وَقَدْ أَتَتْ كَالْجَوْهَرِ الْمَكْنُونِ | سَمَّيْتُهَا مَنْظُوْمَةَ الْبَيْقُوني

فَوْقَ الثَّلاثِينَ بِأَرْبَعٍ أَتَتْ | أَبْيَاتُهَا ثُمَّ بِخَيْرٍ خُتِمَتْ

“আর এ কবিতা সুরক্ষিত মুতির মত লিপিবদ্ধ হয়েছে, আমি যার নাম রেখেছি ‘মানযুমাতুল বাইকুনি’। চৌত্রিশটি পঙক্তিতে তার প্রকারগুলো বিধৃত হয়েছে, অতঃপর কল্যাণের সাথে তার সমাপ্তি হল”।

লেখক রাহিমাহুল্লাহ কবিতার শুরুতে সহি হাদিসের বর্ণনা দিয়েছেন, যা হাদিসের মধ্যে সর্বোত্তম প্রকার। তিনি বলেছেন:

أَوَّلُها الصَّحِيحُ وَهْوَ ما اتَّصَلْ | إسْنادُه ولمْ يَشُذَّ أو يُعَلْ

আর সর্বশেষ বর্ণনা করেছেন মাওদু‘ হাদিস, যা হাদিসের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার, যেমন তিনি বলেছেন:

وَالْكَذِبُ الْمُخْتَلَقُ الْمَصْنُوعُ | عَلى النَّبيْ فَذَلِكَ الْمَوْضُوعُ

এভাবে তিনি সুন্দর সমাপ্তি করেছেন।

جوْهَرِ অর্থ মাণিক্য ও জহরত مكْنُونِ অর্থ আচ্ছাদিত ও সুরক্ষিত। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ ইলমে হাদিস তথা হাদিসের পরিভাষার উপর লিখিত তার গ্রন্থকে আচ্ছাদিত মাণিক্যের সাথে তুলনা করেছেন, কারণ এতে সর্বোত্তম ইলমের অনেক প্রকার অত্যন্ত সংক্ষেপে বিধৃত হয়েছে। কবিতার প্রত্যেক পঙক্তির অন্ত্যমিল, মাত্রাজ্ঞান ও শব্দ চয়ন খুব সুন্দর হয়েছে, তাই তিনি এ গ্রন্থকে আচ্ছাদিত মাণিক্যের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ তাকে মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

তিনি বলেন: আমি তার নাম রেখেছি ‘মানযূমাতুল বাইকুনি’। নাম বস্তুর নিদর্শন, নামের কল্যাণে একবস্তু অপরবস্তু থেকে পৃথক হয়, এ জন্য তিনি নাম রেখেছেন। نظم শব্দের আভিধানিক অর্থ জমা করা, যেমন অনেকগুলো মুতি ক্রম বিন্যাস করে এক সুতোয় গাথার পর বলা হয়: نظمت الدر ‘আমি মুতিগুলো সুন্দরভাবে গেঁথেছি’।

পরিভাষায় কাব্য শিল্পের বিশেষ নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মিত কবিতাকে مَنْظُومَةَ বলা হয়। البَيْقُوني শব্দ দ্বারা লেখক নিজেকে বুঝিয়েছেন। ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়া’র ব্যাখ্যাকার শায়খ হামাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘বাইকুন লেখকের শহরের নাম, বা গ্রামের নাম, বা তার পিতার নাম, বা তার দাদার নাম কিছুই জানি না’। শায়খ বদরুদ্দিন হাসানি রাহিমাহুল্লাহ্ (মৃ.১৩৫৪হি.) ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়া’র উপর লিখিত «الدرر البهية» গ্রন্থে বলেন: “যারা বাইকুনি সম্পর্কে লিখেছেন, তাদের অধিকাংশ ‘বাইকুনি’ উপাধির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। তাদের কারো লেখায় আমি দেখেছি যে, ‘বাইকুন’ আজার বাইজান অঞ্চলের একটি গ্রাম, যা কুর্দিদের সন্নিকটে অবস্থিত”।

আমরা ভূমিকায় বলেছি তার নাম ওমর ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন ফুত্তুহ আদ-দিমাস্কি, আশ-শাফে‘ঈ। মৃত: (১০৮০হি.), মোতাবেক (১৬৬৯খৃ.), তবে তার জন্ম তারিখ ও মৃত্যুর দিন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আমাদের ধারণা লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ নিখাদ ইখলাস থেকে বিস্তারিত পরিচয় দেননি। তাই তার গ্রন্থের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব তার মানযূমার ব্যাখ্যা ও টিকা লিখেছেন, যেমন হামাবি, দিমইয়াতি ও যারকানি রাহিমাহুল্লাহ্ প্রমুখগণ। তার মানযুমাহ ইরাকি রাহিমাহুল্লাহ্ রচিত الألفية এর নির্যাস।

أبيات বহুবচন, একবচন بيت অর্থ নির্দিষ্ট নিয়মে নির্মিত কবিতা। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ فوق الثلاثين বলে পঙক্তির সংখ্যা ৩৪-টি বলে দিয়েছেন, যেন তার কোনো পঙক্তি বিলুপ্ত না হয়, কিংবা কেউ এতে বৃদ্ধি করতে না পারে। কবিতার বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে أبيات শব্দ রয়েছে, যার ভিত্তিতে শায়খ দিমইয়াতি ও শায়খ হামাবি প্রমুখ মানযুমার ব্যাখ্যা লিখেছেন।

কতক পাণ্ডুলিপিতে أبياتهاশব্দের পরিবর্তে أقسامها রয়েছে, যার অর্থ ‘মানযুমায় বর্ণিত প্রকার সংখ্যা চৌত্রিশটি’। এ অর্থও সঠিক, কারণ লেখক ‘মুদাল্লাস’ ও ‘মাকলুব’-কে দুই দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যা অবশিষ্ট ত্রিশ প্রকারসহ চৌত্রিশ প্রকার হয়, যদিও সাধারণ অর্থ থেকে বহুদূর।

ثم بخير ختمت অর্থাৎ মানযুমাহ লেখার উদ্দেশ্য কল্যাণের সাথে সমাপ্ত হল। এ বাক্যে তিনি ختمت শব্দ ব্যবহার করে অলঙ্কার শাস্ত্রের সুন্দর প্রয়োগ করেছেন, যার থেকে কবিতার সমাপ্তি বুঝে আসে। হে আল্লাহ তুমি আমাদের সমাপ্তি সুন্দর করুন।

ওমর ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন ফাত্তুহ আল-বাইকুনি রাহিমাহুল্লাহ্ রচিত مَنْظُومَةَ البَيْقُوني হাদিস শাস্ত্রের প্রাথমিক কিতাব। হিম্মত কম হলে এ কিতাব মুখস্থ করে অন্যান্য কিতাব বুঝে পড়া যথেষ্ট। আরেকটু হিম্মত হলে আল্লামা সানআনি রচিত قصب السكر মুখস্থ করা শ্রেয়, যাতে তিনি হাফেয ইব্‌ন হাজার রচিত نخبة الفكر গ্রন্থের পুরো বিষয়কে কবিতার আকৃতিতে পেশ করেছেন। তাতে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি অনুসারে সর্বমোট দুইশত দুই, পাঁচ বা ছয়টি কবিতা রয়েছে। হিম্মত আরো উন্নত হলে হাফেয ইরাকি রচিত الألفية মুখস্থ করা সবচেয়ে উত্তম। ইরাকি এক হাজার কবিতায় ইব্‌নুস সালাহ রচিত مقدمة ابن الصلاح এর পুরো বিষয়কে সাবলীল ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।

মূল বা মতন হিসেবে একটি কিতাব মুখস্থ করে অন্যান্য কিতাব বুঝে পড়া যথেষ্ট। যারা ইলমে হাদিসের বুনিয়াদি ও মৌলিক বিষয়গুলো জানতে চান, তারা বাইকুনিয়ার মানযুমাহ মুখস্থ করে পদ্যে লিখিত অন্যান্য ব্যাখ্যা ও মৌলিক গ্রন্থগুলো পড়ুন এবং বাস্তব অনুশীলন করুন। অতঃপর অন্যান্য বিষয়ের উপর লিখিত বুনিয়াদি কিতাবগুলো পড়ুন।

এ বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে চাইলে প্রাথমিকভাবে সংক্ষিপ্ত মতনগুলো পড়ে নিন, কারণ তা বুঝা সহজ ও দ্রুত শেষ হয়, যেমন: المنظومة اليقونية، الموقظة، الكافية ونخبة الفكر গ্রন্থগুলো। অতঃপর দ্বিতীয় পর্যায়ে পড়ুন হাফেয ইব্‌ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ্ রচিত اختصار علوم الحديث অতঃপর তৃতীয় পর্যায়ে পড়ুন হাফেয ইরাকি রাহিমাহুল্লাহ্ রচিত الألفية এবং তার উপর লিখিত ব্যাখ্যা ও সহায়ক গ্রন্থসমূহ। অতঃপর পড়ুন مقدمة ابن الصلاح ও তার উপর লিখিত النكت সমূহ, হোক হাফেয ইরাকি রচিত, কিংবা ইব্‌ন হাজার রচিত কিংবা অন্য কারো রচিত।

এখানে আমরা মানযুমাহ বাইকুনিয়ার ব্যাখ্যা শেষ করছি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে ইলমে নাফে ও নেক আমল দান করুন। দরূদ ও সালাম নাযিল হোক সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তার বংশধর ও সকল সাহাবির উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে, তাদের সবার উপর।

সমাপ্ত