مُبهَمٌ এর আভিধানিক অর্থ: অস্পষ্ট।
‘মুবহাম’-এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “যে হাদিসের সনদে কোনো একজন রাবিকে উল্লেখ করা হয়নি তাই মুবহাম”। যেমন, حدثني رجل، قال: حدثني خالد عن راشد ...
এ হাদিস মুবহাম, কারণ এখানে একজন রাবির নাম উল্লেখ করা হয়নি। অনুরূপ কোনো রাবি যদি বলে: حدثني الثقة ‘আমাকে জনৈক সেকাহ বলেছে’ তবুও তা মুবহাম। কারণ, ‘সেকাহ’ রাবি পরিচিত নয়। হয়তো তার নিকট সেকাহ, প্রকৃতপক্ষে সেকাহ নয়। অনুরূপ কেউ যদি বলে:حدثني من أثق به ‘এমন ব্যক্তি আমাকে বলেছে, যার উপর আমি আস্থাশীল’, তবু হাদিস মুবহাম, কারণ মুবহাম ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো প্রশংসা গ্রহণীয় নয়। অনুরূপ কেউ যদি বলে: حدثني صاحب هذه الدار ‘আমাকে এ বাড়িওয়ালা বলেছে’, তবু হাদিস মুবহাব, যতক্ষণ না তার পরিচয় জানা যায়।
লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ مَا فيهِ দ্বারা সনদ বুঝিয়েছেন, তাই খোদ হাদিসে কোনো ব্যক্তি অপরিচিত থাকলে হাদিসের বিশুদ্ধতায় প্রভাব পড়বে না, যদি সনদ ঠিক থাকে, যেমন জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত:
دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ «أَصَلَّيْتَ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ»
“জুমার দিন জনৈক ব্যক্তি প্রবেশ করল, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খুতবা দিচ্ছেন। তিনি বললেন: তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বলল: না, তিনি বললেন: দাঁড়াও, দু’রাকাত সালাত আদায় কর”।[1]
এ হাদিসে জনৈক ব্যক্তি অপরিচিত, তবু হাদিস মুবহাম নয়, কারণ সে রাবি নয়, বরং সহি সনদে বর্ণিত হাদিসে তার সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে। এ প্রকার হাদিসকে ‘মুবহাম ফিল মতন’ বলা হয়, যা হাদিসের শুদ্ধতা বিনষ্ট করে না।
‘মুবহামে’র কারণ সম্পর্কে সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সনদ সংক্ষেপ করা অথবা রাবি সম্পর্কে সন্দেহ অথবা অন্য কোনো কারণে এক বা একাধিক স্থানে রাবিকে মুবহাম করা হয়”।[2] এসব কারণে তাদলিসও করা হয়।
সাহাবি মুবহাম হলে দোষণীয় নয়:
সাহাবির অস্পষ্টতা সমস্যা নয়, কারণ আল্লাহ স্বয়ং সকল সাহাবির আদালতের সাক্ষী দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١٠ ﴾ [الحديد: ١٠]
“আর আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত”।[3] অপর আয়াতে তিনি সাহাবিদের প্রশংসা করে বলেন:
﴿ مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطَۡٔهُۥ فََٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا ٢٩ ﴾ [الفتح: ٢٩]
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদ্গত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন”।[4] অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন:
وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য”।[5] অতএব এক সাহাবি অপর সাহাবিকে মুবহাম করলে, কিংবাকোনো হাদিসে মুবহাম ব্যক্তিটি সাহাবি তা নিশ্চিত জানা গেলে সমস্যা নেই।
মুবহাম হাদিসের হুকুম:
মুবহাম হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ মুবহাম রাবি সেকাহ না গায়রে সেকাহ জানা নেই, তবে তাবে‘ঈ বা তাবে তাবে‘ঈ মুবহাম হলে শাহেদ হওয়ার যোগ্য। কারণ, এ দুই তবকা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের সাক্ষ্য দিয়েছেন, পরবর্তী যুগে মিথ্যার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
[2] ফাতহুল মুগিস: (৪/২৯৮)
[3] সূরা হাদিদ: (১০)
[4] সূরা আল-ফাতহ: (২৯)
[5] সূরা তাওবা: (১০০)