উত্তর: না, শিশুরা কবরে জিজ্ঞাসিত হবে না। কেননা যাদের রাসূল ও রাসূলের আনিত জিনিস সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। ফলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তারা কি রাসূলের অনুসরণ করেছে, নাকি তার বিরুদ্ধাচরণ করেছে? পক্ষান্তরে শিশু ভালো-মন্দ কিছুই পার্থক্য করতে পারে না, তাহলে তাদেরকে কীভাবে জিজ্ঞেস করা হবে?
অন্য দিকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি শিশুর জানাযার সালাত আদায় করলেন, তাকে এ দো‘আ পড়তে শোনা গেছে,
«اللَّهُمَّ قِهِ عَذَابَ الْقَبْرِ».
“হে আল্লাহ আপনি তাকে কবরের ‘আযাব থেকে রক্ষা করুন।”[1] এখানে কবরের ‘আযাব দ্বারা শিশুকে আনুগত্য না করা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া উদ্দেশ্য নয়; কেননা আল্লাহ কাউকে গুনাহ ব্যতীত শাস্তি দিবেন না। বরং এখানে কবরের ‘আযাব বলতে অন্যের কারণে মৃত ব্যক্তির যে কষ্ট হবে সে কষ্টের কথা বুঝানো হয়েছে; যদিও তার কর্মের কারণে কবরে শাস্তি হবে না।
এ ধরণের ‘আযাবের বর্ণনা অন্য হাদীসেও বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ المَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ».
“মৃত ব্যক্তিকে তার জন্য বিলাপের কারণে কবরে ‘আযাব দেওয়া হয়”।[2] অর্থাৎ সে জীবিত ব্যক্তির কান্নার কারণে ব্যথিত হয় ও কষ্ট পায়, জীবিত ব্যক্তির গুনাহের কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ١٦٤﴾ [الانعام: ١٦٤]
“আর কোনো ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬৪]
এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ العَذَابِ».
“সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ।”[3] সুতরাং ‘আযাব শাস্তির চেয়ে ব্যাপক। নিঃসন্দেহে কবরে অনেক দুঃখ-কষ্ট, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা থাকবে যার প্রভাব শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হবে। অতএব আল্লাহর কাছে কবরের ‘আযাব থেকে শিশুর জন্য পানাহ চাওয়া মুসল্লির জন্য শরী‘আতসম্মত। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
[2] মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৭।
[3] মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯২৭।