وَما رَوَى كُلُّ قَرِينٍ عَنْ أَخِهْ | مُدَبَّجٌ فَاعْرِفْهُ حَقًّا وَانْتَخِهْ

“আর যে হাদিস প্রত্যেক সাথী তার ভাই থেকে বর্ণনা করেছে, তাই ‘মুদাব্বাজ’, অতএব ভালো করে তা জেনে রেখ ও নিজেকে ধন্য মনে কর”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের সপ্তবিংশ প্রকার মুদাব্বাজ। মুদাব্বাজ হাদিস শাস্ত্রের শিল্পের অন্তর্ভুক্ত, তার সাথে সহি, হাসান ও দ্বা‘ঈফের সম্পর্ক নেই।

قَرِين অর্থ সাথী, সমবয়সী কিংবা এক উস্তাদের ছাত্র ইত্যাদি। যখন বলা হয়: فلان قرينٌ لفلان তার অর্থ: অমুক অমুকের সাথী, সমবয়সী কিংবা তারা উভয়ে এক উস্তাদের ছাত্র ইত্যাদি। ‘কারিন’ এর বহুবচন أقران যাদের বয়স ও সনদ বরাবর তারা একে অপরের কারিন, উভয়ে আকরান।

হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যদি বর্ণনাকারী ও যার থেকে বর্ণনা করা হয়েছে উভয়ে হাদিস সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সমান হয়, যেমন উভয়ের বয়স সমান, উভয়ে নির্দিষ্ট শায়খের ছাত্র, তাহলে তাদের একজন থেকে অপরের বর্ণনাকে رواية الأقران ‘রিওয়াইয়াতুল আকরান’ বলা হয়”।[1]

‏‏مُدَبَّجٌ‏ কর্মবাচক বিশেষ্য, ديباجة শব্দ থেকে উদ্‌গত, অর্থ রেশমী বস্ত্র, চেহারা ও ভূমিকা ইত্যাদি। ‘মুদাব্বাজ’ শব্দটি ديباجة الوجه থেকে গৃহীত, অর্থ চেহারার পার্শ্ব। দুই সাথী যখন পরস্পর হাদিস আদান-প্রদান করে, তখন তারা উভয়ে চেহারার পার্শ্ব ঘুরে পরস্পরের দিকে তাকায়, তাই এ প্রকারকে ‘মুদাব্বাজ’ বলা হয়।

‏‏مُدَبَّجٌ‏ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা সম্পর্কে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “প্রত্যেক সাথী যদি তার ভাই থেকে হাদিস বর্ণনা করে তাহলে মুদাব্বাজ”। মুদাব্বাজের জন্য উভয়ের সাথী হওয়া ও একে অপর থেকে বর্ণনা করা জরুরী। যেমন মালিক ইব্‌ন আনাস (মৃ১৭৯হি.) ও সুফিয়ান ইব্‌নু ‘উয়াইনাহ (মৃ১৯৮হি.), তাদের পরস্পর থেকে পরস্পরের বর্ণনা মুদাব্বাজ।

সাহাবিদের তবকায় মুদাব্বাজ:

যদি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তাহলে আয়েশা থেকে আবু হুরায়রার হাদিস ও আবু হুরায়রা থেকে আয়েশার হাদিস মুদাব্বাজ। অনুরূপ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (মৃ.৬৮হি.) যদি যায়েদ ইব্‌ন সাবিত (মৃ.৪৫হি.) থেকে এবং যায়েদ ইব্‌ন সাবিত যদি ইব্‌ন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, তাহলে তাদের উভয়ের হাদিস মুদাব্বাজ। অনুরূপ ওমর থেকে যদি ইব্‌ন ওমর এবং ইব্‌ন ওমর থেকে যদি ওমর বর্ণনা করেন, তবুও মুদাব্বাজ; তবে মুহাদ্দিসগণ এ প্রকার হাদিসকে رواية الآباء عن الأبناء বলেন, অর্থাৎ সন্তানদের থেকে পিতাদের বর্ণনা।

তাবে‘ঈদের মুদাব্বাজ:

যুহরি যদি ওমর ইব্‌ন আব্দুল আযিয থেকে ও ওমর ইব্‌ন আব্দুল আযিয যদি যুহরি থেকে বর্ণনা করেন, তাহলে মুদাব্বাজ।

তাবে তাবে‘ঈদের মুদাব্বাজ:

যদি ইমাম মালিক আওযায়ি থেকে ও আওযায়ি ইমাম মালিক থেকে বর্ণনা করেন, তাহলে মুদাব্বাজ।

সারাংশ: কোনো তবকার একাধিক রাবি যদি যৌথভাবে কোনো শায়খ থেকে হাদিস শ্রবণ করেন, অতঃপর তাদের থেকে দু’জন সাথী যদি পরস্পর হাদিস আদান-প্রদান করেন, তাহলে তাদের দু’জনের হাদিসকে মুদাব্বাজ বলা হয়। তারা উভয়ে যদি পিতা-পুত্র হয়, তাহলে ‘রিওয়াইয়াতুল আবা আনিল আবনা’ বলা হয়। তারা উভয়ে যদি উস্তাদ-ছাত্র হয়, তাহলে رواية الأكابر عن الأصاغر বলা হয়। এ প্রকার যদিও মুদাব্বাজ, তবে মুহাদ্দিসগণ তার পৃথক নামকরণ করেছেন: ‘রিওয়াইয়াতুল আকাবির আনিল আসাগির’।

লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ ‘কারিন’ বলে ‘রিওয়ায়াতুল আবা আনিল আবনা’ ও ‘রিওয়ায়াতুল আকাবির আনিল আসাগির’ থেকে মুদাব্বাজকে পৃথক করেছেন। আর ‘কুল্লুন’ বলে ‘রিওয়ায়াতুল আকরান’ থেকে মুদাব্বাজকে পৃথক করেছেন।

এক সাথী একটি হাদিস তার সাথীকে বর্ণনা করল এক সনদে, অপর সাথী একই হাদিস তাকে বর্ণনা করল ভিন্ন সনদে, তাহলে এটাও মুদাব্বাজ।জ্ঞাতব্য: মুদাব্বিজ সাধারণত বিনা মাধ্যমে হয়, তবে কখনো মাধ্যম দ্বারাও হয়, তবে তার সংখ্যা খুব কম, যেমন: ‘ইয়াযিদ ইব্‌ন হাদি’র মাধ্যমে ইমাম মালিক লাইস থেকে ও ইমাম লাইস মালিক থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। এখানে লাইস ও মালিক উভয়ে সাথী, কিন্তু একে অপর থেকে বর্ণনা করেছেন হাদির মধ্যস্থায়।

>
[1] আন-নুযহাহ্‌: (১৫৯)