পৌত্তলিকতা, অশ্লীলতা, শিরক, বিদ’আত ও বহুত্ববাদের জমাট অন্ধকার ভেদ করে চির ভাস্বর ও চির জ্যোতির্ময় ইসলাম নামক সূর্য যখন নবায়িত আলোর বন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করল তখন প্রচলিত সকল বিশ্বাস এবং মতবাদের অনুসারীগণ একদম হতচকিত হয়ে পড়ল। সর্বশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সুললিত শাশ্বত বাণী এবং মহানাবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উদাত্ত কণ্ঠের তৌহীদী ঘোষণা সকল ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিত্তিমূলকে করে তুলল প্রকম্পিত। যে সকল মুশরিক ও পুতুল পুজক শির্ক ও পৌত্তলিকতার পাপপংকে নিমজ্জিত থেকেও দাবী করত যে, তাঁরা দ্বীন-ই ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর প্রতিষ্ঠিত তাঁদের বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে চরম আঘাত হানল।
ইবরাহীম (আঃ) প্রবর্তিত সত্য ধর্মের অনুসারী বলে দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে দ্বীন-ই-ইবরাহীমী (আঃ)-এর কোন বৈশিষ্ট্যই তাঁদের চিন্তা চেতনা ও ধ্যান-ধারণায় ছিল না। তারা নানা প্রকার অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অবতীর্ণ আল্লাহর বাণীর আলোকে নাবী কারীম (ﷺ) যখন আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলামের শাশ্বতরূপ এবং ইবরাহীম (আঃ) প্রবর্তিত দ্বীনের সঙ্গে এর বিভিন্ন সম্পর্কের প্রসঙ্গটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তখন তাঁদের দ্বীন সম্পর্কিত দাবীর অসারতা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠল।
ইহুদীবাদের অবস্থাও ছিল ঠিক একইরূপ। অসার বাহ্যাড়ম্বর সর্বস্ব স্বেচ্ছাচার ছাড়া তেমন আর কিছুই ছিল না ইহুদীদের মধ্যে। ইহুদী পুরোহিতগণ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নিজেরাই চেয়েছিলেন প্রভুর আসনে সমাসীন হতে। ধর্মের আবরণে তাঁরা চেয়েছিলেন পার্থিব প্রতিষ্ঠা। ধর্মের দোহাই দিয়ে তাঁরা চাইতেন সাধারণ মানুষের উপর তাঁদের স্বকীয় মতামত সম্পর্কিত প্রভাব বিস্তার করতে। তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সম্পদ সংগ্রহ করে সম্পদের পাহাড় রচনা করা। সম্পদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তার ধর্ম-কর্ম যদি চুলায় যায় তা যাক, অবিশ্বাস কিংবা অধর্ম যদি বিস্তার লাভ করে তা করুক, তাতে কিছুই আসে যায় না। এ-ই ছিল ইহুদীবাদের সত্যিকার রূপ।
খ্রীষ্টান ধর্মও সত্য বিবর্জিত শির্ক এবং পৌত্তলিকতায় ভরপুর হয়ে পড়েছিল। আল্লাহর একত্ববাদের পরিবর্তে তৃত্ববাদের ধারণা তাঁদের মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল এবং এ ভ্রান্ত ধারণাই আল্লাহ এবং মানবকে এক আজব সংমিশ্রণের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল। অধিকন্তু, যে আরববাসীগণ এ ধর্ম গ্রহণ করেছিল প্রকৃতপক্ষে তাদের উপর এ ধর্মের কোন প্রভাব প্রতিফলিত হয় নি। কারণ, এর আদর্শের সঙ্গে তাঁদের প্রচলিত জীবন যাত্রা-প্রণালীর কোন মিল ছিলনা আর তারা তাদের প্রচলিত জীবন-পদ্ধতি পরিত্যাগ করতে পারছিলেন না।
অবশিষ্ট আরবদের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অবস্থা মুশরিকগণের মতই ছিল। কারণ, তাঁদের অন্তঃকরণ একই ছিল, বিশ্বাসসমূহে পরস্পর সাদৃশ্য ছিল এবং রীতিনীতিতে সঙ্গতি ছিল।