উমায়ের ইবনু হাম্মাম (রাঃ) এবং আউফ ইবনু হারিস ইবনু আফরা’র (রাঃ) ঈমান দীপ্ত চরিত কথার বিষয়াবলী ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এ যুদ্ধে পদে পদে এমন সব দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে যেগুলোতে ঈমানী শক্তি ও মৌলিক নীতিমালার পরিপক্কতা সুস্পষ্ট ও সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এ যুদ্ধে পিতা ও পুত্র এবং ভাই ও ভাইয়ের মধ্যে দল বিভাগ বা শ্রেণীবিন্যাস হয়েছে, আর মূল নীতির ব্যাপারে মতানৈক্যের কারণে তরবারী কোষমুক্ত হয়েছে। এভাবে অত্যাচারিত ব্যক্তিও অত্যাচারীর উপর আঘাত হেনে ক্রোধাগ্নি প্রশমিত করেছে। পরবর্তী আলোচানা থেকে এর যথার্থতা প্রমাণিত হবে।
১. ইবনু ইসহাক্ব ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী কারীম (ﷺ) সাহাবীগণ (রাঃ)-কে বলেন,
(إِنِّيْ قَدْ عَرَفْتُ أَنَّ رَجُالًا مِنْ بَنِيْ هَاشِمٍ وَغَيْرِهِمْ قَدْ أَخْرَجُوْا كُرْهًا، لَا حَاجَةَ لَهُمْ بِقِتَالِنَا، فَمَنْ لَقِىْ أَحَدًا مِنْ بَنِيْ هَاشِمٍ فَلَا يَقْتُلْهُ، وَمَنْ لَقِىَ أَبَا الْبَخْتَرِيِّ بْنِ هِشَامٍ فَلَا يَقْتُلْهُ، وَمَنْ لَقِىْ الْعَبَّاسَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَا يَقْتُلْهُ، فَإِنَّهُ إِنَّمَا أُخْرِجَ مُسْتَكْرَهًا)
‘আমি জানি যে, বনু হাশিম এবং আরও কোন কোন গোত্রের কতগুলো লোককে জোর করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আনয়ন করা হয়েছে। আমাদের যুদ্ধের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং বনু হাশিমের কোন লোক কারো তরবারীর সামনে পড়ে গেলে সে যেন তাকে হত্যা না করে। আবুল বাখতারী বিন হিশাম কারো সামনে এসে পড়লে তাকে যেন সে হত্যা না করে। আর আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব কারো সামনে পড়ে গেলে তাকেও যেন হত্যা করা না হয়। কেননা তাকে জোর করে এ যুদ্ধে নিয়ে আসা হয়েছে।’
এ কথা শুনে ‘উতবাহর পুত্র আবূ হুযাইফা (রাঃ) বললেন, ‘আমরা কি আমাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা ও আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করব, আর আব্বাস (রাঃ)-কে ছেড়ে দিব? আল্লাহর কসম! যদি তিনি আমার সামনে পড়ে যান তবে আমি তাকে তরবারীর লাগাম পরিয়ে দিব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাচার চেহারার উপর কি তরবারীর আঘাত করা হবে?’ উত্তরে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমাকে ছেড়ে দিন, আমি তরবারী দ্বারা এ ব্যক্তির গর্দান উড়িয়ে দেই। কেননা, এ ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয়ে গেছে।’
পরবর্তীকালে আবূ হুযাইফা (রাঃ) বলতেন, ‘ঐ দিন আমি যে কথা বলে ফেলেছিলাম তার কারণে আমি কোন সময় মনে শান্তি পাই না। এ ব্যাপারে বরাবরই আমার মনে ভয় থেকে যায়। এটা হতে মুক্ত হওয়ার একটি মাত্র উপায় হলো আমার শাহাদতের মাধ্যমে এর কাফ্ফারা হয়ে যাওয়া।’ অবশেষে ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়ে যান।
২. আবুল বাখতারীকে হত্যা করতে নিষেধ করার কারণ ছিল এ ব্যক্তি মক্কায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কষ্ট দেয়া হতে সবচেয়ে বেশী বিরত থেকে ছিল। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কোন প্রকারের কষ্ট দিত না এবং তার পক্ষ হতে তিনি কখনো কোন অপছন্দনীয় কথা শোনেননি। আর এ ব্যক্তি ঐ লোকদের একজন ছিল যারা বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবের বয়কট পত্রটি ছিঁড়ে ফেলেছিল।
কিন্তু তা সত্ত্বেও আবুল বাখতারী শেষে নিহতই হয়েছিল। ঘটনাটি হল মুজাযযার ইবনু যিয়াদ বালাভী (রাঃ)-এর সাথে তার লড়াই হয়। তার সাথে তার অন্য এক সঙ্গীও ছিল। দুজন এক সাথে যুদ্ধ করছিল। মুজাযযার (রাঃ) তাকে বলেন, ‘হে আবুল বাখতারী! আপনাকে হত্যা করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন।’ সে বলে ‘আমার সাথীকেও কি?’ মুজাযযার (রাঃ) উত্তরে বলেন, ‘না, আল্লাহর কসম! আপনার সাথীকে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।’ সে তখন বলল, ‘আল্লাহর কসম! তাহলে আমি এবং সে দুজনই মরবো।’ এরপর দুজনই যুদ্ধ শুরু করে দেয়। মুজাযযার (রাঃ) বাধ্য হয়ে তাকেও হত্যা করেন।
৩. মক্কায় জাহেলিয়াত যুগে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) ও উমাইয়া ইবনু খালফের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ছিল। বদর যুদ্ধের দিন উমাইয়া ইবনু খালফ তার ছেলে আলীর হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল। এমন সময় আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) সেখান দিয়ে গমন করেন। তিনি শত্রুর নিকট হতে কিছু লৌহ বর্ম ছিনিয়ে নিয়ে তা উটের পিঠে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। উমাইয়া তাঁকে দেখে বলে, ‘তুমি আমার কোন প্রয়োজন বোধ কর কি? আমি তোমার এ লৌহ বর্মগুলো হতে উত্তম। আজকের মতো দৃশ্য আমি কোন দিন দেখিনি। তোমার দুধের কি প্রয়োজন নেই।’ সে একথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছিল যে, আমাকে বন্দী করবে তাকে মুক্তি পণ হিসেবে বহু দুগ্ধবতী উট প্রদান করব।’
তার এ কথা শুনে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) লৌহবর্মগুলো ফেলে দিয়ে পিতা-পুত্র দুজনকে গ্রেফতার করে সামনে অগ্রসর হলেন।
আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, ‘আমি উমাইয়া এবং তার পুত্রের মাঝে হয়ে চলছিলাম এমতাবস্থায় উমাইয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি কে ছিল যে তার বক্ষে উটপাখির পালক লাগিয়ে রেখে ছিল।’ আমি উত্তরে বললাম উনি ছিলেন হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)। সে তখন বলল এ সেই ব্যক্তি যে আমাদের মধ্যে ধ্বংস রচনা করে রেখেছিল।’
আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দুজনকে নিয়ে চলছিলাম অকস্মাৎ বিলাল (রাঃ) উমাইয়াকে আমার সাথে চলতে দেখে নেন। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এ উমাইয়া মক্কায় বিলাল (রাঃ)-এর উপর অমানুষিক উৎপীড়ন করেছিল। বিলাল (রাঃ) বললেন, ‘এ হচ্ছে কাফিরদের নেতা উমাইয়া ইবনু খালফ । হয় আমি বাঁচবো না হয় সে বাঁচবে। আমি বললাম, হে বিলাল (রাঃ) এটা হচ্ছে আমার বন্দী। তিনি আবার বললেন, এখন দুনিয়াতে হয় আমি থাকবো, না হয় সে থাকবে।’ তারপর তিনি অত্যন্ত উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর আনসারগণ! এ হচ্ছে কুফর নেতা উমাইয়া ইবনু খালফ। এখন হয় আমি থাকবো, অথবা সে থাকবে। আব্দুর রহমান (রাঃ) বললেন, ‘ইতোমধ্যে জনগণ আমাদেরকে কংকণের মতো বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে নিল। আমি তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু একটি লোক তার পুত্রের পায়ে তরবারীর আঘাত হেনে দিলো। আর সাথে সাথে সে পড়ে গেল। ও দিকে উমাইয়া এত জোরে চিৎকার করল যে, এরূপ চিৎকার আমি কখনই শুনিনি। আমি বললাম, ‘পালিয়ে যাও। কিন্তু আজ পালাবার কোন উপায় নেই। আল্লাহর কসম! আজ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবো না।’ আব্দুর রহমান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, জনগণ তরবারী দ্বারা তাদের দুজনকে কেটে ফেলে তাদের জীবন লীলা শেষ করে দেয়। এরপর আব্দুর রহমান (রাঃ) বলতেন, ‘আল্লাহ বিলালের উপর রহম করুন। আমার লৌহবর্মও গেল এবং আমার বন্দীর ব্যাপারে আমাকে ব্যাকুলও হতে হলো।’
ইমাম বুখারী (রহ.) আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, উমাইয়াহ বিন খালফ এ মর্মে আমার সাথে একটি চুক্তিপত্র লিখেছিল যে, সে মক্কায় আমার পরিবার-পরিজনকে হেফাজত করবে আর আমি মদীনায় তার পরিবার-পরিজনকে হেফাজত করবো। অতঃপর বদর যুদ্ধের দিন মানুষেরা ঘুমিয়ে পড়ার পর পাহাড়ের দিকে গেলাম তাকে হেফাজ করার জন্য। কিন্তু পথিমধ্যে বিলাল দেখে ফেলে। অতঃপর আনসারদের দলে গিয়ে এ বলে ঘোষণা দেয় যে,হয় আমি মরব, অথবা উমাইয়া বিন খালাফ মরবে। এরপর বিলালের সাথে আনসারদের এক দল যোদ্ধা আমাদেরকে নিকেট আসতে থাকে। আমি যখন এ আশঙ্কা করলাম যে লোকেরা আমাদের ধরে ফেলবে তখন আমি উমাইয়ার ছেলেকে আমার পেছনে নিয়ে নিলাম যাতে তারা তাকে হত্যা করতে না পারে। কিন্তু লোকেরা তাকে হত্যা করে ফেলল। আর তার পিতার শরীর খুব ভারী ছিল। লোকেরা আমার কাছে পৌছলে আমি উমাইয়া ইবনু খালফকে বললাম, ‘তুমি হাঁটুর ভরে বসে পড়।’ সে বসে গেল এবং আমি তার উপর চড়ে বসলেন। কিন্তু লোকেরা নীচ দিয়ে তরবারী মেরে উমাইয়াকে হত্যা করল।
কোন একটি তরবারীর আঘাতে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)-এর পা আহত হয়েছিল।[1] আবদুর রহমান পরবর্তীতে তার পায়ের সেই আঘাতের চিহ্ন দেখিয়েছেন।
৪. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার মামা আস ইবনু হিশাম ইবনু মুগীরাহকে হত্যা করেন। সেদিন আত্মীয় সম্পর্কের প্রতি ভ্রুক্ষেপই করেন নি। কিন্তু মদীনায় ফিরে আসার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র চাচা ‘আব্বাসকে বললেন, (সে সময় ‘আব্বাস বন্দী ছিলেন) হে ‘আব্বাস! আপনি ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার পিতা খাত্তাব ইসলাম গ্রহণের চেয়ে আপনার ইসলাম গ্রহণটা অধিক প্রিয়। অধিকন্তু আপনার ইসলাম গ্রহণের ফলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যার পরই না খুশি হতেন।
৫. আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) স্বীয় পুত্র আব্দুর রহমানকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন যখন সে মুশরিকদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল ‘ওরে দুরাচার আমার মাল কোথায়’’? আব্দুর রহমান উত্তরে বলেছিল :
لَمْ يَبْقَ غَيْرُ شَكَّةٍ ويَعْبُوْب ** وصَارِمٍ يَقْتُلُ ضُلاَّل الشِّيَبْ
অর্থাৎ অস্ত্র, শস্ত্র, দ্রুতগামী অশ্ব এবং ঐ তরবারী ছাড়া কিছুই বাকী নেই যা বার্ধক্যের ভ্রষ্টতার সমাপ্তি ঘটিয়ে থাকে।
৬. যখন মুসলিমরা মুশরিকদেরকে গ্রেফতার করতে শুরু করেন তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাউনীর মধ্যে অবস্থান করছিলেন এবং সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ) তরবারী হাতে দরজার উপর পাহারা দিচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লক্ষ্য করলেন যে, সা‘দ (রাঃ)-এর চেহারায় মুসলিমদের এ কার্যকলাপ অপছন্দনীয় হওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে। তাই, তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে সা‘দ (রাঃ), আল্লাহর কসম! বুঝা যাচেছ যে, মুসলিমদের এ কার্যকলাপ তোমার পছন্দ হচ্ছে না, তাই নয় কি? সা‘দ (রাঃ) উত্তরে বললেন, ‘জ্বী হ্যাঁ’’, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! মুশরিকদের সাথে এটাই প্রথম যুদ্ধ, যার সুযোগ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দান করেছেন। সুতরাং মুশরিকদেরকে ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে অধিক সংখ্যায় হত্যা করে ফেলাই আমার নিকট বেশী পছন্দনীয়।’
৭. এ যুদ্ধে উকাশাহ ইবনু মুহসিন আসাদী (রাঃ)-এর তরবারী ভেঙ্গে যায়। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে কাঠের একটা ভাঙ্গা থাম্বা প্রদান করেন এবং বলেন ‘উকাশাহ (রাঃ) তুমি এটা দ্বারাই যুদ্ধ কর’। উকাশাহ (রাঃ) ওটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট হতে নিয়ে নড়ানো মাত্রই একটা লম্বা, শক্ত সাদা চকচকে তরবারীতে পরিবর্তিত হয়। তারপর তিনি ওটা দ্বারাই যুদ্ধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমগণকে বিজয় দান করেন। ঐ তরবারীখানা স্থায়ীভাবে উকাশাহ (রাঃ)-এর কাছেই থাকে এবং তিনি ওটাকে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহার করেন। অবশেষে আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন। ঐ সময়েও ঐ তরবারীটি তার কাছেই ছিল।
৮. যুদ্ধ শেষে মুসআ’ব ইবনু উমায়ের আবদারী (রাঃ) তার ভাই আবূ উযায়ের ইবনু উমায়ের আবদারীর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। আবূ উযায়ের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং ঐ সময় একজন আনসারী সাহাবী তাঁর হাত বাঁধছিলেন। মুসআব (রাঃ) ঐ আনসারীকে বললেন ‘এ ব্যক্তির মাধ্যমে আপনি আপনার হাতকে দৃঢ় করুন। এর মা খুবই ধনবতী মহিলা। অবশ্যই সে আপনাকে উত্তম মুক্তিপণ দিবে।’ একথা শুনে আবূ উযায়ের তার ভাই মুসআ’ব (রাঃ)-কে বলল, ‘আমার ব্যাপারে তোমার উপদেশ এটাই?’ মুসআ’ব (রাঃ) উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমার পরিবর্তে এ আনসারই আমার ভাই।’
৯. মুশরিকদের মৃতদেহগুলোকে যখন কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হলো এবং ‘উতবাহ ইবনু রাবীআহকে কূপের দিকে হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার পুত্র আবূ হুযাইফা (রাঃ)-এর চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। তখন দেখলেন যে, তিনি দুঃখিত হয়েছেন এবং তার চেহারা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবূ হুযাইফাহ, নিশ্চয়ই তোমার পিতার এ অবস্থা দেখে তোমার অন্তরে কিছু অনুভূতি জেগেছে, তাই না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আল্লাহর শপথ! আমার পিতার ব্যাপারে এবং তার হত্যার ব্যাপারে আমার অন্তরে একটুও শিহরণ উঠেনি। তবে অবশ্যই আমার পিতা সম্পর্কে আমি জানতাম যে, তার মধ্যে বিবেক, বুদ্ধি, দূরদর্শিতা ও ভদ্রতা রয়েছে। এ জন্য আমি আশা করতাম যে, এ গুণাবলী তাকে ইসলাম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে। কিন্তু এখন তার পরিণাম দেখে এবং আমার আশার বিপরীত কুফরের উপর তার জীবনের সমাপ্তি দেখে আমি দুঃখিত হয়েছি। তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর মঙ্গলের জন্যে দুআ করলেন এবং তার সাথে উত্তমরূপে বাক্যালাপ করলেন।