এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি মদীনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবূ লুবাবাহ ইবনু আব্দুল মুনযির (রাঃ)-এর উপর অর্পণ করে স্বয়ং হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর হাতে মুসলিমদের পতাকা প্রদান করে আল্লাহর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বনু ক্বাইনুক্কা’র দিকে ধাবিত হলেন। ইহুদীরা তাদেরকে দেখামাত্র দূর্গের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে দূর্গের দ্বারগুলো উত্তমরূপে বন্ধ করে দিলো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কঠিনভাবে তাদের দূর্গ অবরোধ করলেন। এ দিনটি ছিল শুক্রবার, হিজরী ২য় সনের শাওয়াল মাসের ১৫ তারীখ। ১৫ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ যুলকাদার নতুন চাঁদ উদয় হওয়া অবধি অবরোধ জারী থাকল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের অন্তরে ভীতি ও সন্ত্রস্তভাব সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর নীতি এটাই যে, যখন তিনি কোন সম্প্রদায়কে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে থাকেন। অবশেষে বনু ক্বাইনুক্কা’ আত্মসমর্পণ করল এবং বলল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের জান মাল, সন্তান-সন্ততি এবং নারীদের ব্যাপারে যা ফায়সালা করবেন তারা তা মেনে নিবে। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র নির্দেশক্রমে তাদের সকলকে বেঁধে নেয়া হয়।
কিন্তু এ স্থানে আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার কপট চাল চালবার সুযোগ গ্রহণ করল। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অত্যন্ত অনুনয় বিনয় করে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ (ﷺ) আপনি এদের প্রতি সদয় ব্যবহার করুন।’ প্রকাশ থাকে যে, বনু ক্বাইনুক্কা’ গোত্র খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারে বিলম্ব করলেন। সে পীড়াপীড়ি করতে থাকল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু শেষে সে তাঁর (ﷺ) জামার বুকের অংশবিশেষ ধরে ফেলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিশেষ বিরক্তি ও ক্রোধ সহকারে পুনঃপুনঃ তাকে ছেড়ে দিতে বললেন, কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও সে পুনঃ পুনঃ উত্তর করতে লাগল ‘আমি কোন মতেই ছাড়বো না যে পর্যন্ত না আপনি তাদের উপর দয়াপরবশ হন। চারশ জন খোলা দেহের যুবক এবং তিনশ জন বর্মপরিহিত যুবককে আপনি একই দিনের সকালে কেটে ফেলবেন, অথচ তারা আমাকে কঠিন বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিল। আল্লাহর কসম! আমি কালচক্রের বিপদের আশঙ্কা করছি।
অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ধন মাল হস্তগত করলেন যেগুলোর মধ্যে তিনটি কামান, দুটি বর্ম, তিনটি তরবারী এবং তিনটি বর্শা নিজের জন্যে বেছে নেন এবং গনীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ বের করেন। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) গণীমত একত্রিত করার কাজ সম্পাদন করেন।[1]