গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের আগমনে সভাকক্ষ পরিপূর্ণ হওয়ার পর বিতর্ক পর্বের সূচনা হল। তারপর প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত আকারে বিতর্ক চলতে থাকল। প্রথমে আবুল আসওয়াদ এ প্রস্তাব পেশ করল যে, ‘আমরা ঐ লোকটিকে আমাদের ভিতর থেকে বের করে দিই এবং এ শহর থেকে বিতাড়িত করি। সে কোথায় যাবে কিংবা কোথায় থাকবে সে ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আমাদের আর কোনই সম্পর্ক থাকবে না। এ কারণে আমাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না এবং পূর্বের অবস্থা আবার ফিরে আসবে।
কিন্তু শাইখ নাজদী বলল, ‘আল্লাহর কসম! এটা সঠিক প্রস্তাব হল না। তোমরা কি দেখতে পাওনা যে, ঐ ব্যক্তির কথা কত চমৎকার এবং কথা বলার ধারা কতটা মধুর। তোমরা দেখনা কিভাবে সে মানুষের মন জয় করে চলেছে। আল্লাহর শপথ! তোমরা যদি এটা কর তবে সে কোন আরব গোত্রে গিয়ে আশ্রয় নেবে এবং তাদেরকে নিজ অনুসারী করে নেবে। তারপর তাদের সঙ্গে সখ্যতা করে তোমাদের শহরে আক্রমণ চালিয়ে তোমাদের কোনঠোসা করে ফেলবে এবং যাচ্ছেতাই ব্যবাহার করবে। তোমরা যে সমাধানের কথা বলছ তা বাদ দিয়ে অন্য সমাধানের কথা চিন্তা করো।’
আবুল বুখতারী বলল, ‘তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখ। বন্দী অবস্থায় তাঁকে ঘরে আবদ্ধ রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দাও এবং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতির জন্য (মৃত্যু) অপেক্ষা করতে থাক। যেমনটি ইতোপূর্বে কবিদের বেলায় (যুহাইর, নাবেগা ও অন্যান্য) হয়েছিল।’
শাইখ নাজদী বলল, ‘না, আল্লাহর কসম! এ প্রস্তাব তেমন সঙ্গত বলে মনে হচ্ছে না। আল্লাহর শপথ! যদি তোমরা তাকে বন্দী করো যেমনটি তোমরা বলছ তাহলে তাঁর খবর বন্ধ দরজা দিয়েই বের হয়ে তাঁর সঙ্গীদের নিকট পৌঁছে যাবে। আর তখন তাদের পক্ষে হয়তো এটা অসম্ভব হবে না যে, তারা তোমাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। এরপর তারা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালিয়ে একদম পর্যুদস্ত করে ফেলবে। অতএব, এ প্রস্তাব ও সমর্থন যোগ্য নয়। অন্য কোন সমাধানের কথা চিন্তা করা প্রয়োজন।
এরপর দুটি প্রস্তাবই যখন সংসদ কর্তৃক নাকচ হয়ে গেল তখন পেশ করা হল অন্য একটি প্রস্তাব। এ প্রস্তাবটি পেশ করল মক্কার সব চাইতে কুখ্যাত ব্যক্তি আবূ জাহল। সে বলল, ‘ঐ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাঃ) সম্পর্কে আমার একটি অভিমত রয়েছে। আমি দেখছি এ যাবৎ তোমরা কেউই সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারনি। লোকেরা বলল, ‘আবুল হাকাম! সেটা কী?’
আবূ জাহল বলল, ‘আমাদের প্রস্তাব হল প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে সুঠাম দেহী ও শক্তিশালী যুবক নির্বাচন করা হোক এবং প্রত্যেককে একটি করে ধারালো তরবারী দেয়া হোক। তারপর সকলেই তার দিকে অগ্রসর হোক এবং সকলেই এক সঙ্গে তলোয়ার মেরে তাকে হত্যা করুক। তাহলেই আমরা তার হাত থেকে নিস্তার পেয়ে যাব। আর এভাবে হত্যা করার ফল হবে রক্তপাতের দায়িত্বটা সকল গোত্রের উপর সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এর একটি বিশেষ সুবিধা হবে বনু আবদে মানাফ সকলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম হবে না। ফলে (একটি খুনের বদলে একশত উট প্রদান) দিয়াত গ্রহণে রাজী হয়ে যাবে এবং আমরা তা আদায় করে দেব।[1]
শাইখ নাজদী বলল, ‘এ যুবক যে কথা বলল সেটাই কার্যকর থাকল। যদি কোন প্রস্তাব ও সমর্থনের প্রশ্ন আসে তবে এটাই থাকবে, অন্যগুলোর তেমন কোন গুরুত্বই থাকবে না।’
মক্কার সংসদ এমনভাবে এক কাপুরুষোচিত ঘৃণ্য ও জঘন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে সে দিনের মতো মুলতবী হয়ে গেল। আর সদস্যগণ এ সিদ্ধান্ত ত্বরিৎ বাস্তবায়ণে সংকল্পবদ্ধ হয়ে আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন করল।