন, ‘তোমাদের এবং তাঁর যুদ্ধের অবস্থা কিরূপ ছিল?
আবূ সুফইয়ান বললেন, আমাদের ও তাঁর মাঝে যে যুদ্ধ হয়েছিল তা ছিল বালতির ন্যায় অর্থাৎ তিনি আমাদের পরাজিত করেছেন এবং আমরা তাঁকে পরাজিত করেছি।’
হিরাক্বল বললেন, ‘তিনি তোমাদেরকে কী ধরণের কথাবার্তা এবং কাজকর্মের নির্দেশ করেন?’
আমি বললাম,
يقول: اعبدوا الله وحده ولا تشركوا به شيئا واتركوا ما يقول اٰباؤكم ويأمرنا بالصلاة والصدق والعفاف والصلة
‘তিনি আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করতে, তাঁর সঙ্গে কাউকেও শরীক না করতে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা যা বলতেন তা ছেড়ে দিতে, সালাত কায়েম করতে, সত্যবাদিতা, পাপ এড়িয়ে চলা ও পুণ্যশীল আচরণ করতে এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিতেছেন।’
এরপর হিরাক্বল তাঁর দোভাষীকে বললেন, ‘তুমি ঐ ব্যক্তিকে (আবূ সুফইয়ানকে) বল যে, আমি এ নাবীর সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম তখন তুমি বললে যে, তিনি হচ্ছেন উচ্চবংশোদ্ভূত ব্যক্তি। এটাই নিয়ম যে নিজ জাতির ক্ষেত্রে নাবীগণ উচ্চ বংশীয় হয়ে থাকেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, (নবুওয়াতের) এ কথা তাঁর পূর্বেও কি তোমাদের মধ্যে কেউ বলেছিল? তুমি উত্তর দিয়েছ ‘না’। আমি বলছি যে, এর পূর্বে অন্য কেউ যদি এ কথা বলে থাকত তাহলে আমি বলতাম যে এ ব্যক্তি এমন এক কথার অনুকরণ করছে যা এর পূর্বে বলা হয়েছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম যে তাঁর পিতা কিংবা পিতৃব্যের মধ্যে কেউ কি বাদশাহী করেছেন। এর উত্তরে তুমি বলেছ, ‘না’’। এ প্রসঙ্গে আমি বলছি যে, যদি পিতা কিংবা পিতৃব্যের মধ্য হতে কেউ বাদশাহী করেছেন বলে প্রমাণিত হতো তাহলে বলতাম যে, এ ব্যক্তি পিতা কিংবা পিতৃব্যের রাজত্বের দাবীদার হওয়ার প্রেক্ষাপটেই এ কথা বলছেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইতোপূর্বে তাঁকে কি মিথ্যুক বলে দোষারোপ করা হয়েছে? তুমি বললে, ‘না’ আমি ভাল ভাবেই জানি যে, যে লোক মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচরণ করে না সে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, তাঁর অনুসরণকারীগণ বিত্তশালী ও প্রভাবশালী লোক, না নিম্নবিত্ত ও দুর্বলতর শ্রেণীর লোক। তার উত্তরে তুমি বললে যে, দরিদ্র এবং দুর্বলতর শ্রেণীর লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এ শ্রেণীর লোকেরাই পয়গম্বরদের অনুসারী হয়ে থাকেন।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, ‘এ দ্বীনে প্রবেশ করার পর কি কেউ বিরক্ত হয়ে মুরতাদ হয়ে যায়?’ উত্তরে তুমি বলেছ, ‘না’। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি হচ্ছে, দ্বীনে প্রবেশকারী ব্যক্তি ঈমানের আস্বাদ পেয়ে গেলে এরূপই হয়ে থাকে।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তিনি কি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে থাকেন?
উত্তরে তুমি বলেছিলে, ‘না’।
পয়গম্বরের ব্যাপার এ রকমই হয়ে থাকে। তিনি কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না।
আমি এ প্রশ্নও করেছিলাম যে, তিনি কী ধরণের কথা এবং কাজের নির্দেশ প্রদান করেছেন? উত্তরে তুমি বললে যে, তিনি একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করতে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকেও শরীক না করার জন্য বলেছেন। অধিকন্তু, মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকতে, সলাত কায়েম করতে এবং সত্যবাদিতা, মিথ্যাচারিতা হতে বেঁচে থাকতে ও পূণ্যশীলতা অবলম্বন করতে বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে এখন কথা হচ্ছে, তাঁর সম্পর্কে তুমি যা কিছু বলেছ তা যদি সঠিক ও সত্য হয়, তাহলে এ ব্যক্তি খুব শীঘ্রই আমার দু’ পদতলের জায়গার অধিকার লাভ করবেন। আমার জানা ছিল যে, এ নাবীর আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু আমার ধারণা ছিল না যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে আসবেন। যদি নিশ্চিত হতাম যে আমি তাঁর নিকট পৌঁছতে সক্ষম হব তাহলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কষ্ট স্বীকার করতাম। আর যদি তাঁর নিকটবর্তী হতাম তাহলে তাঁর পদদ্বয় ধৌত করে দিতাম।’
এরপর হিরাক্বল রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর প্রেরিত পত্রখানা চেয়ে নিয়ে পাঠ করলেন। পত্রখানা পাঠ করে যখন শেষ করলেন তখন সেখানে শ্রুত কণ্ঠস্বরসমূহ ক্রমান্বয়ে উচ্চমার্গে উঠতে থাকল এবং শেষ পর্যন্ত খুব শোরগোল সৃষ্টি হয়ে গেল। হিরাক্বলের নির্দেশে আমাদের তখন সেখান থেকে বের করে দেয়া হল। আমাদের যখন বাইরে নিয়ে আসা হল তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, ‘আবূ কাবশার[3] ছেলের ব্যাপারটি বড় শক্তিশালী হয়ে গেল। তার সম্পর্কে বনু আসফার[4] (রোমীয়দের) সম্রাট ভয় করছেন। আমার বিশ্বাস হচ্ছে যে, এর পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দ্বীন জয়যুক্ত হয়ে যাবে। এমনকি আল্লাহ আমার অন্তরে ইসলামের স্থান করে দিলেন।
এ ক্বায়সারের উপর নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুবারক পত্রের যে প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল তা আবূ সুফইয়ান নিজেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এ মুবারক পত্র যে ক্বায়সারকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল তার দ্বিতীয় প্রমাণ হচ্ছে, এর প্রভাবে তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দূত দাহইয়া কালবী (ﷺ)-কে অর্থ সম্পদ এবং মূল্যবান পোশাক দ্বারা পুরস্কৃত করেছিলেন। কিন্তু দাহইয়া কালবী (রাঃ) যখন এ সকল উপঢৌকনসহ প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন হুসমা নামক স্থানে জোযাম গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক তাঁর কাছ থেকে সব কিছু লুট পাট করে নিয়ে যায়। দেহয়া মদীনা প্রত্যাবর্তনের পর নিজ গৃহে না গিয়ে খিদমতে নাবাবীতে উপস্থিত হন এবং নাবী কারীম (ﷺ)-কে সব কিছু অবহিত করেন।
ঘটনা সবিস্তারে অবগত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যায়দ বিন হারিসাহ (ﷺ)-এর নেতৃত্বাধীনে পাঁচ শত সাহাবা কেরামের (রাঃ) একটি দলকে হুসমা অভিমুখে প্রেরণ করেন। যায়দ (রাঃ) রাত্রিবেলা অতর্কিতভাবে জুযাম গোত্রের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে তাদের কিছু সংখ্যক লোককে হত্যা করেন এবং বেশ কিছু সংখ্যক গবাদি পশু ও মহিলাকে আটক করে নিয়ে আসেন। গবাদি পশুর মধ্যে ছিল এক হাজার উট ও পাঁচ হাজার ছাগল। আটককৃতদের মধ্যে ছিল এক শত মহিলা এবং শিশু।
যেহেতু নাবী কারীম (ﷺ) এবং জোযাম গোত্রের মধ্যে পূর্ব হতেই সন্ধিচুক্তি বলবৎ ছিল সেহেতু এ গোত্রের অন্যতম নেতা যায়দ বিন রিফাআ’হ জুযামী কালবিলম্ব না করে নাবী কারীম (ﷺ) সমীপে উপস্থিত হয়ে বাদানুবাদ ও বিতর্কে লিপ্ত হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করলেন। এ গোত্রের কিছু লোকজনসহ যায়দ বিন রিফাআ’হ পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে দাহয়াহ কালবী যখন ডাকাত দলের কবলে পতিত হলেন তখন তিনি তাঁর সাহায্যও করেছিলেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রতিবাদ গ্রহণ করে গণিমতের সম্পদে এবং আটককৃতদের ফেরতদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সাধারণ যুদ্ধের ইতিহাস বিশারদগণ উল্লেখিত ঘটনাকে হুদায়াবিয়া সন্ধির পূর্বের ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু তা হচ্ছে চরম ভ্রান্তির ব্যাপার। কারণ, ক্বায়সারের নিকট মুবারক পত্র প্রেরণের ঘটনাটি ছিল হুদায়বিয়াহ সন্ধির পরের। এ জন্যই আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন যে, এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল নিঃসন্দেহে হুদায়বিয়াহ সন্ধির পরে।[5]
[2] ঐ সময় কায়সার সে কথার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য হিমস হতে ঈলিয়া (বায়তুল মোকদ্দাস) গিয়েছিল যে, আল্লাহ তার হাতে পারস্যবাসীকে পরাজিত করেছে। (সহীহুল মুসলিম ২য় খন্ড ৯৯ পৃঃ) এর বিস্তারিত বিবরণ হচেছ পারস্যবাসী খসরু পারভেজকে হত্যা করার পর রোমীদের নিকট হতে তাদের দখলকৃত অঞ্চলসমূহ ফেরতের শর্তে সন্ধি করল এবং তারা ক্রুমও ফেরত দিল। যে কারণে খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস যে এর উপর ঈ্যসা (আঃ)-কে ফাঁসী দেয়া হয়েছিল। উ্ক্ত সন্ধির পর কায়সার ক্রুশকে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং প্রকাশ্যে বিজয়ের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দের অর্থাৎ ৭ম হিজরী তে (ঈলিয়া) বায়তুল মোকাদ্দাস গিয়েছিল।
[3] অবু কাবশার ছেলে বলতে স্বয় নাবী কারীম (সাঃ)-কে বুঝান হয়েছে। নাবী কারীম (সাঃ)-এর দাদা কিংবা নানা উভয়ের মধ্যে কোন এক জনের উপনাম ছিল আবূ কাবশা। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এ উপনামটি ছিল নাবী কারীম (সাঃ)-এর দুধ পিতার, অর্থাৎ হালীমাহ সা’দিয়ার স্বামীর। যাহোক, আবূ কাবশা নামটির পরিচিতি তেমন একটা ছিল না। তৎকালীন আরবের একটি নিয়ম ছিল এ রকম যে, কেউ কারো দোষ বাহির করার ইচ্ছা করত তখন তাকে তার পূর্ব পুরুষদের মধ্যে হতে কোন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে দেয়া হত।
[4] বনু আসফার বলতে আসফারের সন্তান বুঝানো হয়েছে। আসফার অর্থ হলুদ রঙ। রোমীদেরকে বনু আসফার বলা হত। কারণ রোমের যে ছেলের মাধ্যমে রোমীয় বংশের উদ্ভব হয়েছিল কোন কারণে সে আসফার উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
[5] দ্রষ্টব্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রচিত যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১২২ পৃঃ, তালকিহুল ফোহুমের পৃষ্ঠার হাশিয়াহ ২৯ পৃঃ।